somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাউন্ডুলে কথন মন্তব্যের খপ্পরে

৩০ শে মে, ২০০৬ রাত ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পেশাদার প্রাবন্ধিক না হলে বিষয়নিষ্ঠতা থাকে না তেমন করে এবং অন্য আরও একটা বিষয় থাকে সেটা হলো মানুষের শ্রেনীবিভাগ করে ফেলার অবচেতন প্রয়াস এবং 3য় যে সম্ভবনার কথা মনে পড়ছে তা হলো শব্দের অর্থ বিভ্রান্তি, এসবের যেকোনো এক কারনে বাউন্ডুলে কথন পড়ে ওয়ালির ভেতরে 2টা প্রশ্নের জন্ম হয়েছে,আমি কি আস্তিকদের সৎ প্রমানের চেষ্টা করছি? অন্য প্রশ্নটা আরও বিমূর্ত এক বোধের বিষয় আমি যখন বলছি আমরা প্রকারান্তরে নিজেদের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছি তখন এই অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার সম্ভবনায় বিজ্ঞান কি বলে?

প্রথম প্রশ্নটা নিয়ে আমার নিজের সংশয় আছে, আমি আস্তিকদের পক্ষ নিয়ে কোনো কথা বলি নি, হয়তো শব্দবিভ্রাট এটা কোনো, নাস্তিকদের সৎ প্রমানের কোনো চেষ্টাও আমি করি নি বাউন্ডুলে কথন শীর্ষক লেখায়, বরং আস্তমেয়ে আস্তিকতার সাথে সৎ মানুষের যোগাযোগ করতে চেয়েছে- সৎ শব্দটা একটা বিশেষন যার বিশেষ্য রূপ সততা, এমন একটা আচরন যা সৎ বিশেষায়িত মানুষের কাছে আশা করা যায়। উন্নত সমাজ গঠনের জন্য এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য একটা আলোচনার প্রারম্ভিক শর্ত হিসেবে সততা গুরুত্বপূর্ন একটা উপাদান, আমার অবস্থান যা আমার পূর্বের লেখায় ছিলো এখনও তাই, সততার সাথে মানুষের ধর্মবিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক নেই, সৎ হলে হলে মানুষকে ধর্ম বিশ্বাস করতে হবে এমন কোনো শর্ত নেই, বরং সততা জাতিয় গুনাবলীর বিকাশ হয়েছে সমাজে যখন তখন সমাজে ধর্ম নামক চেতনার উপস্থিতি ছিলো না, ধর্ম মানুষের যৌগিক চেতনার ফসল, মানুষের চেতনার বিমূর্ততার একটাধাপে নিরাকার ইশ্বরের ধারনাটা এসেছে, এমন কি ইহুদি ধর্ম যা ইসলাম ধর্মের আদি পিতা সেখানেও একক ইশ্বরের ধরনাটা এসেছে পূর্ববর্তি সমাজের ধারনা থেকে।

আমরা ধর্ম আলোচনার বাইরে থেকেই সততার সব কিছু নির্ণয় করতে পারি। তাই আমরা কোনো মতেই মূল আলোচনায় ধর্মকে আনবো না। সৎ গুন যাকে বলা হয় তা হলো বিনিময়ের ছলচাতুরির আশ্রয় নেওয়ার বিপরীত গুন।সততার অন্য একটা অর্থ আমরা করতে পারি বিশ্বাস। বিশ্বাস শব্দ ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ। বিনিময় শব্দটাও ধর্মনিরপেক্ষ, বিনিময় শব্দটা শোনার পর আমাদের ভেতরে যে বোধের জন্ম হয় তার সাথে ধর্মের অনুভূতি নেই। সৎ শব্দটা বা সততা শব্দটা শোনার পর আমাদের ভেতরে যেই বোধের জন্ম হয় সেখানেও ধর্মের অনুভূতি নেই, তবে কেনো ধর্ম দিয়ে আমরা এ শব্দগুলোকে হিসাব করবো?? বিনিময় প্রথার শুরু গ্রাম্য সমাজ বা নগর সভ্যতার পত্তনের পর থেকে, যখন মানুষের পেশাভিত্তিক বিভাজন শুরু হলো তখনই বিনিময় প্রথার শুরু,

