somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"মরীচিকা ভালোবাসা"

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম ভাঙ্গলো পিউ এর। চোখ খুলে পাশ ফিরেই মোবাইলে হাত রাখল। ঘুম ঘুম চোখে ফেসবুকের ওয়ালে ঢুকলো, নোটিফিকেশন চেক করল। নতুন অনেক মেসেজ জমা হয়েছে। পরে দেখবে বলে রেখে দিল। ক্লাশের জন্য রেডি হতে হবে। তাই তাড়াহুড়ো করে উঠে ফ্রেশ হলো। ফেসবুকই পিউ এর ধ্যান-জ্ঞান। সারাদিন অনলাইনেই থাকে ও বেশিরভাগ সময়। ঘুম থেকে উঠে ফেসবুক, ঘুমানোর আগে ফেসবুক। জীবনের ৮০ ভাগই ওর ফেসবুক।
আজকে অনেকদিন পর টিভি দেখতে বসল পিউ। টিভি দেখা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে ও। চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে একটা বাংলা চ্যানেলে চোখ আটকে গেলো ওর। একটা টেলিফিল্ম হচ্ছে। নায়িকাটাকে ওর ভালোই লাগে। দেখতে শুরু করল। হাতে কিছু সময় আছে ওর আজকে। একটা ছেলে আছে নাটকটাতে। অনেকদিন আগে এই ছেলেটাকে ও খুব পছন্দ করতো। ওর আর ওর বোনের মধ্যে খুব ঝগড়াও হত এই মডেলটাকে নিয়ে। কার বয়ফ্রেন্ড হবে এই মডেলটা, এই নিয়ে দুই বোনের সে কি যুদ্ধ। পুরানো সব কথা মনে পড়ে গেলো পিউয়ের। ছেলেটার হাসিটা এত নিষ্পাপ। কেমন জানি চোখে লেগে থাকে। মনোযোগ দিয়ে নাটকটা দেখল, আর সবথেকে বেশি মনোযোগ দিল যে যে সময় ঐ ছেলেটাকে দেখা গেলো। নাটক শেষ হয়ে গেলো, কিন্তু পিউয়ের মনের মাঝে থেকে গেলো সেই হাসি।
ফেসবুক ওপেন করেই ঐ মডেলের ওয়ালে ঢুকল পিউ। ওকে ফলো করল। তারপর ওর ছবি দেখতে থাকলো। কি সুন্দর হাসি, কি মায়াবী চোখ। পাগল করা সব ছবি। এরপর থেকে পিউয়ের সারাদিনের বেশিরভাগ সময় কাটে ঐ মানুষটার ছবি দেখে , তার পোস্ট পড়ে, যে হয়তো জানেও না যে একই শহরে একটা মেয়ে বসে বসে শুধু ওকেই দেখে আর ভালোবাসার জাল বুনে যায়। অধরা ভালোবাসা। ওর ইনবক্সে মেসেজ পাঠিয়ে অপেক্ষা করে তার উত্তরের। আর উত্তর পেলে মনে হয় যেনো চাঁদ পেয়েছে সে।
শুরুটা খুব সহজ হলেও ব্যাপারটা সহজ রইলো না। পিউয়ের এই অদ্ভুত ভালোবাসা কেমন জানি ছায়ার মত, নেশার মত ওর পিছু নিয়ে রইল। ধীরে ধীরে নিজের অজান্তে ও এক মরীচিকার পিছনে ছুটতে লাগলো। ওর ধ্যানে জ্ঞানে যে বসত করতে লাগলো তার সল জীবনের কোথাও পিউয়ের ছায়া পর্যন্ত নেই। তারকা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর এক তরুণের প্রেমে মগ্ন হয়ে দুনিয়ার আর সব কিছু যেন ভুলতেই বসল পিউ। প্রথম দিকে বন্ধুরা হাসি ঠাট্টা করলেও খুব কাছের বন্ধুরা বুঝতে শুরু করলো যে পিউ একটা অবসেশনে ভুগতে শুরু করেছে। খুব চেষ্টা করলো ওরা পিউকে বুঝাতে। কিন্তু তারা জানতোই না যে পিউয়ের অবসেশন এখন আর বুঝিয়ে শেষ করা যাবে না। অনেক বেশি খারাপ অবস্হা হয়ে গেছে ওর।
একটা মেয়ে প্রায়ই আনানের ইনবক্সে মেসেজ পাঠায়। ওর ওয়ালে কি কি সব লিখে, ওর সব ছবিতে কমেন্টও দেয়। মাঝে মাঝে আনান দুই একটা মেসেজের উত্তরও দেয়। ভালোই লাগে ওর। দিনে দিনে ওর ফ্যান বাড়ছে। কেউ কেউ তো ওকে বিয়ের প্রস্টাবও দেয়। হাসি পায় , আবার খুব ভালোও লাগে ওর । খ্যাতির একটা নেশা থাকে, ওকেও সেই নেশাটা পেয়ে বসেছে। আজকে সারাদিন তেমন কোনো কাজ নেই আনানের হাতে। টিভির চ্যানেল ঘুরাচ্ছিলো আনান। বুয়া একটা প্যাকেট হাতে নিয়ে আসলো," ভাইয়া, আপনার নামে এই চিঠিটা আসছে।" আনান তো অবাক। এই মেইলের যুগে কেউ চিঠি লিখে নাকি? নিশ্চয়ই কোনো ফ্যানের কাজ। চিঠিটা খুলল আনান।
" আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি কেনো আপনাকে চিঠিটা লিখলাম। ইচ্ছা করলেই আমি আপনার সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলতে পারতাম। কিন্তু যে মানুষের চেহারা আজ আমার মেয়ের জীবন ধ্বংসের জন্য দায়ী তার চেহারা আমি দেখতে চাই না। হয়তো ভাবছেন আমার মেয়ের জীবন আপনি কিভাবে ধ্বংস করলেন, আপনি তো তাকে চিনেনই না। হয়তো সত্যিকার অর্থে আপনার কোনো দোষ নেই, কিন্তু যে মরীচিকার প্রেমে সে পড়ে তার বাস্তব জীবন ভুলতে বসেছিল সে মরীচিকাটা হলেন আপনি। কল্পনার রাজ্যে চলে গেছে মেয়েটা আমার, আর তার সেই কল্পনা থেকে কেউই তাকে বের করে আনতে পারছে না। কেনো যে এমন হলো তার ব্যাখ্যাও কেউ দিতে পারছে না। শুধু একটাই নাম জপছে মেয়েটা আমার "আনান" । যেনো বাকি দুনিয়াটা তার অপরিচিত। আজ আমরা । ওকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে চলে যাচ্ছি। জানিনা ওর এই অসুখের শেষ পরিণতি কি । জানিনা আদৌ আমি আমার মেয়েটাকে,আমার পিউকে ফিরে পাবো কিনা। শুধু জানি, নিজের অজান্তেই হোক ওর এই অবস্হার জন্য দায়ী শুধু আপনি। - এক হতভাগিনী মা"
মাথাটা ঘুরে উঠে আনানের। দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। মাথার ভিতরটা ঝিমঝিম করছে ওর।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×