somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ঢাকা ক্লাব

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা ক্লাব বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত প্রাচীনতম বিনোদনমূলক সংগঠন। রমনা এলাকায় অবস্থিত এই পার্কটি ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ও অন্যান্য ইউরোপীয়দের বিনোদনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং বিংশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত এখানে কেবল শ্বেতাঙ্গদেরই প্রবেশাধিকার ছিল।ঢাকা ক্লাবের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সাধারণ মানুষ তথা সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই ।১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফেরার পর ঢাকা ক্লাবের জন্য ৫ একর জমি রেখে বাকিটা বারডেম হাসপাতাল নির্মাণের জন্য দিয়ে দেন। ক্লাবের নামে যে ৫ একর জমি দেওয়া হয় সেটা ছিল নির্দ্দিষ্ট মেয়াদের লিজ।ঢাকা ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়- ১৮৫১ সালে ।

ক্লাবটি নিবন্ধন করা হয় ১৯১১ সালে।১৯৪১ সালে রমনা এলাকার ৫২৪ বিঘা জমি ক্লাবটিকে ইজারা দেয়া হয়। পরে ঐ জমিতে স্থাপিত হয়েছে ঢাকা শেরাটন হোটেল, বেতার ভবন, বারডেম, ইত্যাদি।ঢাকার নওয়াব পরিবার ঢাকা ক্লাবকে ভূমি লিজ দিয়েছিল।ঢাকা ক্লাবের আয় থেকে সরকারকে কোনো ধরনের রাজস্ব দেওয়া হয় না। বরং ২ হাজার ৩শ জন সদস্যের মধ্যে গড়ে মাত্র ২০০ জন এই বৃহৎ জায়গা তাদের ভোগ-বিলাসের জন্য দখল করে রেখেছে। সেই সঙ্গে জনগণের সম্পত্তি হাতের পর হাত বদলে বেহাত হয়ে যাচ্ছে।” ’৭২ সালের শেষদিকে ঢাকা ক্লাবের কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব মারাত্মক রূপ ধারণ করলে ঢাকার তৎকালীন পুলিশ সুপার মাহবুব উদ্দিন (এসপি মাহবুব) এক অভিযানের মাধ্যমে ক্লাবটি বন্ধ করে দেওয়ার পদক্ষেপ নেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ক্লাবটি বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষপাতি ছিলেন।

ঢাকা ক্লাবের কর্মকর্তারা এই ক্লাবটির ‘জন্মলগ্ন’ নিয়ে গর্ব করছেন। কিন্তু সেটা তো ইংরেজের ঔরসে। আমাদের জন্ম সাল কি একাত্তর নয়? আমাদের জন্ম কি ইংরেজের ঔরসে? ঔপনিবেশিকতায়?ঢাকা ক্লাবের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাদত হোসেন সেলিম।ঢাকা ক্লাবের নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৫ একর জমি। এখানে সভাকক্ষ, সেমিনার কক্ষ, হলঘর, অতিথিশালা, রান্নাঘর ও খাবার ঘর এবং টেবিল কোর্ড, বিলিয়ার্ড ক্লাব, স্কোয়াশ ক্লাব, গলফ ক্লাব, সুইমিংপুল, লন টেনিস ইত্যাদি খেলার সুবিধা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর ঢাকা ক্লাবের দখল ধীরে ধীরে এক শ্রেণীর নব্য ধনী ব্যবসায়ীর কব্জায় চলে যেতে থাকে। এমনকি এক শ্রেণীর প্রতিক্রিয়াশীল স্বাধীনতা বিরোধী ব্যাক্তিও এই ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নেবার চেষ্টা চালায়। ২০০২ সালে ক্লাবটির গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের মাধ্যমে এর সদস্যপদ বিক্রির বিধান চালু করা হয়। এর ফলে এক শ্রেণীর কালো টাকার মালিক খুব সহজেই ক্লাবটির সদস্য হওয়ার সুযোগ পায়।

ঢাকা ক্লাবের সদস্য, তাদের পরিবার ও অতিথিদের জন্য রয়েছে নানা আয়োজন ও সুযোগ সুবিধা। এখানে উন্নতমানের একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। অভিজ্ঞ দেশি-বিদেশি শেফ এখানে রকমারি খাবার তৈরি করেন। ক্লাবের ভেতরে ১৯টি কক্ষের বিশেষ অতিথিশালা রয়েছে। একটি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটসসহ মোট ১৮টি ডাবল বেডরুম রয়েছে।“শোনা যায়, ঢাকা ক্লাবের অধিকাংশ সদস্যই তাদের বৈধ আয়কর বহির্ভূত অবৈধ কালো টাকা ক্যাশ লেনদেন করে মদ খাওয়া এবং সংবিধান বিরোধী জুয়া খেলা ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করে কর ফাঁকি দিচ্ছে।” বর্তমানে ক্লাবটিতে অব্যবসায়ী (বিচারপতি, আমলা, আইনজীবি, শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, ব্যাংকার ইত্যাদি) সদস্যের সংখ্যা ১ শতাংশেরও কম। তবে অত্যন্ত চাতুরতার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর সদস্যসহ কতিপয় পেশার কিছু লোককে অনারারী সদস্য বা ব্যবহারকারী সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে, যা খুবই অস্থায়ী এবং যে কোনো সমস্য এসব সদস্যপদ বাতিল করে দেওয়া যায়।

