somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেগম খালেদা জিয়া, দেশকে অচল করে দেওয়ার হুমকি কার স্বার্থে?

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়া স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামী বলেছেÑ প্রয়োজন হলে আগামীতে নাকি তারা দেশে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দেবে। অন্যদিকে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অনেকটা একই সুরে ইদানীং বিভিন্ন সভায় বলছেন, প্রয়োজনে তিনি নাকি দেশকে অচল করে দেবেন। দেশ অচল কাদের জন্যে করবেন? জনগণের জন্য নাকি ক্ষমতা দখলের জন্য? হুমকিগুলো মূলত পরোক্ষভাবে জনগণকেই দেওয়া হয়েছে বলা যায়। কারণ তারা যদি আগামীতে সত্যি সত্যি দেশের পরিস্থিতি জ্বালাও-পোড়ার পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন তাহলে সরকারের চেয়ে দেশের সার্বিক অর্থনীতি ও জনগণেরই ক্ষতিই হবে সবচেয়ে বেশি। বেগম খালেদা জিয়া দেশ বাঁচানোর ¯ে¬াগান মুখে মুখে বললেও আসলে তিনি পরোক্ষভাবে দেশের ক্ষতি করার পরিকল্পনায়ই করছেন। অতীতে কোনো এক সভায় তিনি সেনাবাহিনীকে দেশের হাল ধরার ইঙ্গিত পর্যন্ত দিয়েছেন। একদিকে নিজেকে আপসহীন গণতান্ত্রিক নেত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করবেন আর অন্যদিকে একটি অগণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতায় আসার ডাক দেবেনÑ এ কি করে হয়। তার মানে একটি বৈধ নির্বাচিত সরকারকে হটাতে প্রয়োজনে বেগম খালেদা জিয়া দেশে সেনা শাসনকে সমর্থন দিতেও রাজি আছেন? একই মুখে দুরকম বক্তব্য, একদিকে গণতন্ত্র ও নির্বাচন আর অন্যদিকে অনির্বাচিত অগণতান্ত্রিক সরকার। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেনারেল আইয়ুব খান, জেনারেল ইয়াহিয়া খান, জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদের মতো একটি অগণতান্ত্রিক সরকারকে কেন ক্ষমতায় নিয়ে আসতে চান? তিনি কি ভুলে গেছেন সেনাবাহিনী সমর্থিত ডক্টর ফখরুদ্দিন আহমেদ সরকারের কথা? দুর্নীতির দায়ে তার দুই পুত্র তারেক আর কোকোর তখন কি অবস্থা হয়েছিল?

রাজনীতির নামে এখন বিরোধী জোট লাশের সন্ধানে বেরিয়েছে। যে করেই হোক ক্ষমতায় তাদের আসতেই হবে। এজন্য সবকিছুই তারা করতে প্রস্তুত। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার এখন একমাত্র ইচ্ছা তারেক রহমানকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করা। যে করেই হোক এবার তাকে সফল হতেই হবে। তার দল বিএনপি যদি এবার ক্ষমতায় না আসতে পারে তাহলে দলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে নাÑ একথা তিনি ভালো করেই জানেন। জেনারেল জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দলটি বেশিরভাগ সময়ই ক্ষমতায় ছিল। ফলে দলে পরীক্ষিত নেতার খুবই অভাব। অনেকে বলেন, বিএনপি আসলে কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বিএনপি একটি ইন্সটিটিউট। এখানে নিজ নিজ স্বার্থের প্রয়োজনে বিভিন্ন দল ও মতের লোকজনের মিলন হয়েছে। আর আদর্শ বলতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আবিষ্কার এবং ভারতবিরোধী অপপ্রচার। এ দুটি ছাড়া আর কিছুই নেই দলটিতে। এ জন্যই এত ভয় খালেদা জিয়ার। একটানা সাত বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলটিতে এখন আভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে এসে দাঁড়িয়েছে। আগামীতে ক্ষমতায় না এলে বিএনপিকে বর্তমান অবস্থানে টিকিয়ে রাখা হয়তো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ কারণেই খালেদা জিয়া ইসলামী দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় আসার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর ’৯৬-এ ক্ষমতায় আসে। অর্থাৎ ১৯৭৫-র পনের আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর অনেক নির্যাতন জুলুম আর অত্যাচার সহ্য করেও দলটি তাদের সংগ্রামের পথ থেকে সরে আসেনি। জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ ও সবশেষে ’৯১-এ বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর বারবার চেষ্টা করা হয়েছে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য। কিন্তু তাদের সে চেষ্টা সফল হয়নি। কারণ, আওয়ামী লীগ একটি প্রকৃত রাজনৈতিক দল। অনেক অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগের জš§। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জš§ হয়েছে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। শুধু তাই নয়, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কোনো সেনাপ্রধান ক্ষমতায় এসে হালুয়া রুটির লোভ দেখিয়ে যেভাবে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জš§ সেই পথে আওয়ামী লীগের জš§ হয়নি। বিএনপি যদি এখন মনে করে তারাও একটি প্রকৃত রাজনৈতিক দল তাহলে আরেকবার বিরোধী দলে থেকে পরীক্ষা দেওয়াটাই হবে উত্তম কাজ। সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে মাত্র সাত বছর। আওয়ামী লীগ সংগ্রাম করেছে ২১ বছর। বিএনপি কি পারবে না আরও পাঁচ বছর? দেশের রাজনৈতিক সংকট রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য তাহলে বিএনপি একটা সুযোগ পাবে এবং বেগম খালেদা জিয়া একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেত্রী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করবেন।

