somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেক্সি শহর লাস ভেগাস - 2

০৩ রা জুন, ২০০৬ সন্ধ্যা ৬:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেক্সি কথাটা তার আভিধানিক অর্থ থেকে অনেকখানি দূরে চলে এসেছে। এটি এখন অনেক জায়গাতেই বিশেষনের সামষ্টিক অর্থে ব্যবহৃত হয়। "You are lookin' sexy baby." - কথাটার অর্থ করা হয়, তোমাকে সুন্দর, চৌকশ, যৌবনময়ী মনে হচ্ছে।

লাস ভেগাস শহর আসল রূপে দেখা দেয় রাতে। দিনের বেলা এক এলোকেশী অভাগীর মতো লাগে। রাতের বেলা দেখা যায় শহরের আলো ঝলমলে আকর্ষণীয়, চেীকশ রুপ।

সকাল 11 টা নাগাদ হোটেল থেকে বের হয়ে স্ট্রিপ অংশটা দেখে একটু হতাশই হলাম। রুপবতী লাস ভেগাসের এ কি হাল! আমাদের পরিকল্পনা হল স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বলে একটা উঁচু দালানের উপর কিছু রাইড আছে সেগুলোতে চড়া। সে রাইড গুলো পৃথিবীর সবার্ধিক উচ্চতায় অবস্থিত রাইড। গিয়ে দেখি প্রচন্ড বাতাসের কারনে সেদিনের জন্য রাইডগুলো বন্ধ আছে। পরের দিন চড়তে পারা যাবে সে আশায় সেখান থেকে ফিরে আসলাম।

আমাদের হোটেল আর ক্যাসিনো দেখা তখনও শেষ হয়নি। সে কারনে আবার ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম হোটেল এবং ক্যাসিনো গুলো।

হোটেল বেলাজিও বিখ্যাত একটি হোটেল। ভিতরে অদ্ভুত সুন্দর ডেকোরেশন করা বিভিন্ন ছোটখাট দর্শনীয় জিনিষ নিয়ে তৈরী। একজায়গায় ছোট একটি শহরের মডেল তৈরী করা আছে। আরেকজায়গায় দেখলাম ছাদের উপর কাঁচের তৈরী কচুরীপাতার মত লাল নীল বিভিন্ন রঙের ডেকোরেশন। হোটেলটা অনেক বড় আর সমস্ত হোটেল জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে শপিং মল, ক্যাসিনো, বার, খাবারের দোকান, পার্টি সেন্টার ইত্যাদি। সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় হলো হোটেলের সামনের লেক। অদ্ভুত সুন্দর এই লেকে রাতের বেলায় ফাউনটেইন ড্যানস হয়। বিভিন্ন গানের তালে তালে ঝর্নাগুলো নাচতে থাকে। পরের পোস্টে ফাউনটেন ড্যানস এর একটা ভিডিও দিব।

হোটেল ব্যালি ও বড় একটি হোটেল। বড় বড় স্টারদের নিয়ে খুব ভাল ভাল শো হয় এখানটায়। কিন্তু অনুষ্ঠানগুলোর টিকিট খরচা অনেক। তাই আমরা কেবল বাইরে থেকে ঘুরে চলে এসেছি।

হোটেল এমজিএম এর মূল থিম হল সিংহ আর তাই বিভিন্ন সিংহ তোরন দেখা যায় এর বাইরে এবং অভ্যন্তরে।

হোটেল মিরাজের থিম হল আফ্রিকা। আর এর সামনের লেকে তাই ডলফিনের প্রতিকৃতি দেখা যায়। ভেতরে আছে হোয়াইট লায়ন আর হোয়াইট টাইগারের খাঁচা, রেইন ফরেস্ট, একুয়্যারিয়াম ইত্যাদি। প্রতি সন্ধ্যায় ভলকানো শো নামে এর লেকের পানিতে আগুনের একটা শো হয়।

হোটেল ট্রেজার আইল্যান্ড তৈরী হয়েছে বিখ্যাত কিশোর উপন্যাস ট্রেজার আইল্যান্ডের থিমের উপর ভিত্তি করে। হোটেল মিরাজের সিস্টার হোটেল এটি, তাই এই দু হোটেলের মধ্যে ট্রাম আছে এপার ওপার করার জন্য। হোটেল ট্রেজার আইল্যান্ডের ভিতরকার থিম দেখে মনে হবে আপনি সেই ট্রেজার আইল্যান্ডের ভিতরই আছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যা 7 টায় এবং 8:30 এ দুটো নাট্যাংশ অভিনিত হয় হোটেলের লেকের সামনে, কল অভ ট্রেজার আইল্যান্ড নামে। বেশ ভাল লেগেছে আমার।

সিজারস প্যালেস হোটেল সিজারদের সময়কার থিমে তৈরী। অসাধারন সব শিল্প কর্ম দিয়ে সাজানো এই হোটেলের ভেতর ঢুকলে মনে হয় রোমে চলে এসেছি। একজায়গায় ট্রয়ের ঘোড়াটাও দেখতে পেলাম।

আরেকটা হোটেল স্পেনের থিমে সাজানো ছিল। এখন নামটা মনে পড়ছেনা। ভিতরে একটা লেক ছিল যেখানে লোকজন নৌকা ভ্রমন করছিল আর নৌকা চালক স্প্যানিশ ভাষায় গান গেয়ে শুনাচ্ছিল। বেশ মজার একটা অভিজ্ঞতা। কিন্তু পয়সাটাই বাঁধা হয়ে দাঁড়াল।

