somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাম্প্রদায়িকতা আমি এবং বাস্তবতা

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি তখন ক্লাস ৮ এ পড়ি সাল ১৯৯৯ । আমরা প্রত্যেক বছর পাড়া থেকে পুজো করে থাকি। আমাদের সংঘের নাম জল্লারপার বালক সংঘ(সিলেট)। আমার কাকা বড় দাদারা মিলে অনেক আগে থেকেই পূজো করে আসছিলেন, সেই কারনে আমরাও প্রতিবছর দায়িত্ব নিয়ে পূজো করে থাকি। সেই বার কালি পূজো ছিল এবং সাথে ছিল রোজর মাস। সাধারনত কালি পূজোয় আমরা আতশবাজি ফুটিয়ে থাকি দীপাবলির দিন থেকেই। আমাদের কাকা এবং দাদারা যথেষ্ঠ সতর্ক থাকতেন এবং আমাদের কেও বলতেন যেন আযানের সময় বাজি না ফুটাই যাতে নামাজে কোন বিঘ্ন না হয়। আমরাও উনাদের কথা শুনতাম সম্মানের সহিত কোন ভয় থেকে নয়। উল্লেখ্য আমাদের পাশেই জল্লারপার জামে মসজিদ যা বর্তমানে অনেক বড় করে পুননির্মান করা হচ্ছে। তো সেই বার দীপাবলী গেল, পূজোর দিন গেল, যথারীতি বিসর্জন এর দিন এল। বিসর্জন সাধারনত আমরা কালিঘাট শশ্মান এ গিয়ে করতাম। সন্ধ্যা বেলা ট্রাক এল আমরা সবাই সবকিছু সাজিয়ে রাত ৮.৩০ মধ্যে সব কিছু ঠিক করে ফেললাম। এখন শুধু অপেক্ষা কথন নামাজ শেষ হবে আর আমরা ঢাক ঢোল নিয়ে বের হব। এর জন্য হয়ত আমি ই বেশি উদগ্রিব ছিলাম তাই একটু পরপর মসজিদে গিয়ে খবর নিচ্ছিলাম নামাজ শেষ হয়েছে কিনা। ১০ মিনিট পর একজন বলল নামাজ শেষ আমি গিয়ে বললাম যে নামায শেষ হয়েছে। তারপর আমার কাকা এসে যেনে গেলেন নামায শেষ । আমরা মহাআনন্দে ৮.৫০ এর দিকে বেরিয়ে পড়লাম, যখন বের হচ্ছিলাম তখন কিছু মুছল্লিদের দেখতে পেয়েছিলাম তারা মসজিদের বিপরীত দিকে দাড়িয়ে ছিলেন। আমরা অনেক আনন্দ করে বিসর্জন দিয়ে বাসায ফিরলাম রাত ১১.৩০ টার দিকে। ফিরে এসে যা শুনলাম তা নিজের কানকে বিশ্বাস করাতেও আমার কষ্ট হচ্ছিল। আমরা যখন বেরিয়ে যাচ্ছিলাম তার কিছু পরেই নাকি মসজিদের মুসল্লিরা আমাদের পাড়ায় আসে একসাথে দলবেধে নামাজের সময় আমরা ঢাক বাজিয়েছি বলে তারা আমাদের পাড়ার মেয়েছেলেদেরকে তুলে নিবে।!!! তারা নাকি শিক্ষা দিবে। তারা অনেক হই হুল্লোড় করছিলো আর তখন পাড়ায় কোন পুরুষ লোক ই ছিল না । সবাই বিসর্জন এ গেছে। তখন ওই অবস্থায় আমাদের পাড়ার মুরুব্বি ফজলুল হক (নানা ভা্ই) তাদের পথ আটকালেন। উনি অত্র এলাকার একজন সম্মানিত ব্যাক্তি । উনি ই নাকি ওই সময় অনেক কিছু করে তাদেরকে ফেরত পাঠালেন। আমি সেইদিন হইতে আজও ভাবি এই মানুষ গুলো নিয়ে কি আমরা চলাফেরা করি?? যাদের ভিতর এত নোংরা!!! আমরা বিসর্জন দেয়ার আগে অনেক জনের কাছ থেকে জেনেছি নামাজ শেষ তারপরে বের হয়েছি। যদি তাতে কোন সমস্যা হয়ে থাকত তাহলে আমরা আসার পর আমাদেরকে তো বলতে পারতে যে তোমরা এমন করলে কেন?? আমরা তো প্রতিবেশি ই ছিলাম তাই নয় কি?? পরদিন স্কুলে
ঐ পাড়ার একটা ছেলেকে বলতে শুনলাম যে কালকে নাকি তারা এমনটা করলে উচিত শিক্ষা হত। আমি যতবার ঐ কথাগুলো ভাবি নিজের মনের ভিতরে একটা ঘৃণার সৃষ্টি হয় মানুষের নৈতিকতা দেখে। এখানে ধর্মের কোন দোষ নাই কেননা একই ধর্মের লোক খারাপ কাজ করতে চেয়েছে আবার একই ধর্মের লোক বাচিয়েছে। এই হল আমাদের মানষিক অবস্থা।