এখানকার সদস্যরা হেলথ ক্লাবে নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। সদস্যদের পরিবারের জন্য রয়েছে গানের স্কুল, নাচের স্কুল, ছবি আঁকার স্কুল, সাঁতার শেখার ব্যবস্থা। প্রায় ১০ হাজার দুষ্প্রাপ্য বইয়ের একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারও রয়েছে। ক্লাব সদস্যরা বাড়িতে বই নিয়ে পড়ার সুযোগ পান। বর্তমানে ঢাকা ক্লাবের এক হাজার ৫০০ জন আজীবন সদস্য এবং দুই হাজার ৮০০ সাধারণ সদস্য রয়েছেন।সরকারি ৩০০ কাঠা জমি দখল করে ঢাকা ক্লাব বছর বছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে এখানে প্রতিনিয়ত অবৈধ উপার্জনের লাখ লাখ টাকা দিয়ে দেদারসে হোলি খেলা হয়।ঐতিহ্যের নামে ঢাকা ক্লাবে কিছু অমানবিক ও জঘন্য নীতি-নিয়ম অনুসরন করা হয়। ক্লাব কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত পোশাক ছাড়া অন্যকোনো পোশাক পরে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবেও এই ক্লাবে প্রবেশ করা যায় না। ইতিপূর্বে সমাজের বহু গুনী মানুষকে এই নিকৃষ্ট অজুহাতে ক্লাবটিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। প্রখ্যাত গবেষক ও লেখক ফরহাদ মজহার তার এক আত্মীয়ের আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে একবার ঢাকা ক্লাবে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্যুটকোট না পরার অপরাধে সেদিন তাকে ক্লাবে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

বিনোদনের নামে ক্লাবটিতে মদ্যপান এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত জুয়া খেলার আসরও বসে। গত বছর ব্যাপক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এই ক্লাবের ১০০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়। তখন বলা হয়েছিল যে, ঢাকা ক্লাবের গৌরবের ১০০ বছর। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ঢাকা ক্লাবকে ঘিরে বাঙ্গালীর গৌরবের কিছুই নেই।১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে এই ক্লাব ছিল হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের নানা অপকর্মের কেন্দ্র। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার আগে-পরেও এই ক্লাব মেজর ডালিমসহ তার সহযোগীদের দখলে ছিল বলে জানা যায়। অভিযোগ আছে যে, এই ক্লাবে বসেই খুনীরা হত্যকান্ডের পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্রের ছক তৈরী করে।যে কারণে যুদ্ধের সময় মুক্তিবাহনীর আওতাধীন ঢাকার ক্র্যাক প্লাটুন ঢাকা ক্লাব লক্ষ্য করে বেশ কয়েকবার গ্রেনেড বিষ্ফোরণ ঘটায়।

এই ক্লাবে কার্ডরুম নামের একটি কক্ষ আছে, যেখানে কোটি কোটি টাকার জুয়ার আসর চলে দিনরাত এবং এর বিপরীতে সরকারকে কোনো রাজস্ব দেওয়া হয় না। শুধু জুয়া নয়, আরও বিভিন্ন রকম আর্থিক ও বানিজ্যিক কর্মকান্ড রয়েছে এই ক্লাবের। কিন্তু এসবের বিপরীতে সরকারকে কোনোরূপ ভ্যাট বা ট্যাক্স দেওয়া হয় না। ঢাকা ক্লাবের মালিক-সদস্যরা প্রায় প্রতেক্যেই ধনী মানুষ। তারা নিজেদের টাকায় আরও অনেক বড় জায়গা ক্রয় করে সেখানে নিজেদের ক্লাব সরিয়ে নিতে পারেন।যে স্থানটিতে বর্তমানে ঢাকা ক্লাব নামের রঙ্গশালাটি পরিচালিত হচ্ছে, সেখানে প্রতিকাঠা জমির বাজারমূল্য এখন কম করে হলেও ১০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ৩০০ কাঠা জমির দাম ৩ হাজার কোটি টাকা।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×