somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছুটির দিনের কড়চা: টাইপিং

২৭ শে জুলাই, ২০০৬ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুক্রবারের ছুটির দিনের কড়চায় সবাইকে স্বাগতম। সময়ের কাঁটা খুব দ্রুত নেচে নেচে এগিয়ে যাচ্ছে। সেদিন আমার এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে দেখি তার চার বছরের গুণধর কম্পিউটারে বসে ওয়ার্ডে এ, বি, সি, ডি টাইপ করছে। 50 ফন্ট সাইজের অক্ষরগুলো মনিটরে ভেসে উঠছে আর খুশীতে সে আবারও টাইপ করছে। হঠাৎ করে সেই চাচ্চুর টাইপিং দেখে আমি ফিরে গেলাম আমার অতীতে।

অনেক বছর আগের ঘটনা। মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আড্ডা। হাতে অফুরন্ত সময়। কিন্তু এসময় কি ভেবে যে আমি নিজে মহল্ল্লার দোকানে টাইপিং শিখতে ভর্তি হয়েছিলাম সেকথা মনে পড়ে না। কিন্তু মনে আছে সপ্তাহে দুই দিন এক ঘন্টা করে ইংরেজী টাইপিং শিখতে যেতাম। মাসিক বেতন 5 টাকা। ইংরেজী অক্ষরগুলো প্রতিদিন প্র্যাকটিস করা। খুব একঘেঁয়েমী লাগতো। একসাথে 4/5টা টাইপিং মেশিন সাজানো। তাতে সবাই টকর টকর করে টাইপ করছে। শব্দটা খুবই বিদঘুটে। কানে লাগতো খুব। তারপরে যখন না দেখে একটু একটু টাইপ করতে পারতাম, তখন খুব মজা লাগতো।

এই টাইপিং শেখার জন্য আড্ডার বন্ধুদের কাছ থেকে গাল মন্দ শুনতে হতো অনেক। দোস্তরা টিটকারী দিয়ে বলতো, "শালা তুই কি টাইপিস্ট হবি? খামাখা কেন টাইপিং শিখছিস"? তারপরেও দাঁতে দাঁত পিশে সব গাল মন্দ হজম করে 3 মাস ধরে সাধ্য সাধনা করে ইংরেজী টাইপিং শিখলাম। তাতে টাইপিং স্পীড তেমন একটা উঠলো না। কিন্তু না দেখে টাইপিং একটু আধটু করতে পারতাম। তারপর একসময় কলেজ শেষ হলো। বিশ্ববিদ্যালয় পাঠও শেষ হলো। কিন্তু প্রফেশনার টাইপিং আর করা হলো না।

টাইপিং শিখেছি তার পর দশ বছর কেটে গেল। এর মধ্যে কালে ভদ্রে টাইপিং মেশিনের সাহচর্য পেয়েছি। অনার্স আর মাস্টার্স পরীক্ষার সময় থিসিসের কাজ করানোর জন্য নীলক্ষেতে খুপচির ভেতর অনেক ধৈর্য নিয়ে বসে থাকতাম। দোকানের মামুগুলোর অবদান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের (!!!) তুলনায় কম না। টাইপিং হতো, প্রুফ করতাম। প্রায় সময় হোয়াইট আউট ব্যবহার করতে হতো। লেখাপড়ার অগ্রযাএায় নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানগুলোর অবদান অনেক। অবশ্য নীলক্ষেতের ফুটপাথের ব্যবসা আর ভেতরের দোকানের ব্যবসা সবসময়ই রমরমা ছিল!!! ভুক্তভোগীদের জন্য বিস্তারিত বলার কোন দরকার নেই।

টাইপিং শেখার প্রথম সুফল হাতে নাতে পেলাম যখন ডিগ্রী নেওয়ার জন্য দেশের বাইরে গেলাম। প্রথম সেমিস্টারে এক প্রফেসরের কোর্সওয়ার্কে তিনি চাইতেন প্রতি সপ্তাহে একটা করে রিঅ্যাকশন পেপার। টার্ম পেপার। ফাইনাল পেপার। পেপারের উপর পেপার। আমার দেশী ভাবনায় মনে হতো এই প্রফেসরের পুরনো কাগজের হকারের সাথে ব্যবসার পার্টনারশীপ আছে। না হলে এই ভদ্রলোক এতো পেপার কেন চাইবে? কিন্তু হায়!! বিদেশের মাটিতে পুরনো কাগজের ব্যবসা তেমন একটা দেখা যায় না। শুধু রিসাইক্লিং বীনের ভেতর কাগজ ফেলা। কিন্তু ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর সেই যে ইংরেজী টাইপিং শিখেছিলাম, এতোদিন পর তার সুফল হাতেনাতে পেলাম। কম্পিউটার ল্যাবে বসে টাইপিং করতাম। অন্যরা যখন হাতে লিখে টাইপিং করার কসরৎ করতো, ততক্ষণে আমি পেপার টাইপ করে প্রিন্ট নিয়ে স্টুডেন্ট সেন্টারে বসে টিভি দেখছি। ঘরে টিভি ছিল না। তাই স্টুডেন্ট সেন্টারে বসে টিভি দেখে রাত এগারটার সময় বাসার দিকে পাড়ি দিতাম। হায়রে টাইপিং!!! আর বাংলা টাইপিং শিখলাম সামহোয়্যার ইন-এ এসে। আমার 4 বছরের চাচ্চু বড়ো হয়ে কখনো যদি আমার টাইপিং শেখার গল্প শুনে তখন অবাক হয়ে যাবে। জিজ্ঞেস করবে, "টাইপিং মেশিন দেখতে কেমন"?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×