আদিম অর্থনৈতিক ব্যাবস্থায় বিনিময় কেমন ছিলো এটা নিয়ে হাজার হাজার শিশুপর্যায়ের বই আছে, সেসব শিশুতোষ আলোচনা বাদ দিয়ে মূল কথায় আসি, বিনিময় বা চুক্তির সময় 2 পক্ষ একটা সমঝোতায় আসে, এই সমঝোতার শর্তগুলো পালন করাটাই সততা। এই বিশ্বাস পারস্পরিক নির্ভরশীলতার জন্ম দেয়, এবং এই নির্ভরশীলতা পরবর্তিতে যুথবদ্ধ সমাজব্যাবস্থার পত্তন করে। সব গুলো মানুষ যখন পরস্পরের উপর নির্ভর করে তখন একজন নেতার পক্ষে খুব সহজেই তাদের একটা পথে চালিত করা সম্ভব, এটাই সততার বড় গুন। এই নির্ভরশীলতার কোন খানে ধর্ম আছে? কিংবা সততার কোন পর্যায়ে ধর্মবোধ আসে?

আস্তিক মাত্রই সৎ নাস্তিক মাত্রই অসৎ এমন কোনো দাবি আমি করছি না কোথাও, কিংবা এর উলটা দাবিও করছি না, আমার বক্তব্য খুব সাধারন যে মানুষের সততা নামক চেতনাটার সাথে তার ধর্মবোধের কোনো সম্পর্ক নেই। বোধ হয় বোঝাতে ব্যার্থ হয়েছি এই সরল কথাটাই/

এবার ওয়ালির মূল প্রশ্নটায় আসি, আমি যখন এই বাক্যাংশ ব্যাবহার করলাম যে আমরা আসলে আমাদের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম করছি তখন আমি ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছি, এবং ওয়ালির প্রশ্নটা আরও একটু সামনে গিয়ে অস্তিত্ববিলীনের প্রশ্নে বিজ্ঞান কি বলে?

বাংলায় একটা প্রচলিত রীতি শুনেছিলাম হয়তো কোনো বর্ষিয়ান মানুষের কাছে, যদি সংসারে সুখ চাও তাহলে ঘরে মেয়ে আনলে আনবে তোমার একদাগ নীচের ঘরের মেয়ে এবং মেয়ে বিয়ে দিলে দিবে তোমার চেয়ে একদাগ উপরের ঘরে। সমাজের রীতিনীতি অনেক দিন ধরে পর্যবেক্ষন করে এমন একটা দর্শনের জন্ম হয়েছে। এই সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব আমাদের অর্থনৈতিক শক্তির সাথে সম্পর্কিত, তবে এর সাথে অন্য একটা বিষয়ও জড়িত তা হলো আমরা কোন ঘরে জন্ম নিয়েছি। মানুষের অর্থনৈতিক শ্রেনীবিন্যাস এবং আমাদের সামাজিক স্তরবিন্যাসের জাতপাতের ধারনা এই হলো আমাদের সামাজিক অবস্থান। এখানেই নির্ভর করছে আমরা কোন কোন ঘরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবো, যদিও আমরা এখন মুখে বলি জাতপাতের ধারনা আমাদের চেতনা থেকে বিলীন হয়ে গেছে কিন্তু আমরা অবচেতনায় এই বিভাজনটাকে মেনে নিয়েই সিদ্ধান্ত গ্রহন করছি।

