somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজু’র বাল্য বিয়ে ও অন্তরালের কথকতা

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজু ছেলেটা ককসবাজার সদরের ঈদগাহ হাই স্কুল থেকে ২০১২ সালের জেএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। বয়স আর কতইবা হবে, ১৩ থেকে ১৫ কিংবা জন্ম নিবন্ধন বহি অনুযায়ী কেবলই ১৫। বাবা সৌদিয়া প্রবাসী। পড়াশোনায় ছেলেটির আগ্রহ ছিলো না কিংবা পরিবারের তত্তাবধান সঠিক না থাকায় জেএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপও হয় নি তার। সেই থেকে অনেকদিন কাজকর্ম নেই। তবে পৈত্রিক সম্পত্তি আছে, সৌদিয়া থেকে বাপে কষ্টার্জিত টাকা পাঠায় মাসে মাসে। আরামেই থাকার কথা। কিন্তু সুখে থাকলে যে ভুতে কিলায়। তাই অকর্মা ছেলেটির মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা হতে দেরী হয় নি মোটেও। এক সময় বিপথে যায়, মায়ের সাথে বনিবনা হয় না, ঝগড়াঝাটিও হয় মাঝে মাঝে। এতটুকুন ছেলে বায়না ধরলো তাকে বিয়ে করাতে হবে। দাবী মানা হলেই সে কাজ কর্ম করবে, ভাল হয়ে যাবে। একটি মাত্র ছেলে, অনন্যোপায় মা ছেলের বউ আনার জন্য রাজী হলেন। বউ গত বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো গোমাতলীর এক প্রতিষ্ঠান থেকে, সম্পর্কে রাজুর খালাত বোন। খালা অনেক দিন গাইগুই করলেও এক সময় রাজী হয়ে যায়। হয়তো ভেবেছে যা দিনকাল পড়ছে, মেয়েটিকে ভালই ভালই বিয়ে দিতে পারলেই হলো। তাছাড়া, রাজুর বাপের সম্পত্তি আছে। ছেলেটি আন্ডার জেএসসি তাতে কি, আমার মেয়েটিও তো আন্ডার এসএসসি! ভাল করে দু’মুঠো খাওয়াতে পারলেই হলো।

ইতোমধ্যে কেমনে কেমনে রাজুর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলো তারই কিছু প্রাক্তণ সহপাঠি এবং ‘সোলস অব ইউছুপেরখীল’ নামের একটি সংগঠন। ভাবছে, সমাজের ভাল কাজে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। তারা ছেলেটির মায়ের কাছে গিয়ে বাল্য বিয়ে না করানোর জন্য অনুরোধ করলো। প্রথমে বিয়ের কথা অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে রাজুর মা তাদেরকে বিয়েতে দাওয়াত দেয়, সাথে ফ্রি হিসেবে কিছু অযাচিত কথাবর্তা শুনে ছেলেরা। তারুণ্যের শক্তি হয়তো অত সহজে দমে যেতে চায় নি। তারা এলাকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানালো। প্রতিবাদী ছেলেদের ঘ্যানর ঘ্যানর সহ্য করতে না পেরে ইউপি চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বার ইউনিয়ন পরিষদে তাদেরকে নিয়ে বসলেন। গোপনে খোঁজ নিয়ে খবরটি সঠিক জানলেও রাজুর মা’র অসমীচীন কথাবার্তার ভয়েই হয়তো নিজেরা এ্যাকশনে যাননি। সবকিছু শুনে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে একটি অভিযোগ দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান। ‘‘অশিক্ষিত মা, ছেলেরা ডিসি’র চেয়ে পুলিশের ঝাড়ি ভয় পায়’- বুঝিয়ে দিলেন তিনি।

দরখাস্ত রেডি করে ছেলেরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে গেল। ক্যাম্প ইনচার্জের কর্তৃক তদন্তভার পেয়ে এএসআই নাজমুল হাসান পরদিনই রাজুর বাড়ি যান। তদন্ত করে অফিসে ফিরতে না ফিরতেই ‘নেতা হওয়ার পথে থাকা’ এক ছেলে গিয়ে হাজির। অনিয়ন্ত্রিত নেতার মতো তার আচরণে নাজমুল হাসানের মনটাও হয়তো বিষিয়ে ওঠে। পরদিনই শুনি, রাজুর মা হার্ট এটাক করেছেন, রাজুকে কারা যেন অপহরণ করেছে! খবর পেয়ে স্থানীয় মেম্বার, আমি ও রাজুর দুলাভাই গিয়ে দেখি, রাজুর মা’কে সেলাইন দেওয়া হয়েছে বাজারের একটি ফার্মেসীতে। আমাদের দেখে একটু নড়ে চড়ে কাত হয়ে শুয়ে থাকলেন। ফার্মেসী থেকে হার্ট এটাকের চিকিৎসা পরবর্তী রাজুর মা সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন। পরিকল্পনামাফিক ইতোমধ্যে রটিয়ে দেওয়া হলো, প্রতিবাদী ছেলেদের নামে অপহরণ মামলা দেওয়া হবে। একদিকে প্রতিবাদী হওয়ার কারণে মা-বাবার বকুনি, অপরদিকে অপহরণ মামলার ভয়। যে যার কাজে ফিরে যায় ছেলেরা।

এর কয়েকদিন পরে পথিমধ্যে রাজুর দেখা।
- বিয়েতে সবাই রাজী?
- মা-ও রাজী, আমিও রাজী!
- যারা তোমার বাল্য বিয়ের বিপক্ষে নেমেছে তাদের দাওয়াত দিবা?
- ৪০০ জন বৈরাত খাবে, বন্ধুদেরকে দাওয়াত দিবে বলছে মা’য়।

উপর কথাগুলি গত জুনের। আজ সেই রাজুর বিয়ে। তথ্য সেবা কেন্দ্রের মনসুর ভাইকে ফোন দিয়ে বলি, চলেন বিয়েতে যাই। উনি বললেন, যাওয়া হবেনা, গেলে অফিসিয়ালী ঝামেলা হতে পারে! বেলা দেড়টার দিকে ককসবাজার সদর ইউএনও কাজী মোঃ আবদুর রহিম স্যারকে বিষয়টি অবগত করি। আগ্রহ নিয়ে তিনি ব্যাপারটি শুনলেন, জানালেন ঈদগাঁও ক্যাম্প ইনচার্জ ও ইসলামাবাদ ইউপি চেয়ারম্যানকে তিনি ফোন দেবেন। অন্যদিকে, তদন্ত কেন্দ্রে দেয়া আবেদনটি উইথড্র করে নেবার আগ্রহ প্রকাশের মাধ্যমে ক্যাম্প ইনচার্জকেও বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলো।

এখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত। রাজুর বিয়ে হয়ে গেছে। প্রশাসন ব্যাপারটি এড়িয়ে গেছে হয়তো। অন্যদিকে, এসব কর্মে তারুণ্যকে উৎসাহিত করার জন্য এলাকায় যারা দায়িত্বশীল, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তারাও ব্যাপারটিকে এড়িয়ে গেলেন। কারণ উভয় পক্ষ রাজী বলে যে কোনভাবেই হোক, কাগজপত্র রেডি করেই বিয়েটা হয়েছে। তবে, প্রতিবাদ করতে গিয়ে অন্তত প্রবোধ না পাওয়া ছেলেরা এ যাত্রায় হেরেছে কিন্তু তাদের চোখমুখের চাহনি বলছে, আগামীতেও যে কোন অসুন্দর কাজ দেখে তারা সদর্পে গর্জে ওঠবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×