ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।
অনেকের মতো আমার ও খুব প্রিয় একটি কবিতা। সুকান্ত যদি বেঁচে থাকতেন তবে তাঁকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করতাম এই নিদারুন যন্ত্রণাটার এমন কব্যিক রূপায়ন তিনি কি ভরাপেটে করেছিলেন নাকি খালিপেটে। গুরুজনেরা অবশ্য বলে থাকেন, খালিপেটে সাহিত্য হয় না। আমিও মানি, "A hungry man is an angry man.". কিন্তু খাঁটি কথাটি হলো, এখন আর পদ্য লেখার সময় নয়। পুরো পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য দরিদ্র মানুষের হাহাকার, ক্রন্দন। অগনিত মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মরছে অনাহারে প্রতিনিয়ত, বেচে চলেছে শ্রম, দেহ, সততা, মূল্যবোধ শুধু দু'মুঠো ভাতের জন্য। বারোয়ারি ডাস্টবিনে ঘেঁটে চলেছে উচ্ছিষ্ট চৌরাস্তার মোড়ের পাগলটাও। তারও যে খিদে লাগে!
হায়রে নিয়তি! কেউ খিদের কষ্ট সহ্য করে না পেরে দুধের শিশুকে বিক্রি করে মাত্র দুশো টাকার বিনিময়ে। আর কেউ লক্ষ টাকার ডাইনিং টেবিলে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা চিবোয় মুরগীর রোস্ট, খাসির রেজালা আরো কত কি! আবার আমার মতো কেউ কেউ শাকান্ন দিয়ে উদরপূর্তি করে অন্যের দু:খে 'আহা-উহু' করতে থাকে সারাক্ষণ, কখনো কখনো দু'এক ফোঁটা জলও গড়িয়ে পড়ে কালক্রমে। ছা-পোষা মধ্যবিত্তের এই একটাই সম্বল, অল্পতে বাঁধ ভাঙ্গে দু'নয়নের জল। সেই জলে সাগর হয় না, বড়জোর দিঘী হয় আর তাতে নিজেরাই ডুবে মরে।
সে যাই হোক। এবার বলুন মশায় কে কি খেলেন আজ? কেউ মাছ, কেউ মাংস, কেউ সবজি, ডাল, রকমারি ফাস্টফুড ইত্যাদি ইত্যাদি। তা বেশ বেশ। আমিও দিব্যি খেয়ে গল্প করছি। তবুও বলি, একটু শুনুন সাতকানিয়ায় বন্যায় গৃহহারা সায়েরা খাতুনের করুন হাহাকার, " ভাই আমারে এক মুঠা চাল দেন। দুই দিন ধরে ছেলেটা না খেয়ে আছে। ওরে একটু খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াতাম" (প্রথম আলো : 11-07-2006ইং)। হায় আমার দুখিনি মা, দু'বছরের ছেলে তোমার না খেয়ে মরছে তোমারই চোখের সামনে। তুমি কত অসহায়! 20000 পরিবারের এতোগুলি গৃহহীন লোক দুইদিন ধরে অনাহারে আছে, মৃত্যুর সাথে লড়ছে, অথচ এখনো কোন সরকারি ত্রাণ পৌঁছেনি তাদের মাঝে। কখন পৌঁছাবে কেউ জানে না। তাহলে, আমরা কেন সরকার বানালাম? কেন আমরা ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করলাম? তাদের দায়িত্ব কি? আমরা তো মরছিই। আমাদের জন্ম সহজ, আমাদের মৃতু্য সহজ, রক্তবীজের ঝাড়ের মতো আমরা দলে দলে মরছি, মরবো। কারো কিছু এসে যাবে না। না সরকারি দলের, না বিরোধী দলের। আমাদের টাকায় ওরা প্রাসাদ বানাবে, গাড়ি কিনবে, দামী দামী খাবার খাবে, ছেলেমেয়েদের বিদেশ থেকে ডিগ্রী কিনে দেবে। আর আমরা সব ভুলে গিয়ে ফের ওদের সিংহাসনে বসাবো। ওদের গোলামি করবো, তেলমর্দন করতে করতে হাতের রেখা মুছে ফেলবো। এরকম নির্বোধ আর আমরা কতদিন থাকবো?
**** টাইটেল রফিক আজাদের কবিতা থেকে .....
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০