somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এভাবেই ঝরে যায় সোনালী সময়...

০৯ ই আগস্ট, ২০০৬ বিকাল ৫:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[এই পোস্টটা বুয়েটের কনটেক্সটে লেখা। কিন্তু এটা মনে হয় বাংলাদেশের যে কোন ইউনিভার্সিটির অবস্থাকেই রিফ্লেক্ট করে।]

সাতানব্বই এর জুনের কাছাকাছি সময় আমাদের ইন্টারমিডিয়েট শেষ হয়। তারপর ভর্তি পরীক্ষার ঝামেলা শেষ করতে করতে সাতানব্বই শেষ। ভর্তি হবারও এগার মাস পর, যতদুর মনে পড়ে আটানব্বইয়ের সেপ্টেম্বরে আমাদের ক্লাস শুরু হয়। একবছরের বেশী সময় ঘরে বসে কম্পিউটার গুতিয়ে গুতিয়ে আমাদের ততদিনে শেকড় গজিয়ে গ্যাছে।

যাই হোক ক্লাস তো শুরু হল। টুকটাক টুকটাক করে ফার্স্ট সেমিস্টারের ক্লাস ও শেষ হল। পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি বাসায় থাকা ছাত্র। মিরপুরে থাকি বলে বুয়েটের হলের সাথে তেমন যোগাযোগ নেই। মাঝে মাঝে কয়েকটা বন্ধুর সাথে যোগাযোগ হয়। শুনতে পাই কোন এক কারনে (কারনটা এখন মনে নেই) বুয়েট বন্ধ হবে এবং পরীক্ষা পিছাবে। পরীক্ষার প্রস্তুতি আর ঠিক মতো নেয়া হয়না। এরমধ্যে ঠিকই বুয়েটে প্রচন্ড মিছিল, ভাঙচুর হল। বুয়েট বন্ধ।

বুয়েট যখন বন্ধ হল, আমার মত ফাঁকিবাজদের তো পোয়াবারো। পড়ালেখা লাটে উঠিয়ে নতুন হাতে পাওয়া ইন্টারনেটের কল্যানে ভাইরাস প্রোগ্রামীং, হ্যাকিং এইসব নিয়ে মেতে উঠলাম। এরমাঝে দু-দুবার পরীক্ষার সময় নিধর্ারন করে আবার পেছানো হল। শেষে যখন সত্যি সত্যিই পরীক্ষা শুরু হল তখন বইপত্র থেকে ধুলো ঝেড়ে খুব বেশী লাভ হল না। ভীষন খারাপ হল রেজালট।

এরপর প্রতি সেমিস্টারেই ঘটতে লাগল একই ঘটনা। পরীক্ষা পেছানো, হরতালের কারনে পুরন না হওয়া ক্লাসের ক্ষতিপূরণ করতে সেমিস্টারের দৈর্ঘ্য সম্প্রসারন এসমস্ত কারনে দেরী হতে লাগল। তখন তো আমরা মহা খুশী। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে...।

কিছুদিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়ার স্বরূপ ধরা পড়তে লাগল আমাদের কাছে। আইবিএ কিংবা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া আমাদের বন্ধুরা যখন আমাদের চোখের সামনে জবটব শুরু করে ফেলল তখন টনক নড়ল আমাদের।

তৃতীয় বর্ষের শেষে শুরু হল বুয়েটের ছাত্রী সোনিয়া হত্যার প্রতিকারের দাবীতে আন্দোলন। দুটো ব্যাপারে আমি ইনকনসিসটেনসী দেখলাম। প্রথতম সোনিয়া হত্যার ব্যাপারটা তিনমাস পুরোনো ততদিনে। হঠাৎ করে ঠিক পরীক্ষার আগেই কেন আন্দোলনের বায় উঠল। দ্্বিতীয়ত পুরো ব্যাপারটাকে একটা রাজনৈতিক তকমা এঁটে ফায়দা আদায় করছে তৎকালীন রাজনৈতিক বিরোধী দলের লোকজন। ভীষন খারাপ লাগল। কোনভাবেই মেনে নিতে পারলাম না ইসু্যটা। ক্লাসের ছেলেরা দুভাগ হয়ে গেল একদল ইসু্যটার পক্ষে আরেক দল বিপক্ষে।

পরের ইতিহাস সবার জানা। বিরাট ভাঙচুর আর গ্যাঞ্জামের পর বুয়েট বন্ধ। এই ঘটনার পরের সেমিস্টারগুলোতে কিন্তু বুয়েট পরীক্ষা পিছানোর ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটতেই থাকবে।

শেষমেষ আমাদের সার্টিফিকেট অনুযায়ী 2004 এর মার্চ মাসে আমরা পাস করে বেরুলাম। 1997 এর জুন থেকে হিসেব করলে প্রায় সাত বছর লেগে গেছে আমাদের চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রী শেষ করতে।

এখন আসুন এই অতিরিক্ত তিন বছরে কি-কি করা যেত সে হিসাব করি। যারা চাকুরী শুরু করত প্রতিমাসে বিশ হাজার টাকা বেতনে তারা সাত লক্ষ টাকার বেশী আয় করে ফেলত, সেইসঙ্গে প্রমোশন এবং অন্যান্য অগ্রগতি তো আছেই। যারা পড়াশোনা চালিয়ে যেত তারা এরমধ্যে পিএইচডির একবছরের পড়াশোনা শেষ করে ফেলত। যারা বাইরে গিয়ে দুবছরের মাস্টার্স শেষ করে চাকুরী নিত তারা মোটামুটি ষাটহাজার মার্কিন ডলার আয় করে ফেলত।

অথচ সেই পরীক্ষা পিছানোর মাশুল গুনতে হচ্ছে এখন। ঠিক সময়ে ব্যাচেলর শেষ করতে পারিনি বলে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে সন্দেহের চোখে তাকায়। সঙ্গের 22 বছর বয়সী ইন্ডিয়ান আর চাইনীজ দের দেখলে নিজেকে বুড়ো বুড়ো অপাংক্তেয় মনে হয়। চাকুরীতে গেলে রিলেটিভ ইয়াংদের প্রাধান্য দেয়া দেখতে হয়। কি লাভ হয়েছে আমাদের?

আমাদের এখানে অনেকে আছেন রাজনীতিতে ছিলেন ছাত্রাবস্থায়। আমাকে একটু আলো দেখাতে পারেন ঠিক কি পেয়েছি আমরা বা আপনারা ছাত্র রাজনীতি করে? দেশে ঠিক কি উপকার করে এই ছাত্র রাজনীতি? এই রকম আর কতদিন চলবে, কতদিন?

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×