somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে দেখা ৫: গৌড়ের রত্ন - ছোট সোনা মসজিদ

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট সোনা মসজিদ (ফিরোজপুর, গৌড়): ১৪৯৩ থেকে ১৫১৯ সালের মধ্যে নির্মিত ছোট সোনা মসজিদ গৌড়ের সবচেয়ে চমৎকার স্থাপত্য নিদর্শন এবং একটি প্রাক মুঘল স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বের সময়ে জনৈক ওয়ালী মোহাম্মদ মসজিদটি তৈরী করেন বলে ধারণা করা হয়। মসজিদের বাইরের পাশগুলি (বিশেষতঃ গম্বুজগুলি) সোনালী রঙের কাজ করা ছিল এবং স্যার কানিংহাম উল্লেখ করেছেন যে ১৮৮০ সালের দিকেও এই সোনালী কাজগুলি দৃশ্যমান ছিল। মসজিদটি সূর্যের আলোয় জ্বল জ্বল করত; তাই এটি সোনা মসজিদ নামে পরিচিত।

মসজিদটি মূলত ইটের তৈরী, যা কালো (ব্যাসল্ট) পাথরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এই কালো পাথরের উপরে খোদাই করা অত্যন্ত উচ্চ মানের সূক্ষ কারুকাজ মসজিদটিকে আকর্ষণীয় করেছে। মসজিদের ভিতরের এবং বাইরের উভয় পাশের দেয়াল পাথরের উপর খোদাইকৃত অলংকরণ দ্বারা আচ্ছাদিত। মিহরাব অত্যন্ত সুসজ্জিত, যার অতি অল্পই এখন অবশিষ্ট আছে। মসজিদে মোট ১৫টি গম্বুজ আছে; এর একটি বৈশিষ্ট্য হল যে শুধুমাত্র বাইরের গম্বুজগুলোই দৃশ্যমান। এর আরও একটি লক্ষয়ণীয় বৈশিষ্ট্য হলে সব গম্বুজ অর্ধবৃত্তাকার নয়; বরং মাঝখানে সারির গম্বুজ তিনটি কুঁড়েঘর (চৌচালা) আকৃতির। মসিজদটিতে মহিলাদের নামাজের পৃথক একটি সুসজ্জিত কক্ষ আছে; অনেকেই মনে করেন স্থানীয় সুলতান অথবা কর্মকর্তাদের জন্য এই কামরাটি তৈরী করা হয়েছিল যাতে তারা নিরাপদে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের সামনে একটি খিলানকরা চমৎকার প্রবেশদ্বার আছে।

মসজিদের প্রবেশদ্বারের সামনেই একটি সমাধি ক্ষেত্র রয়েছে; যার মধ্যে দুটি সমাধি মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। ধারণা করা হয় এই দুটি ওয়ালী মোহাম্মদ এবং তার স্ত্রীর।

আসুন নীচের ছবিগুলোর সাথে সময় পরিভ্রমণ করে আসা যাক।

১। টাইটেল: View from the south-east of the Chota Sona Masjid or Small Golden Mosque, Gaur

আলোকচিত্রী: Joseph David Beglar
আলবাম: This is one of a series of photographs taken by Joseph Beglar for the Archaeological Survey of India.
সময়কাল/Date: ১৮৭০

টাইটেল: Prayer niche in the interior of the Chota Sona Masjid or Small Golden Mosque, Gaur

আলোকচিত্রী: Joseph David Beglar
আলবাম: This is one of a series of photographs taken by Joseph Beglar for the Archaeological Survey of India
সময়কাল: আনুমানিক ১৮৭০
অলংকৃত কালো ব্যাসল্ট পাথর ঘেরা মিহরাব। অলংকরণের বিষয়বস্তু হল খোদাই করা লিপি, বিভিন্ন ধরণের নকশা এবং লতাপাতা।

টাইটেল: Gaur. Small Golden Mosque. East View
আলোকচিত্রী: John Henry Ravenshaw
আলবাম: one of 45 prints in the album 'Gaur: Its Ruins and Inscriptions'.
সময়কাল: আনুমানিক ১৮৬০

