somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুব লজ্জা লাগে। যখন নিজের সাথে দেখা হয়।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন আমি আইনের ছাত্র। সাল টা হবে ২০০৯। নভেম্বর মাস। একজন বিজ্ঞ আইনবিদের ফার্মে কাজ করছি (কাজ শিখছি আসলে)। হঠাৎ একদিন এক মেয়ে এলো চেম্বারে। কাদো কাদো স্নিগ্ধ চেহারা। বয়স ১৭-১৮ হবে। জানতে পারলাম বাসা তার আসে পাশেই। চেম্বারের সাইন বোর্ড দেখে এসেছে। তার সমস্যাটি যখন জানতে পারলাম তখন একজন পুরুষ হিসেবে লজ্জিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই করা গেলো না।

মেয়েটির বয়স যখন ১২ তখন তার বাবা মারা যায়। অভাবের অভিশাপে তার মা শশুর বাড়ী থেকে বিতাড়িত হয়। বেশ কিছু দিন বাপের বাড়ীতে গলগ্রহ হয়ে থাকার পর এক রকম ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার মা'র বিয়ে হয়ে যায় ঢাকার এক অশিক্ষিত টাকাওয়ালা ট্রাক ব্যবসায়ীর সাথে। এটি মহামান্য ব্যবসায়ীর ৩য় বিবাহ। কিছুদিন ভালোই কাটে।

হঠাৎ দেখা যায় লোকটি দেরি করে মদ খেয়ে কিংবা জুয়া খেলে বাড়ী ফিরছে। মেয়েটির মা ভাবলো পুরুষ মানুষ, একটু মদ তো খেতেই পারে। জুয়া খেলতেই পারে। এরপর যখন কারণে অকারণে মার খাওয়া শুরু করলেন, মেয়েটির মা ভাবলেন, পুরুষ মানুষ, একটু আধটু মারতেই পারেন। আসলে মা'র তো যাবার কোনো জায়গা নেই। এই পুরুষ মানুষটি যদি তাকে ত্যাগ করে তবে তার এই মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। সুতরাং মা মেয়েটিকে বুঝায়-সব মেনে নিয়েই থাকতে হবে। মেয়েটিও তাই বুঝে নেয়। কিন্তু এরপর যা ঘটে তা কে বুঝবে?

হঠাৎ এক রাতে ঘুমের মাঝে মেয়েটি আবিষ্কার করে কোনো এক পুরুষের হাত তার শরীরে কি যেনো খুজছে। হাত তার জামার ভেতর ঢোকার আগেই সে খপ করে হাতটি ধরে ফেলে। একটানে হাত ছাড়িয়ে লোকটি চলে যায়। মেয়েটির বুঝতে বাকি থাকে না এই লোকটিই তার সৎ পিতা। তার মায়ের স্বামী। সৎ পিতার কার্যক্রম ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আর মেয়েটি লজ্জায়, ভয়ে আর আতংকে কুকড়ে যেতে থাকে। অনেক সাহস করে মেয়েটি একদিন তার মাকে বিষয়টি জানালে কয়েকটি চড় আর ''অসভ্য মেয়ে তুই কাপড় সামলায়ে চলতে পারোস না'' জাতীয় সহযোগীতা ছাড়া আর কিছুই পেলো না।

আমার সিনিয়র মেয়েটিকে নারী নির্যাতনের মামলা করার কথা বললে মেয়েটি সরাসরি জানায় মামলা করতে সে অপারগ কারণ এতে করে তার মা'র সংসার ভেঙ্গে যাবে। এবং সে তা চায় না। এই ভয়েই সে কোনো কিছু করতে পারছে না। আমরা তাকে পরামর্শ দিলাম, সে যেনো দ্রুত কোন ভালো ছাত্রী হোস্টেলে চলে যায়। আর যেহেতু সে মেধাবী (এইচ,এস,সি তে জিপিএ ৪,৮৮) সেহেতু সে সহজেই কিছু টিউশনি জোগাড় করে নিজের খরচ চালাতে পারে। সে যেন চেষ্টা করে ভালো কোনো সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। আমরা তাকে দুটো টিউশনি ও জোগাড় করে দিলাম। কিন্তু আর কোনো প্রতিবাদ আমরা করতে পারলাম না।

এদেশের আনাচে কানাচে অসংখ্য মা,ভাই,বোন নানা রকম সমস্যায় জর্জরিত থেকেও কোন আইনী ব্যবস্থা তো দূরে থাক, কিছুই করতে পারে না। এরকম দু একটা পরামর্শ দেয়ার জন্য বিভিন্ন কাওন্সেলিং এজেন্সি গুলো ডিমান্ড করে হাজার হাজার টাকা। আর মামলার কথা নাই বললাম। মামলা তো দূরের কথা, সামান্য একটু আইনী পরামর্শ পেতে হলেও খরচ করতে হবে হাজার টাকা।

আমি খুব লজ্জিত হই নিজের কাছে। আইন নিয়ে ব্যবসা করি। আমার খাওয়া পড়ার খোড়াক জোগায় মানুষের সমস্যা। তাই নিজেকে আর লজ্জিত না করে আমি কিছুদিন আগে শুরু করেছি একটি সেবা কর্মসূচী।
Free Legal & Psychological Consultancy Bangladesh.
আমার সাথে আছেন দুজন আইনজ্ঞ এবং দুজন মনোবিদ। এখানে বিনামূল্যে যে কোনো আইনী ও মানসিক সমস্যার সমাধানে পরামর্শ দেয়া হবে। আমরা Facebook এ একটি page খুলেছি। মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার্থে একটি website খুলেছি যাতে সবাই চাইলে পরিচয় গোপন রেখে আমাদের সমস্যার কথা লিখে জানাতে পারে।

আমরা সবাই নিজেদের অবস্থান থেকে দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য যতটুকু পারি করার চেষ্টা করছি। নিজের সামনে যেন নিজে লজ্জিত না হই, মাথা উচু করে দাড়াতে পারি। আমি আপনাদের সহযোগিতা কামিনা করি। যতটুকু পারেন মানুষকে এই কর্মসূচির ব্যাপারে অবহিত করুন যেন তারা আমাদের কাছ থেকে আইনী ও মানসিক সহায়তা পেতে পারে। সঙ্গত কারনেই আমরা আমাদের ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন রাখছি যাতে করে আমাদের ব্যাক্তিগত কোনো প্রচার না হয়ে শুধুমাত্র এই কর্মসূচির বিষয়টি মানুষ জানতে পারে। সবাইকে ধন্যবাদ।

Like our Facebook page and let others know about it: Free Legal & Psychological Consultancy Bangladesh

Visit our website: Free Consultancy
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৬
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×