somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুলবাড়ি কয়লা খনি চাই, না চাইনা!

১৫ ই জুলাই, ২০০৬ রাত ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিখা-লেখির কাজটা আমার কাছে বরাবরই কঠিন মনে হয়, বিশেষ করে লিখার প্রেক্ষাপট যদি হয় জাতীয় কোন ইসু্য নিয়ে, কারণ এধরনের বিষয় নিয়ে লিখতে গেলে প্রচুর পড়াশোনার প্রয়োজন হয়। ফুলবাড়ির কয়লা খনি তেমনি একটি বিষয়, যেটা নিয়ে বেশ অনেকদিন থেকেই নানা ধরনের আলোচনা, সমালোচনা চলছে। বিষয়টি সর্বপ্রথম আমার গোচরে আসে বিগত 10ই ফেব্রুয়ারি, একুশের বই মেলায় ঢোকার পথে। দেখতে পাই বেশ ক'জন তরুন যুবক কিছু পোস্টার, ব্যানার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে লিখা ছিলো "দেশের সাঁড়ে পাঁচ লক্ষ বাঙালী-আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে উদ্বাস্তু বানিয়ে মানুষ, পরিবেশ ও প্রকৃতিকে ধ্বংসের এই কয়লাখনি কার সার্থে!!" এই পোস্টারটি প্রচার করা হয়েছিলো "মুক্ত খলা" নামক একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে।

তখন থেকেই এই বিষয়টি আমাকে ভাবাচ্ছে কিন্তু লিখার মতো তেমন কোন তথ্য, গবেষণামূলক প্রবন্ধ হাতে পাইনি। কিছুদিন আগেই শ্রদ্ধেয় "আনু মুহাম্মদ"(অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) স্যার এই সংক্রান্ত একটা লিখায় বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, তার আলোচনায় মূল দৃষ্টি ছিলো পরিবেশ ইসু্য, যা সত্যিই ভাববার মতো বিষয়। স্যার এর বক্তব্য ছিলো বাংলাদেশ একটি নদীবহুল দেশ, যেখানে একটি নদীর সাথে শত শত ছোট নদীর সংযোগ রয়েছে, অনেকটা জালের মতো, সেখানে কয়লাখনি থেকে পানি দূষিত হয়ে ছড়িয়ে পড়বে অনেক দূর-দূরান্ত পর্যন্ত। স্যার একটি স্বাধীন কমিটি গঠন করে এই খনির সম্ভাব্যতা যাচাই করার প্রস্তাব তুলেছেন। এই ফুলবাড়ি এলাকায় বসবাস করে সাওতাল, মুন্ডা এবং মাহালী আদিবাসী, রয়েছে শত শত একর উর্বর জমি। বাংলাদেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও এ ব্যাপারে বেশ সজাগ দৃষ্টি রাখছে।

অন্যদিকে এই খনির ব্যাপারে বেশ আগ্রহী লন্ডন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান "এনার্জি এশিয়া"। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী গ্যারি লে বলেন,"মাটির নিচের খনিগুলোর মূল্য মাটির উপরের ধান থেকে অনেক বেশী"। তিনি আরো বলেন খনির বেশীরভাগ অংশ বিদেশে বিক্রি না করা হলে এই খনি থেকে বাংলাদেশ তেমনভাবে লাভবান হতে পারবেনা।