টাইটেল: Gaur. Small Golden Mosque

আলোকচিত্রী: John Henry Ravenshaw
আলবাম: one of 45 prints in the album 'Gaur: Its Ruins and Inscriptions'.
সময়কাল: আনুমানিক ১৮৬০

টাইটেল: Details of front arches of the Chota Sona Masjid or Small Golden Mosque, Gaur

আলোকচিত্রী: Joseph Beglar
আলবাম: This is one of a series of photographs taken by Joseph Beglar for the Archaeological Survey of India in the 1870s.
সময়কাল: আনুমানিক ১৮৭০
মসজিদের সামনের দিকের কিছু অংশের ছবি।

টাইটেল: Chuta Suna [Chota Sona] Masjid

শিল্পী: Henry Gordon Creighton
মাধ্যম: Aquatint from a painting
সময়কাল: ১৮১৭
মসজিদের গায়ে পাথরের উপর খোদাই করা সূক্ষ্ণ কারুকাজ খুবই স্পষ্টভাবে ফুটে আছে। ধারণা করা হয় রাজমহল পাহাড় থেকে নিখুঁত এই কালো ব্যাসল্ট পাথরগুলো আনা হয়েছিল। মসজিদের যে কারণে সোনা মসজিদ নামকরণ (সোনালী রঙের গম্বুজগুলো), তা এই ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

টাইটেল: 'The small golden mosque at Gour'.

শিল্পী: James Moffat after Henry Gordon Creighton
মাধ্যম: Aquatint with etching
আলবাম: 'The small Golden Mosque at Gaur.' From 'Views at Gaur', six aquatints by James Moffat after Henry Creighton, published by Moffat in Calcutta 1808
সময়কাল: ১৮০৮

টাইটেল: 'The small Golden Mosque at Gaur.'
শিল্পী: James Moffat after Henry Gordon Creighton
মাধ্যম: Colored aquatint with etching
আলবাম: 'The small Golden Mosque at Gaur.' From 'Views at Gaur', six aquatints by James Moffat after Henry Creighton, published by Moffat in Calcutta 1808
সময়কাল: ১৮০৮

ছোট সোনা মসজিদ এখন:

সোনা মসজিদ এবং সামনের প্রবেশদ্বার:


মসজিদের সামনের দিকের মাঝের প্রবেশদ্বার:


মসজিদের সামনে খিলানকরা মূল প্রবেশদ্বার:


কালো ব্যাসল্ট পাথরের উপর সূক্ষ্ণ কারুকাজ:

মসজিদের সামনের সমাধিক্ষেত্র:


আমি ২০০৯ সালের দিকে যখন দেখেছি, তখন পশ্চিম দিকের দেয়ালের অর্ধাংশ প্রায় ধ্বসে পড়েছিল। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর গৌরে চমৎকার কিছু কাজ করেছে পুরাকীর্তি সংরক্ষণে। ধুনিচক মসজিদ পুরোপুরি পুনঃনির্মাণ করেছে (তবে ডান দিকে মূল যে দেয়ালটুকু অবশিষ্ট ছিল, তা সম্ভবত রাখেনি বা সংরক্ষণের আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে)। দরসবাড়ি মাদ্রাসার ভিত্তি পুনঃনির্মাণ/ সংরক্ষণ করেছে। তবে দরসবাড়ি মসজিদ যে ভাবে আছে, সেভাবেই রাখলে সেটা হবে খুবই চমৎকার। এছাড়া তোহাখানা এবং শাহ নিয়ামতুল্লাহ কমপ্লেক্সের সংরক্ষণ প্রসংসার দাবী রাখে।

আমরা আশা করব এই ঐতিহাসিক মসজিদটিও যথাযথভাবে সংরক্ষিত হবে।

ছবি এবং তথ্যসূত্র:
ব্রিটিশ লাইব্রেরী
http://www.europeana.eu
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৩
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×