somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: অনাহুত : প্রথম পর্ব

১৬ ই জুলাই, ২০০৬ ভোর ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই গল্পটা আমার বাংলায় লেখা দুই নাম্বার গল্প। সম্ভবত 1997/98 এর দিকে। পরবাস পত্রিকায় বের হয়েছিল। বেশ বড় গল্প তাই কয়েকটা ভাগে আপলোড করছি। একবারে এত টাইপ করতে পারি না।
-------------------

স্কুল ছুটির পর আবার মনের মধ্যে অভিমানটা ঘুরপাক খাচ্ছিল তিতলির। আজকে তো ওর কোন দোষ ছিল না, তবুও মা কেন সবার সামনে ওইভাবে বললো? থাক উচিৎ শিক্ষা হবে মার, যখন দেখবে একটুকরা টিফিনও সে ছুঁয়ে দেখেনি। মনে মনে ঠিক করে নিচ্ছিল কি ভাবে মার চোখের সামনে খাবার টেবিলের উপর ঠকাস করে টিফিন বাক্সটা রাখতে হবে, তারপর গটগট করে হেঁটে ঘরের ভেতর চলে যেতে হবে। যাতে সবাই বুঝতে পারে, কে কি ভাবলো আর কত দুঃখ পেল, তাতে ওর কিচ্ছু যায় আসে না।

বেশ কিছুদিন আগে, বাবা তখন অফিসে আর রণক স্কুলে, তিতলির একটু জ্বর জ্বর থাকায় মা তাকে স্কুলে যেতে দেয়নি। দাদীর কাছে রেখে গিয়েছিল বাজারে যাবার সময়। তখনই ঘটনাটা ঘটেছিল।

ডিসেম্বারের শীত বেশ জাঁকিয়ে বসেছিল। একটা চাদর পেঁচিয়ে দাদীর সাথে সামনের বারান্দায় বসে কথা বলছিল তিতলি। এই বারান্দা থেকে পুরো ফুলার রোড চোখে পরে। রাস্তার উল্টো দিকেই তিতলির ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল। আর স্কুলের পাশেই ঢাকা ইউনিভার্সিটি। দাদী মাঝেমাঝেই এখানে একা বসে থাকেন। তাঁর নাকি মানুষ দেখতে ভালো লাগে। মাঝে মাঝেই মনের দুঃখে বলেন ' এই রাস্তা দিয়া কত মানু যাইতেয়াছে, কোনদিন আমার ইকবালটারে দেখিনা'। ইকবাল তিতলির ফুফাতো ভাই। ফুফুকে কখনো দেখেনি সে। বাবা মায়ের বিয়ের অনেক আগেই মারা গিয়েছেন তিনি। ইকবাল সম্পর্কেও তেমন কোন স্মৃতি তার নেই। দু'একবার দেখেছে, এইটুকুই শুধু। বড়দের আলাপের ছাড়াছাড়া গল্প শুনে বুঝতে পেরেছে একটা মোটর গ্যারেজে চাকরী করতো ইকবাল। তারপর একদিন কি কি যেন চুরি করে পালিয়ে গেছে। এখনো কেউ তার কোন খবর জানে না। কেউ তেমন পাত্তাও দেয়না ব্যাপারটা। শুধু দাদীই মাঝে মাঝে তার কথা বলে।

মাঝে মাঝে দাদীর জন্য খুব মায়া হয় তিতলির, তখন বুড়ীর সাথে গল্প করতে বসে। রাজ্যের কত গল্প যে আছে দাদীর কাছে! মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দাদার কথা বলে, আদর করে ডাকে 'বুইড়্যা'।


হঠাৎ সামনের দরজায় কে জেন কড়া নাড়লো। ভিখিরীই হবে, কারণ মেহমানরা তো কলিং বেল বাজায়। তিতলি গিয়ে দরজা খুলে দেখে তার ধারণাই ঠিক। এক মহিলা ভিক্ষা চাইতে এসেছে, গায়ে ছেঁড়া একটা অসম্ভব ময়লা শাড়ী আর কোলে ছোট একটা বাচ্চা, বারে বারে শীতে কেঁপে উঠছে। মহিলা চেষ্টা করছে তার গায়ের গরম দিয়ে বাচ্চাটাকে শীত থেকে রক্ষা করতে, কিন্তু পারছে না। তিতলির ওদের দেখে কষ্ট হলো। মহিলা বললো -

'আফা শীতে কষ্ট পাইতেছি, পুরান ধুরান জামা থাকলে দিবেন।'

'আপনি দাঁড়ান, আমি দেখছি।'

তিতলি দৌঁড়ে মায়ের ঘরে গেল জামা খুঁজতে। বিছানার উপরে মায়ের একটা শাল পড়ে ছিল সে সেইটাই দিয়ে দিল ভিক্ষুককে। মহিলা খুশী হয়ে তাকে অনেক আদর করে চলে গেল।

তিতলিরও মন ভালো হয়ে গেল কারো জন্য কিছু করতে পেরেছে ভেবে। কিন্তু সে শুধূ খানিকক্ষনের ব্যাপার। আবার দাদীর কাছে বারান্দায় ফিরে যেতেই দাদী লাগালো এক ধমক।

'তোর মায়ে তোরে পিডাইয়া আর রাখতো না, নয়া শালটা ফকিরনী বেডিরে দিয়া দিলি?'

দাদীর কথায় তেমন পাত্তা না দিয়ে তিতলি বললো 'মোটেই মা কিছু বলবেনা। মার এরকম শাল অনেক আছে। বরং যাকে আমি দিয়েছি উনার শালটা কাজে লাগবে। মা খুশীই হবে।'

'হ! খুশী ট্যার পাইবি। আসুক তোর বাপে আ্ইজকা।'

(চলবে:)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফিরে দেখা - ২৭ মে

লিখেছেন জোবাইর, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:০৪

২৭ মে, ২০১৩


ইন্টারপোলে পরোয়ানা
খালেদা জিয়ার বড় ছেলে, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন বেনজীর আহমেদ ও আমাদের পুলিশ প্রশাসন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪২



বৃষ্টিস্নাত এই সন্ধ্যায় ব্লগে যদি একবার লগইন না করি তাহলে তা যেন এক অপরাধের পর্যায়েই পরবে, যেহেতু দীর্ঘদিন পর এই স্বস্তির বৃষ্টির কারণে আমার আজ সারাদিন মাটি হয়েছে তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×