somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুখ - দুখের কথা (ছোট গল্প)

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শৈশব পেড়োনো এক সদ্য কিশোর। সবেমাত্র টুকটাক পাড়ার ছেলেদের সাথে মিশতে শুরু করেছে। স্কুল আর ঘরের বাহিরেও যে একটা জীবন আছে সেটা যখন সে জানতে পারল খুব অবাক হল। তাঁর ধারণা ছিল মানুষ যখন বড় হয়ে বিয়ে করে তখনই সে বাহিরের পুরুষদের সাথে মিশতে পারে। তার আগে না। ছোটরা সারাদিন ঘরেই থাকে। পড়ালেখা করে। ভাই,বোনদের সাথে ঝগড়া করে।
আরো অবাক হল যখন সে দেখতে পেল সপ্তাহখানেকের মধ্যে প্রায় পনের বিশজন নতুন ছেলের সাথে তাঁর পরিচয় হয়ে গেছে। ছেলেগুলো এই গ্রামের। তাঁরা যে একই গ্রামের তা সে জানতনা। কখনো দেখেও নি। শুধুমাত্র স্কুলের ছেলেদের ছাড়া সে কাউকে চিনেনা। সেই অপরিচিত ছেলেরা যখন তাঁকে "দুস্ত" বলে ডাকে তাঁর খুব লজ্জা লাগে। "দোস্ত" আবার কি? তাঁর একটা নাম আছে। নাম ধরে ডাকলেইতো হয়। তা ডাকবেনা।। এমন নির্লজ্জ। সেই অপরিচিত ছেলেদের দল তাঁকে "তুই" সম্ভোধন করে। অল্প পরিচয়ে একজন অন্যজনকে তুই বলতে পারেনা। তুমি করে বলতে হয়। সেটা তাঁরা জানেনা। ওদের সাথে মিশলে সেও ওদের মত হয়ে যাবে। কিন্তু কিছু করার নেই। ওদের সাথে মিশতে কিশোরটির খুব ভাল লাগে। যে কয়দিন সে ওদের সাথে মিশেছে সে কয়দিন ওরা যা মজার মজার কাণ্ড করেছে। গাছ থেকে আম চুরি করে খেয়েছে। পাখির বাসা থেকে পাখির ডিম পেড়ে তা ফাটিয়ে দেখেছে ভিতরে কি আছে। সবচেয়ে মজার এবংভয়ংকর কাজটা হল সবাই মিলে একদিন বিড়ি টেনেছে।
তাদের দলের একটা ছেলে একদিন সবাইকে ডেকে গম্ভির মুখে বলল। "আজ আমরা নদীর পাড়ে যাব, কে কে যেতে চাও বল। এখনি বলতে হবে। পরে বললে হবেনা।"
আট-দশজনের দলের মধ্যে মাত্র দুজন রাজি হল নদীর পারে যাবে। অন্যরা অনেক চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিল তাঁরা যাবেনা। নদীর পাড়ে মজা নাই। তারচে বরং গাছের ডালে ঝুলে বানর-বানর খেলাই অনেক আনন্দময়।
যে ছেলেটি নদীর পাড়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেছিল তাঁর মনটা খারাপ হয়ে গেল। মুখের গম্ভিরতা আরো একটু বাড়িয়ে বলল "আমি এক থেকে তিন পর্যন্ত গুনব, তার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যাবে নাকি যাবেনা। পরে বললে হবেনা। আমরা সঙ্গে নেবনা।
সে আধা ঘন্টা সময় নিয়ে এক থেকে তিন গোনা শেষ করল। তবুও কারো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হলনা। উপায় না দেখে ছেলেটি পকেট থেকে একটা বিড়ির প্যকেট বের করে সবাইকে দেখাল। সবার চোখে কৌতহল "এটা কোথায় পেয়েছিস?"
"বলা যাবেনা। আমরা দুইজন এখন নদীর পাড়ে গিয়ে এগুলো খাব।"
"আগুন পাবি কোথায়?"
"ম্যচ আছে, রান্নাঘর থেকে চুরি করেছি।"
নিষিদ্ধ কর্মের উত্তেজনায় দশ জনের পুরো দলটাই কাপছে। সবারই ইচ্ছা করছে জিনিষটা একটু চেখে দেখা। খেতে কেমন। কিন্তু ভয় আর লজ্জায় কিছু বলতেও পারছেনা। এতক্ষন বলেছে যাবেনা, এখন কি করে বলে আমরাও যেতে চাই। একটা লজ্জার ব্যপার না। বিড়ির প্যকেটের মালিক পকেটে বিড়ির প্যকেট ঢুকিয়ে হাটা শুরু করল। দশজনের দলও তাঁর পিছু নিল।
বিড়ির মালিক বালক বিরক্ত কন্ঠে বলল "কি ব্যপার তোরা কোথায় যাচ্ছিস? এতক্ষনতো বড় বড় কথা, যাবেনা। এখন আসছিস কেন আমাদের পিছু?"
একজন কোমল কন্ঠে বলল "আমরা কি মানা করেছি নাকি যাবনা। এক থেকে তিন বলা পর্যন্ত সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় নাকি। এক থেকে দশ হলেও একটা কথা ছিল। আবার গোন।"
সবাই মাথা নেড়ে তাতে সম্মতি দিল। বাধ্য হয়ে বিড়িওয়ালা বালক আবারো গুনতে শুরু করল। এক বলার সাথে সাথেই সময় নষ্ট না করে সবাই হাত তুলল।

বালকের দল নদীর পাড়ে গিয়েছিল। নির্জন একটা জায়গাও খোঁজে পেয়েছিল। কিন্তু বিড়ি টানতে পারেনি। নদীর পাড়ে প্রচণ্ড বাতাস। বাতাসের কারণে ম্যাচের সবগুলো কাঠি নষ্ট করেও আগুন ধরাতে পারেনি। কি আর করা, নদীর পানিতে পায়ের পাতা ডুবিয়ে সদ্য কিশোর দশটা ছেলে আগুন বিহীন বিড়ি টেনে বাড়িতে চলে আসল।

গল্পের মোরালঃ ম্যচ থাকলেই আগুন ধরানো যায়না। বুদ্ধিও লাগে..)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×