মানুষ নিতান্ত অসহায় না হলে এই সামাজিক স্তরবিন্যাসে নিজের অবস্থানকে নীচে নামতে দেয় না। ধরে রাখার চেষ্টা করে, এবং যদি সৎ ভাবে ধরে রাখা সম্ভব না হয় তবে অসততার আশ্রয় নেয়, এটা শ্রেনীচু্যত হওয়ার ভয় থেকে করে, এখানে একটা নীতিহীনতার জন্ম। এটার প্রকৃত সংজ্ঞা দিতে পারবে যারা েই বিষয় নিয়ে পড়ছে, এর মনস্তাতি্বক ব্যাখ্যা এবং সামাজিক প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যেসব কথা বলা হবে তার সবটাই রাজনৈতিক কথা। এখানে সামাজিক সাম্যতার ধর্মভিত্তিক চেতনা ঢুকালে এটা ধর্মশোষন, এটাতে সামাজিক সাম্যতার এবং মানবিক অধিকারের ধারনা ঢুকালে এটা সমাজতান্ত্রিক এবং এই খানে যোগ্যতরের বিজয় সম্পর্কিত ধারনা ঢুকালে এটা পূঁজিবাদি রাজনীতির জন্ম দিবে, ঘটনা একটাই, কিন্তু বিশ্লেষনের ধারা বদল হলে তার শব্দচয়ন বদলে যাবে,

সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব কি মানুষের এটা চিন্তা করে দেখো একবার, দেশের বাইরে আছো কতদিন? এখনও কি ভাতের প্রতি আজন্ম টান ছাড়তে পেরেছো? ভাত আনাজ, তুমি যে চিন্তা কর বাংলায় এইটা কি ছাড়তে পেরেছো? না কি এখন তুমি আরবিতে চিন্তা করতে পারো? ছাড়তে পেরেছো তোমার পোশাক চয়নে বাঙালি ধাঁচকে? না কি এখন তুমি আরবের সংস্কৃতির ধাঁচে শেরওয়ানি পা থেকে মাথাপর্যন্ত ঢাকা গাউন পড়ো? এই যে তোমার দৈনন্দিন স্বাভাবিক আচরন এবং তোমার অভ্যস্ত জীবনযাপনের ধাঁচ এটাই তোমার সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব, এটাকে তুমি যতটা পারো অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করছো, আমর কথাটা এই সাধারন পর্যায়ের কথা, এর মধ্যে কোথাও উচ্চপর্যায়ের চিন্তা ভাবনা নেই, এই জীবনযাপন ধারা অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করছি আমরা। আমেরিকার উদাহরন যখন দিয়েছিলাম তখন এই ছবিটা তুলে ধরেছি যে তারা তাদের মৌলিক বিশ্বাসগুলো ত্যাগ করে নি কখনও, তারা তাদের খাদ্যাভ্যাস, পোশাক পরিচ্ছদ এবং চিন্তা করার ধাঁচটাকে রক্ষ করেছে, এবং এই সাংস্কৃতিক বিভাজনটা সব অভিবাসিদের ললাট লিখনের মতো। প্রথম প্রজন্ম এটাতে ভুক্তভোগি হয় বেশী কিন্তু প্রজন্ম পার হওয়ার সাথে সাথে এই বিজাতীয় সংস্কৃতি গ্রহনের ক্ষেত্রে যেই বাধাটা থাকে তা কেটে যায়।

বিজ্ঞান অস্তিত্ব বিলীনের ক্ষেত্রে কি বলবে বুঝি নি এ প্রশ্নটা। তোমার সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব যদি কেউ হত্যা করার চেষ্টা করে তুমি প্রতিরোধ করবা, এইটাই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হবে তোমার। যদি কোনো উপায় না থাকে তুমি ভিন্ন সংস্কৃতিতে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করবা, কিন্তু কেউ যদি তোমাকে এটা করতে বাধ্য করে তুমি তার প্রতি বিদ্্বেষ পোষণ করবা, এই বিদ্্বেষ থেকে তুমি তার বিরোধিতা করবা, এবং এই বিরোধিতা থেকে তুমি তার প্রতি সৎ থাকার কোনো কারন খুঁজে পাবা না এবং তুমি তার সাথে অসততা করবা।

বিনিময় প্রথাটা খুব সরল প্রথা, এখানে তেমন জটিলতা নেই, তাই কেউ যদি তোমাকে নিয়ন্ত্রন করতে চায় তাহলে সে তোমার সাংস্কৃতিক অভিযোজন করবে সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতার চেষ্টা করলে তার প্রতিক্রিয়া হবে ভাষা আন্দোলনের মতো।
*** ধন্যবাদ কৌশিক শোহাইল মতাহির চৌধুরিকে**
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০০৬ সকাল ১০:১৫
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×