আলোচনার জন্যে দু'টো বিষয় নির্দিষ্ট করে তারপর আলোচনা করা হলোঃ-

সম্ভাব্য মুনাফাসমূহঃ
এশিয়া এনার্জি তার গবেষণা থেকে জানায় এই খনি থেকে বাংলাদেশ 30 বছরে সর্বমোট 21বিলিয়ন ডলায় পাবে, যা তাদের মোট আভ্যন্তরীন উৎপাদনের (জিডিপি) সাথে 1শতাংশ যোগ করবে। কর্মসংস্থানের পাশপাশি এদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও এর অবদান থাকবে। এশিয়া এনার্জি এই খাতে 30 বছরে সর্বমোট 3বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে, যেখান থেকে বাংলাদেশ ট্যাঙ্, কাস্টমস্, রেল পরিবহন এবং বন্দর ভাড়া থেকেই কেবল 7বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি কয়লাভিত্তিক 500 মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার ব্যাপারেও আগ্রহ দেখিয়েছে। ইট তৈরীর জন্যে বাংলাদেশ উচ্চ সালফারযুক্ত ভারতীয় কয়লা আমদানি করে থাকে, ফুলবাড়ির এই খনিতে রয়েছে খুব অল্প সালফারযুক্ত কয়লা যা পরিবেশের জন্যে তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর, পাশপাশি এই কয়লা ব্যবহার করে বাংলাদেশ আগামী 30 বছরে 5.4বিলিয়ন ডলায় রক্ষা করতে পারবে যা কয়লা আমদানীর জন্যে ব্যয় করা হতো। এছাড়াও দারিদ্র বিমোচন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও স্থানীয়ভাবে জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে এনার্জি এশিয়ার অবদান থাকবে। এখানে উল্লেখ্য যে, পুরো বিষয়টিই এনার্জি এশিয়ার বক্তব্য, এর বাস্তবানুগতা ও সম্ভাব্যতা যাচাই সাপেক্ষে প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব।

সম্ভাব্য অসুবিধাসমূহঃ
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যে ঐ জায়াগায় বসবাসকারী 40,000 মানুষকে অন্য জায়গায় গিয়ে ঘর-বাড়ি তৈরী করতে হবে, যদিও এনার্জি এশিয়া বলেছে এ ব্যাপারে তারা অর্থিক সহায়তা দেবে। তবে এতে করে জমির মালিকগণ লাভবান হলেও কৃষক শ্রেনী লাভবান হতে পারবেনা। পাশপাশি এর সাথে জড়িয়ে আছে সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। আরেকটি ব্যাপার খুব চিন্তার বিষয় যেটা হলো এই জায়াগায় বসবাসকারী লোকজন প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে সম্ভাব্য খনি উত্তোলণকারী এই প্রতিষ্ঠানটির উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারছেনা। এছাড়াও রয়েছে পরিবেশ নদ-নদী মারাত্মকভাবে দূষিত হওয়ার মতো বিষয়গুলো। এই বিষয়গুলো নিয়ে শ্রদ্ধেয় আনু মুহাম্মদ স্যার বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

কয়লা নবায়নযোগ্য কোন খনিজ নয়, একবার এর মজুদ শেষ হয়ে গেলে তা আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়, তাই এ ব্যপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে পুরো বিষয়টি দেশবাসীকে জানানো উচিত, তাদের মতামত, সুবিধা, অসুবিধাগুলো পুংখানুপুংঙ্খ আলোচনা করে জানানো উচিত। সরকারকেই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি এর সম্ভাব্য সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারগুলো নিয়ে দেশের সচেতন নাগরিক, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ নিয়ে একটি স্বতন্ত্র কমিটি গঠন এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা প্রয়োজন। সম্ভাব্য খনি উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পাদনের পূর্বে এর শর্তগুলো ভালো করে বিচার বিবেচনায় আনতে হবে, যেন ইউনোকলের মতো কোন প্রতিষ্ঠান এদেশের ক্ষতি করে পার না পেয়ে যায়। সর্বোপরি বলবো খনিজ সম্পদ আমাদের জন্যে আর্শিবাদ, এর সুষ্ঠু ও সঠিক ব্যবহার আমাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এর একটা বিশাল অবদান অছে বৈকি, তবে প্রাপ্ত মুনাফা'র সঠিক ব্যবহার করাও জরুরী। পুরো ব্যাপারটা নিয়ে ভেবে দেখলে স্বাভাবিকভাবেই এর ভালো মন্দ দুটো দিকই স্পষ্ট হয়ে আসবে, তবে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সাময়িক লাভের কথা চিন্তা না করে অদূর ভবিষ্যতে এর সম্ভাব্য লাভ-লোকসান দু'টো বিষয় নিয়েই আমাদের ভাবতে হবে, তবেই সম্ভব এই খনিকে ব্যবহার করে দেশকে উন্নয়নের পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।


বিঃদ্রঃ ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখেই আমার এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা। চেষ্টা করেছি সত্যকে তুলে ধরতে, তবুও অনিচ্ছাকৃত কিছু ভুল থেকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক, আশা করি সেগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×