২০০৯ সাল : চাকরির সুবাদে ঢাকায় এসেছি । আমার অফিস আমাকে থাকার ব্যবস্থা করে দিছিল সেইখানে প্রায় অনেক দিন থেকেছি, তারপর আমি আর আমার বন্ধু মিলে আলাদা ভাবে উঠলাম। । অনেক খুজে একটা রুম পেলাম শংকরে। দুইজন মিলে উঠে গেলাম , উঠার দিন রাজীব (আমার বন্ধু) তাদেরকে বলল যে ও হিন্দু কোন সমস্যা নেই তো? তারপর উনি বললেন না কোন সমস্যা নেই তবে উনার মুখ দেখে বুঝেছিলাম যে কি অবস্থা। অনেক কষ্ট করে শংকর থেকে পান্থপথে এসে অফিস করতাম । আমরা সন্ধ্যায় রুম থেকে বেরিয়ে ঘুরতাম । ওহ একটা কথা আমরা যার কাছ থেকে রুম ভাড়া নিয়েছিলাম তিনি কিন্তু হুজুর ছিলেন।
অতঃপর আমরা ঘুরে যখন রাতে বাসায় আসতাম তখন দেখতাম হুজুর সাহেব অন্য রুমমেটদের সাথে নিয়ে তাস খেলায় মত্ত। তো এভাবেই কেটে গেল ২০ দিন। হঠাৎ পরদিন উনি বলল রাজীব কে বলল যে ভাই আপনার বন্ধুর জন্য আমাদের সমস্যা, কি সমস্যা বলে নাই শুধু বলল যে আপনারা নতুন রুমে উঠে পড়েন। মানে এই রুম ছেড়ে দিতে হবে। রাতে আসার পর শুনে খুব খারাপ লাগল যে স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে ধর্মের কারনে আমাকে রুম বদলাতে হবে। যাই হউক আমরা অনেক কষ্ট করে একটা বাজে জায়গাতে উঠে অনেক দিন কষ্টে কাটিয়ে তারপর একটা ভাল জায়গায় উঠি। নতুন জায়গায় উঠার আগেই বলে নিছি আমি হিন্দু...

ছোট বেলা : ছোট বেলায় সবছেয়ে বেশি যে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি তা হল তোমরা এত টাকা খরচ করে মূর্তি বানাও পরে তা আবার পানিতে ফেলে দাও কেন? প্রশ্নটা আসলে আমার মাথায় ও ঘুরত। তবে উত্তর এর জন্য নয় তাদের প্রশ্নের ধরন দেখে, তামাসার ধরন দেখে!!! ধর্ম মানেই বিশ্বাস তা হোক না যে কোন ধর্ম। হিন্দু ধর্মে বলা আছে দেবী আসেন তার স্বামীর কাছ থেকে তাই তাকে বিদায় জানাতেই হয়। হয়ত কিছু মানুষ মূর্খতার ছলে পা তুলে ফেলত কিন্তু এখন আর কেউ ই তুলে না। কিন্তু তবুও আমার মনি প্রশ্ন জাগে আজও যদি আমি কীন ব্রীজের উপরে দাড়াই হয়ত সেই তামাসাকর প্রশ্ন শুনব যা জানার জন্য নয় কাউকে হেয় করার জন্য করা হয়।

২০১১: আমি ঢাকা থেকে সিলেট গিয়েছি রথযাত্রা উদযাপন করার জন্য। আযান এর সময় আমার জানা মতে সিলেটে কখনই ঢোল বাজনো হয়না। কারন সবাই মনে করে যে আরেক জনের প্রার্থনায় সমস্যা হবে। বিকেলে ফিরা রথ যাচ্ছে ইসকন মন্দিরে , লামাবাজার মসজিদে আসার পর এক লোক বেরিয়ে এল , যা ইচ্ছা তাই গালাগালি করল কারন সে নাকি তখন নামাযে ছিল। সবার আনন্দ তখন এক মুহূর্তে মিশে গেল। আমার বড় জানার ইচ্ছা ছিল যে ভাই এরা কি জেনে করেছে নাকি না জেনে করেছে।


লিখতে গেলে হয়ত আরও অনেক কিছু লিখা হবে তবুও লিখতে ইচ্ছা হচ্ছেনা।
কারন ধর্ম যার যার দেশ সবার।

আপনি যদি কাউকে সম্মান করেন বিপরীতে আপনিও সম্মান পাবেন।

/*ভাই এখানে ভারতের কথা আবার কেউ আনবেন না। কারন ভারত আমাদের দেশ না আর আপনারা আমাদের ভাই , প্রতিবেশী, এলাকাবাসী প্রভৃতি। নিজের প্রতিবেশী যথন এমন চিন্তা করতে পারে তাহলে একটি বার ভাবুন আপনি কার সাথে চলাফেরা করতাছেন আপনার মানসিকতায়/বিশ্বাসে কত বড় আঘাত লাগতে পারে??!!!! */

বি:দ্র: আমি কাউকে আঘাত কিংবা অসম্মান করার জন্যে লিখি নাই । এখানে শুধুই আমার বাস্তবতা টুকু তুলে ধরেছি যা আমি নিজে দেখেছি। হয়ত আরও দেখব কেননা আমরা ভুলে যাই যে আমরা এক দেশের নাগরিক, বিদেশে এই দেশি ভাই পেলে আমরা খুশিতে আত্মহারা হই, অথচ মেজরিটি আর মাইনরিটি নাম দিয়ে আজ সংঘাত আর রাজনীতি। আমাদের কারোর কিছু বলার নেই কারোর কিছু করার নেই। লেখাটা ১.৫ বছর আগে লিখা আজ এক ভাইয়ার অনুরোধে এ পোষ্ট করলাম।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×