আরো বেশ কিছু হোটেল ঘুরে দেখলাম আমরা। এর মধ্যে গাগান আর অমিত রোলেট খেলবে বলে ঠিক করল। রোলেট খেলার বর্ণনা দেবার আগে নিয়মটা বলে নেই।

রোলেট খেলায় একটা বড় চাকতি থাকে, তাতে 1-35 পর্যন্ত 35টা ঘর। আপনার অপশন হচ্ছে আপনি 1 থেকে 35 পর্যন্ত একটা নাম্বার ধরতে পারবেন। যে লোক দায়িত্বে থাকে সে একটা বল ঘুরিয়ে দিবে, সেটা ঘুরতে ঘুরতে যদি আপনার নাম্বার উঠে তাহলে আপনি যত বাজী ধরে ছিলেন তার 35 গুন ফেরত পাবেন। এছাড়া আপনি জোড় বা বেজোড় সংখ্যা ধরতে পারেন। মিললে পাবেন দ্্বিগুন। আরেকটি অপশন হলো এরমধ্যে কিছু সংখ্যা লাল-কালো রঙ করা - আপনি যদি কোন রঙ পছন্দ করেন তাহলে মিললে দ্্বিগুন ফেরত।

অমিত গত রাতে তার নিজের ভাগ্যে বরাদ্দ করা 100 ডলারের মধ্যে 90 ডলার খুইয়েছে। তাই সে গাগানের কাছ থেকে 40 ডলার নিয়ে খেলতে লাগল। বেশ কয়েকবার হারার পর সে 20 ডলারের বেটে 60 ডলার জিতে খেলায় ইস্তফা দিলো।

এবার গাগানের পালা। গাগান খেলা শুরু করতে দেখলাম এক আমেরিকান ছেলে এসে কালোতে 200 ডলার বেট ধরল এবং হেরে গেল। ছেলেটা একটুও আফসোস না করে সেই কালোতেই পুরো 500 ডলার বেট ধরল। বলটা ঘুরতে ঘুরতে যখন কালোতেই এসে পড়ল ছেলেটা তখন দেখি আনন্দে কাঁপছে। পুরো 1000 ডলার পেল সে। আর স্ট্র্যাটেজি নিয়ে খেলতে বসা সর্দারজী গাগান পুরোটাই হারাল।

জুয়া খেলা আসলে খুব র্যানডম। ঠিক করা যায় না কখনই যে ঠিক কি হবে। মাঝবয়সীদের দেখেছি একেবারেই কম যারা জুয়া খেলছে। বুড়ো বুড়িদের দেখেছি খুব সামলে খেলতে, ছোট ছোট বেট নিয়ে টুক টুক করে খেলে। আর অল্প বয়সীরা খেলে লাগাম ছাড়া।

আমি আর টুসী খেললাম শুধুমাত্র স্লট মেশিনে। আমি 2 ডলার থেকে সাড়ে 6 পর্যন্ত জিতলাম একবার, শেষ পর্যন্ত সবই হারালাম। এই জুয়া খেলার পাট চুকলে আমরা আবার বেরোলাম ক্যাসিনো ছেড়ে এবং আবিষ্কার করলাম মাদাম তুসোর জাদুঘর। ছাত্রদের জন্য ডিসকাউন্ট আছে বিধায় ঢুকে পড়লাম দেখতে।

নিউইর্য়কের মাদাম তুসোর মত অত বড় নয় এটি। তারপরেও আমাদের দুষ্টুমির কমতি হলনা। জেনিফার লোপেজের মুর্তিটার পেছনদিকে হাত দিলে যে সেটা ব্লাশ করে সেটা আবিষ্কার করতে বেশী সময় লাগল না। আর বিভিন্ন নায়িকাদের মডেলের সাথে মনের সাধ মিটিয়ে পোজ দিয়ে ছবি তুললাম। ভুতের ঘরটিতে ঢোকার আগে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভিতরে ঢুকে দেখি তেমন আহামরি কিছুইনা।

অনেক ঘুরে 5/5:30 নাগাদ ভীষন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। সন্ধ্যায় বিভিন্ন শো আছে সেগুলো মিস করব জেনেও হোটেলে ফিরে গেলাম। ঘন্টা দুয়েক ঘুমিয়ে আবার ফিরে আসলাম স্ট্রিপে। শুনলাম ফাউন্টেইন শো হবে না সেদিন বুনো হাওয়ার কারনে। সুতরাং কি আর করা, সেদিনের মতো বিভিন্ন হোটেল ঘুরে বেড়ানো ছাড়া।

ছবি পরিচিতি
1। হোটেল বেলাজিও - রাতের বেলায়
2। আমি, গাগান আর অমিত; হোটেল বেলাজিওর অভ্যন্তরে ছোট্ট শহরে
3। টুসি হোটেল বেলাজিও থেকে প্যারিস টাওয়ারের সামনে
4-5। বিভিন্ন হোটেলের সামনে
6। গাগান রোলেট খেলছে
7-10। মাদাম তুসোর জাদুঘরে, অপেক্ষাকৃত ভদ্র ছবি গুলো
11। স্প্যানিশ নৌকা ভ্রমনের সামনে
12। প্যারিস টাওয়ার রাতে
13। সিজারস স্রমাট সাজে লোকদের সাথে
14-15। গ্রীক কিছু শিল্পকর্মের সামনে আমি
16। ঢাকার আম্মু সোনার জন্য হোয়াইট লায়ন হাতে নিয়ে টুসী

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×