- হুজুর আপনি আসায় আমি খুব খুশী হয়েছি। কিন্তু একটা কথা, আমার বলতে খুব খারাপ লাগছে আপনাকে। আমার বাসার অবস্থা তো দেখছেন। দুইজন বাড়তি মানুষ কোথায় জায়গা দিব বলেন? এই টাকাটা রাখেন। আজ রাতটা থাকেন। কালকে আপনাকে অন্য কোথাও জায়গা দেখে নিতে হবে। আমার অপরাধ নিবেন না হুজুর।
এখানে আসার পর হুজুর সারক্ষণ হাসিমুখে ছিলেন। এই প্রথম হেসে কথা বলতে পারলেন না।
- না বাবা...আইচ্ছা, আমি দেখি...
অনেকদিন আগে চারতলার নীপু ভাই কোথার থেকে যেন একটা বাচ্চা বিড়াল এনে তিতলিকে দিয়েছিল। বিড়ালটার নাকি মা মারা গেছে, কেউ না পুষলে এটাও বাঁচবে না। একদম সাদা বিড়াল ছানাটাকে হাতের পাতার মধ্যেই ধরা যায়। পিচ্চি, এইটুকু...একদম। ভয় শুধু মাকে। মা কিছুতেই এই তিনতলার উপরে বিড়াল রাখতে দিবে না। তিতলি আর রণক বুদ্ধি করে ছোট্ট একটা জুতার বাক্সের ভেতর ভরে বিড়াল বাচ্চাটাকে খাটের তলায় রেখে দিল। আর সেটা এমনই বোকা, ঠিক খাওয়ার সময় কিভাবে যেন জুতার বাক্স থেকে বের হয়ে এসে মায়ের পায়ের কাছে ঘুরতে লাগলো। মাতো প্রথমে ভয় পেয়ে এক লাফে সরে গেলো। পরে তিতলি আর রণককে ভীষণ বকে দিয়ে বললো -
- যাও এটাকে বাইরে ফেলে দিয়ে আসো।
- এতো শীতের মধ্যে বাইরে নিলে মরে যাবে তো!
- কোন কথা শুনতে চাই না। যাও!
প্রথমে ওরা গেল নীপুর বাসায়। নীপু ভাইয়েরও একই সমস্যা। তাই বাধ্য হয়ে ছাদে গেল। ছাদের সিঁড়িঘরে তিতলি আর রণক শীতে কাঁপতে কাঁপতে বিড়াল ছানাটাকে ছেড়ে দিয়ে এলো ঠান্ডার মধ্যে। বাচ্চাটা কিছুতেই ওদের কাছ ছেড়ে নড়তে চাইছিল না। ওর জন্য কষ্টে মনটা মুচড়ে উঠছিল তিতলির। তবু জোর করে সেখানে ফেলে রেখে পালিয়ে চলে এসেছিল ওরা। সেদিন রণক ঘুমিয়ে পড়ার পরেও অনেকক্ষণ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিল সে।
আজ অনেক অনেকদিন পরে আবার বিড়াল ছানাটার কথা তার মনে পড়লো। ধীরে ধীরে বাবার পাশ থেকে উঠে ঘরে চলে গেল তিতলি।...
(শেষ)
প্রকাশ: পরবাস