লন্ডনে যারা থাকেন কিংবা লন্ডন সম্বন্ধে যারা খানিকটা জ্ঞানও রাখেন, বাংলাদেশী(!) আর সিলেটীদের মধ্যে রেশারেশির ঘটনা তাদের কাছে নতুন কিছু না।
সিলেটী লোকজনের প্রায় 100% ই হোটেল ব্যবসায় আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়েছে কিন্তু স্বভাব কিংবা জ্ঞান-বিজ্ঞানে শূন্যতেই থেকে গেছে, হয়তো শূন্যতেই থেকে যাবে। প্রচন্ড ধরনের কিপটা স্বভাবের এবং নতুন কিংবা বিপদগ্রস্থ লোকদের টাকা মেরে দিতে কিংবা কম টাকায় খাটিয়ে নিতে ওস্তাদ। যাই হোক, আমি ধারনা করতাম সব সিলেটী এমন না, কেউ কেউ ভাল লোকও আছে। তেমনি এক ভাল লোকের কথা বলি।
আমার ক্যাফেতে একজন নিয়মিত কাষ্টমার আছে, যে কিনা সিলেটি এবং হোটেল ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। আমাকে হাসান ভাই, হাসান ভাই বলতে বলতে ফেনা তুলে ফেলে। বাঙ্গালীর সমর্্পক তুলে কম পয়সায় কিছু কাজও করিয়ে নিয়েছে। আমি ভাবলাম সিলেটি কম, বাঙ্গালী বেশি। আমাকে প্রায়ই বলে আমার রেস্টুরেন্টে আসবেন, একটু ডাল ভাত খেয়ে যাবেন । আমি যাব যাব বলেও যাই না, কেন জানি যেতে ইচ্ছা করে না।
একদিন ফোন করে বলল আমি রেস্টুরেন্টে বসে আছি, আপনি আসেন। গেলাম, বেশ বড়, এলাকার সবচেয়ে এবং দামী রেস্টুরেন্ট। গিয়ে বসলাম, মেনু নেড়ে চেড়ে দেখছি ... দামী দামী খাবার। আমি তো মনে মনে বললাম আজকে জম্পেস খানা দানা হবে। আমাকে বলল একটু বসেন, আপনার খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করছি।
আধা ঘন্টা বসে থাকলাম।
তারপর কোনার একটা টেবিল দেখিয়ে বলল, যান ভাই আপনার জন্য খাওয়া দেয়া হয়েছে, খেয়ে আসেন। আমি গেলাম, খাবার দেখে তো হতবম্ব, মেনুর সবচেয়ে সস্তা তিনটা খাবার আমাকে দেয়া হয়েছে, ভাত, ল্যাম্ব ও বুটের ডাল। এতটাই অবাক হয়েছি যে, কিছুক্ষন কি করবো বুঝতে পারলাম না। দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে কাউকে এমন মেনু পরিবেশন করা হতে পারে আমার ধারনা ছিল না।
শেষমেষ গুটিকয়েক ভাত ডালে মেখে মাংস দু'টুকরো মুখে পুরে চলে আসছিলাম, উনি বললেন আপনি তো কিছুই খেলেন না। বুঝলাম না, খাবার মতো কি দিয়েছিলেন, নাকি টিটকারী করলেন। ওই দিনেই তওবা করেছি আর ওই মুখো হবো না।
এখনও মাঝে মাঝে উনি আসেন আমার ক্যাফেতে, বলেন ভাই আপনি তো আমাদের ওইদিকে আসেন না, উইকএন্ডে আসবেন, ওইদিন আমাদের ব্যুফে ডিনার থাকে, অনেক কিছু খেতে পারবেন।
আমি শুধু মনে মনে হাসি, মাঝে মাঝে বিরক্তও হই, শালা সিলেটি ... সারাজীবনই সিলেটি থেকে যাবি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০