আজ বাঁচার নূন্যতম দাবীটুকু পূরণের আশ্বাস না পেয়ে আত্মাহুতি দিতে যাচ্ছেন 15 জন কমিউনিটি শিক্ষক। হ্যাঁশিক্ষক- যারা আমাদের মনের চোখকে সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত করেন, অজ্ঞানের পৃথিবীতে সুন্দরের ফুল ফোটান পরম মমতা দিয়ে। আজ আমাদের জন্যই তারা মারা যাবেন। আমরাই অনুশোচনাহীনভাবে তাদের হত্যা করবো।
প্রিয়তমা, তোমার বাবা একজন শিক্ষক ছিলেন। তাই তুমি বুঝতে পারো একজন শিক্ষকের কষ্ট, ব্যাথা, মূল্য। কিন্তু আমরা কখনো পারিনি। মনে পড়ে সেই ছোটবেলায় পড়া পন্ডিতমশায় আর লাট সাহেবের কুকুরের গল্পটি। পন্ডিতমশায়ের মাইনে ছিলো 25 টাকা আর লাটসাহেবের তিন পেয়ে কুকুরের পেছনে মাসে খরচ হতো 75 টাকা। জীবনের অসংখ্য ঘাত প্রতিঘাতে পোড় খাওয়া পন্ডিতমশায় অনেক কঠিন হিসেব মেলাতে পারলে ও একটি অংকের উত্তর মেলাতে পারেননি। সেটি হলো- পন্ডিতমশায়ের ফ্যামিলি কুকুরের কয় পায়ের সমান?
লাট সাহেবের যুগের অবসান হয়েছে। এখন মেম সাহেবারা দেশকে লুটেপুটে খাচ্ছেন। কিন্তু পন্ডিতমশায়দের কোন পরিবর্তন হলো না। এখনো তাদের ঘরে টনটন করে নিদারুন অভাব। জানি না মেম সাহেবারা কোন কুকুর পুষেন কিনা! যদি পুষে থাকেন , তবে সেই কুকুরের পেছনে খরচ সমান কয় হাজার পন্ডিতমশায়ের সংসার খরচ তা বের করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দিতে হবে সন্দেহ নেই।
প্রিয়তমা আমার, তোমাকে সান্তনা দেওয়ার কোন ভাষা আমার জানা নেই। আমার ও চোখের সামনে ভীড় করছে 15টি জ্ঞান প্রদীপের নিভুনিভুমুখ। শুধু কি আজ 15 জনই আত্মাহুতি দিবেন? 15টি পরিবারের অসংখ্য অসহায় মুখ ও যে আত্মাহুতি দিবে না তার গ্যারান্টি কে দেবে? তুমি কাদঁছো প্রিয়তমা। কাঁদো, চিৎকার করে কাঁদো আজ। যে আমি সবসময় তোমায় বলে এসেছি, তোমার চোখের জল মুক্তোর চেয়ে দামী, তাকে কখনো ঝরতে দিও না। সেই আমি আজ তোমায় কোন বাঁধা দেবো না। আমার 56 হাজার বর্গমাইলের সবুজ সীমানা জুড়েই যে আজ কান্নার রোল! সেই কান্না কি কোনদিন এসব যন্ত্রমানবের কর্ণকুহরে প্রবেশ করতে পারবে?
** ছবি- প্রথম আলো থেকে। এই পোস্টের আগের লেখা অবক্ষয় পড়ুন। লিংক- Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০