খালেদা জিয়া ২৪ অক্টোবরের পরবর্তীতে দেশকে অচল করে দেওয়ার যে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন তার জন্য যে শক্তি প্রয়োজন তা কি বিএনপির আছে? এ ব্যাপারে বিএনপি হয়তো জামায়াত ও হেফাজতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামার চিন্তা করছে। দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে এ দুটি দল ধর্মকে সামনে নিয়ে এসে জনগণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে। কারণ, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে তারা সবকিছু করতে প্রস্তুত। গোলাম আযম, সাঈদি, নিজামি, সাকা, আলিমসহ চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের অবশ্যই বিচার হতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে অসংখ্য বাঙালিকে হত্যা করেছিল। আর আজ বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাদের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছেন।

জাতীয় সংসদে বাতিল হয়ে যাওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দেশ ধ্বংসের আন্দোলনে নামতে যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বিভিন্ন সভায় ২৪ অক্টোবরের পর এ আন্দোলনের ডাক দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক কিছুই এপর্যন্ত করা হয়েছে। জামায়াত-শিবির আর হেফাজতের পক্ষ নিয়ে বোমা ফুটিয়ে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বারবার হরতাল দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের গাড়ি, বাড়ি-ঘর পোড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করে তাদের ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে জীবন দিয়েছেন অনেকে। জনগণের ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল জাতীয় সংসদ ত্যাগ করে আগামীতে খালেদার দেশ জ্বালাও আন্দোলনে হয়তো আরও অনেকের প্রাণ ঝরে পড়তে পারে। তবুও দেশকে অচল করে দেওয়ার পথে বিএনপি এগিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। ক্ষমতায় যাওয়ার স্বার্থে জামায়াত, হেফাজত আর বিএনপির ডাকা এ আন্দোলনে জনগণের আদৌ সমর্থন আছে কি?

তারেক রহমানের হাওয়া ভবনের সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোর কথা জনগণ নিশ্চই ভুলে যায়নি? তাছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ‘মামু-ভাগনা’র সরাসরি হস্তক্ষেপের কথা সকলেরই মনে থাকার কথা। বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় দোষ তারা বিগত দিনে বিএনপি-জামায়াত সরকারের অপকর্মগুলো জনসমক্ষে প্রচারে ব্যর্থ হয়েছে। তাই হয়তো অনেকেরই সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথা আর এখন মনে নেই। বর্তমান সরকারের কিছু কিছু ভুল এখানে ব্যাপকভাবে প্রচারে প্রতিপক্ষ সফল হওয়ার কারণেই বিএনপির দিকে কিছু কিছু মানুষ আজ ঝুঁকে পড়েছে। সরকারের বিশাল সাফল্য অপপ্রচারের কারণে এখানে ঢাকা পড়ে গেছে। এ কারণেই খালেদা জিয়ার ক্ষমতায় যাওয়ার হুমকি দেওয়া আন্দোলন হয়তো প্রাথমিকপর্যায়ে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে আগে থেকেই সরকারের ভেতরে শক্ত প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি বলে অনেকে মনে করছেন। জনগণের জানমাল রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার প্রথম থেকে কঠোর হলে বিপক্ষ শক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। দেশের সার্বিক পরিবেশ অশান্ত করার মতো শক্তি এখন আর তাদের নেই। দেশের মানুষ শান্তি চায়। ক্ষমতায় গিয়ে তারেক রহমানকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে বেগম খালেদা জিয়ার দেশকে অচল করে দেওয়ার হুমকিতে জনগণ আজ আতঙ্কিত। একমাত্র সরকারই পারবে দেশের মানুষকে এ আতঙ্কের হাত থেকে রক্ষা করতে। সুত্র
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×