somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবুতর পালন করে কোটিপতি!!

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার পারমথুরাপুর গ্রামের বেকার যুবক বাদশা আহমেদ ওরফে দুদু মিয়া (৩৫) বিদেশী জাতের কবুতর পালন করে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

নানা রকম চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা বেকার দুদু মিয়া এলাকার অন্য বেকার যুবকদের কাছে আজ একজন আদর্শ কবুতর খামারী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

প্রতিদিনই দেশের দুর দুরান্ত থেকে মানুষ আসছেন পারমথুরাপুর গ্রামে দুধু মিয়ার বিদেশী জাতের কবুতরের খামার দেখতে।

তবে এই খ্যাতি আর বিড়ম্বনা নিয়ে দুদুু মিয়ার মধ্যে কোন ক্ষোভ নেই। হাসিমুখে সবাইকে স্বাগত জানান তিনি।

দুদু মিয়া এলাকার অনেক বেকার যুবককে নিজে বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করছেন কবুতর পালনে এগিয়ে আসার জন্য।

শুরুর দিকের কথা
হরিণাকুন্ডু উপজেলার পারমথুরাপুর গ্রামের এলাম মন্ডলের পুত্র দুদু মিয়া পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে অষ্টম শ্রেণী পাশ করে পিতার আর্থিক দৈনদশার কারণে নবম শ্রেণীতে আর ভর্তি হতে পারেননি। সেটা ২১ বছর আগের কথা। তারপর তিনি পরিবারের আর্থিক দৈনদশা কাটাতে কাঁধে তুলে নেন নাঙ্গল আর জোয়াল। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে তিনি শুরু করেন কৃষিকাজ।

কিন্ত সেময় চাষাবাদে ঠিকমত আর্থিক উন্নতি না ঘটায় শুরু করের মুরগীর ব্যবসা। নিজ গ্রামের বিভিন্ন বাড়ী থেকে মুরগী কিনে এনে তিনি ঝিনাইদহ শহরে মুরগী বিক্রি শুরু করেন। এই ব্যবসায় কিছুটা সফলতা আসায় তিনি ঝিনাইদহসহ অত্র এলাকার বিভিন্ন জেলার থেকে মুরগী কিনে এনে ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরায় মুরগী সরবরাহ দিতে শুরু করেন।

একবার কুষ্টিয়ায় মুরগী কিনতে গিয়ে তিনি কুষ্টিয়া জেলখানা রোডের নাজমুল হোসেনের কাছে কিছু বিদেশী প্রজাতির কবুতর দেখতে পান। নাজমুল হোসেন সৌখিনতার কারণে বিদেশী কবুতর পুষতেন। সেই থেকে দুধু মিয়ার কবুতর চাষের প্রতি আগ্রহ জন্মে।

বিগত ২০০৭ সালে তিনি বানিজ্যিকভাবে বিদেশী ময়ূরী ও সিরাজী জাতের তিন জোড়া কবুতর দিয়ে বানিজ্যিক চাষ শুরু করেন।

বর্তমান কথা
সরেজমিনে দুদু মিয়ার কবুতর খামার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ প্রজাতির বিদেশী কবুতর রয়েছে তার খামারে। আশ্বর্যজনক হলেও সত্যি এর মধ্যে আফ্রিকার ৪০ হাজার টাকা জোড়া মূল্যের কেরিয়ার হুমার, হল্যাল্ডের ৩০ হাজার টাকা মূল্যের লাল, কালো ও হলুদ কোটারবল, ১০ হাজার টাকা মূল্যের আফ্রিকার মডেনা, অষ্ট্রেলিয়ার কিং, ৫ হাজার টাকা মূল্যের পাকিস্তানী সিরাজী, পারভিন ও সিংহ, ৬ হাজার টাকা মূল্যের হল্যান্ডের বিউটি হুমার, ৮ হাজার টাকা মূল্যের পাকিস্তানী শ্যালো ও নান, ২ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় বোম্বাই ও লোটন, ১০ হাজার টাকা মূল্যের হল্যান্ডের ব্লু কিং, ম্যাগপাই ও আওল, ৬ থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যের পাকিস্তানী ব্লু সিরাজী, কালো কিং , লাল কিং, হলুদ কিং, হোয়াইট কিং, সাটিং ও হাইপিলার, ১ হাজার টাকা মূল্যের অষ্ট্রেলিয়ান সাদা ঘুঘু, ঘিয়ে ঘুঘু এবং দেশী সোয়াচন্দন প্রজাতির নামী দামী বিলুপ্ত প্রজাতির প্রায় ৫ শতাধিক বিদেশী কবুতর রয়েছে।

এছাড়া আমাদের দেশীয় নানা প্রজাতির প্রায় ৭ শতাধিক কবুতরের খামার গড়ে তুলেছেন দুদু মিয়া। তিনি জানালেন, তার সংগ্রহে থাকা বিদেশী কবুতর গুলোর বর্তমান বাজার মূল্যে ২০ লক্ষ টাকার উপরে। দুদু মিয়া কবুতরের ব্যবসা করে ইতিমধ্যে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। পারমথুরাপুর গ্রামে গ্রামে তৈরি করেছেন একতলা পাঁকা বাড়ি, মাঠে ৩ বিঘা জমি, ৪০টি ছাগল, ২ টি গরু, বাড়িতে পোষা শতাধিক মুরগী, নিজের মুরগী সরবরাহের ব্যবসা ও ব্যাকের কাছে গচ্ছিত টাকা সব মিলিয়ে তিনি বর্তমানে প্রায় কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

তার কাছ থেকে জানা গেল, তিনি এসব বিদেশী জাতের কবুতর নাটোর, রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, খুলনা, মেহেরপুর ও ঢাকা থেকে সংগ্রহ করেছেন।

আর এসব বিদেশী কবুতর বাচ্চা দিলে তিনি জেলার বাইরের পাইকারদের কাছে এক হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা জোড়ায় এগুলো বিক্রি করে দেন।

পদক প্রাপ্তি
সফল কবুতর চাষী হিসেবে বাদশা আহমেদ ওরফে দুদু মিয়া গত ২০০৮ সালে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক আবু সাইদ ফকির ও বর্তমান জেলা প্রশাসক রমারানী রায়’র নিকট থেকে চলতি বছর মোট দুই বার জেলার শ্রেষ্ট কবুতর চাষী হিসেবে নগদ ৮ হাজার টাকা ও সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন।

এদিকে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মকরন্দ বিশ্বাস জানান, দুধু মিয়ার কবুতর পালনের এই সাফল্য দেশের বেকার যুবকদের জন্য একটি মাইলফলক।

দেশের বেকার যুবকদের কাছে দুদু মিয়া একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব হতে পারেন। তবে তার দেখাদেখি দেশের অন্য বেকার যুবকরাও যদি ব্যতিক্রমি এই কবুতর পালনে এগিয়ে আসেন, তাহলে দেশের অর্থনীতি আরো মজবুত হবে।

সুত্র
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×