somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি ও কয়েকটি মেয়ে !

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মন খারাপ হলেই আমি সুরমা পারে চলে যাই। বয়ে চলা নদী দেখে খুব ভাল লাগে। মনে হয় আমার জীবনটাও যদি সব সময় গতিময় হতো। মাঝে মাঝে যখন জীবন থমকে দাঁড়ায় তখন নদীর কাছে চলে যাই। এক পশলা বৃষ্টির পর বিলাই কুত্তা বৃষ্টি হচ্ছিল। তবু নদী দেখা শেষ করে, রিকশার হুট নামিয়েই চললাম।

ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী সেফ্রন রেস্টুরেন্টে পরিচিত ওয়েটারটা এগিয়ে আসলো। "স্যারের কি মন খারাপ, ভিজে আসলেন যে?" মন খারাপ হলে মানুষের মুখ নাকি নীলচে কালো হয়ে যায়। কিছুটা রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারের মতো লাগে। আমার চেহারায় সেরকম কিছু একটা কি দেখতে পেল সে? দাঁত বের করে আর হাসলাম না আমি। "গরম গরম কি আছে আজ?" "স্যার সবইতো গরম? কি খাবেন?" "হালিম আর স্পেশাল পরটা দাও। সবশেষে চিনি বেশী দিয়ে চা দিবা" "ঠিক আছে স্যার, আপনি কি একলাই, মানে আর কেউ আসবে না?" একটু হেসেই উত্তর দিলাম- "না"।

আমার সামনের টেবিলে বসে আছে ৩জন মেয়ে, ১জন ছেলে। একজনকে আমি ভাল করে দেখতে পাচ্ছি। চৌকশ চিবুক, শ্যাম বরণের মেয়ে। জরজেটের উড়নাটা একটু পর পর মাথা থেকে পড়ে যাচ্ছে। একটু মনযোগ দিয়ে ওদের কথা শুনার চেষ্টা করলাম । সবাই ইংরেজীতে কথা বলছে ।
-Its to much spicy, is'nt ?
-Yaaa..
-Leyla , finish this as soon as possible..
-You are all time in hurry
-As you are all time in late..

আমার সামনা-সামনি যে মেয়েটা বসলো টার নাম মনে হয় লেয়লা। কয়েকবার চোখে চোখ পড়ে গিয়েছে । আর তাকানো যাবে না। ভাববে ফ্ল্যাট করতে চাচ্ছি, নাকি কাপুরুষের মতো ভদ্র সাজছি? আসলে মেয়েদের মন বোঝা মুশকিল, তারা কখন কি ভাবে তারাই হয়তো জানে না। লেয়লারা আবার হেসে উঠলো।আমি আর ওদের কথায় মনযোগ না দিয়ে হালিম পরটায় মনযোগ দিলাম।
লেয়লার পাশে যে ছেলেটা বসেছিল হঠাৎ সে আমাকে সে ডেকে বলল: ভাইসাব কিতা আমরারে চিনুইন নি? (আপনি কি আমাদের পরিচিত?) আমি এবার অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। কিছুটা অপরাধীর সুরে বললাম- "নান না, কেন বলুনতো?" "না, কুনু কারন নাই" লেয়লাকে দেখিয়ে আবার বললো "ইগু আমার বইন, লন্ডন থাকি আইছন" (এ আমার বোন, লন্ডন থেকে এসেছে)।
আমি এবার খুব অসহায় গেলাম। কয়েকবার তাকানোতে মেয়েটা বোধহয় আমাকে বখাটে টাইপ কিছু ভেবেছে। আমি আর কিছু বলতে পারছিলাম না। মাথা নিচু করে খেতে লাগলাম। ওয়েটারের ডাকে মাথা তোললাম-"স্যার আর কিছু লাগবে" "পানি আনেন"।

প্রায় দশ মিনিট পর লেয়লারা চলে গেল। যাওয়ার সময় মেয়েগুলির খিল খিল হাসি শোনা যাচ্ছিল । আরেকবার লজ্জায় মাথা নামালাম।
একমিনিটের মাথায় আরো দুটি দল সেফ্রন রেস্টুরেন্টের বড় ক্যাবিনটাতে ঢুকলো। একজন মোটা মহিলা কালো সালোয়ার কামিজ, আরেকজন একদম শুকনো একটা মেয়ে- দেখে মনে হয় কাজের মেয়ে। মোটা মহিলাটা ঢুকেই জোড়ে ওয়েটারকে হাক দিল। সুন্দর ও স্পষ্ট ভাষায় অর্ডার দিল। ভাষায় বোঝা যাচ্ছে সিলেটী লোকাল কেউ না, আবাদী (সিলেটীরা, নন সিলেটী যারা সিলেট শহরে এসে বাস করে তাদের "আবাদী" বলে গালি দেয়)।
সেই আবাদী মহিলা শুদ্ধ ভাষায় অর্ডার দেয়ার পর শুদ্ধ ভাষায় তার পাশের শুকনো মেয়েকে আস্তে করে গালি দিয়ে উঠলো। "খান* নাকি তুমি? ঐ বাইন** ম্যানেজারের কাছে কেন গেছিলা? চু* খাওয়ার জন্য?" আমি আর বাচ্চা সহ যে মেয়েটি এসেছে থ হয়ে মহিলার দিকে তাকালাম। ও বলাই হয় নাই দুটি বাচ্চা সহ আরেকজন মেয়ে ঐ কেবিনে মোটা মহিলাদের সাথে ঢুকেছিল। যাই হৌক , আমাদের চাহনী দেখে শুদ্ধ ভাষায় গালি দেয়া মহিলাটির কোন ভাবান্তর হলো না। যে মেয়েটি গালি খেল সেও কোন কস্ট পেল বলে মনে হলো না। দুজনই মিট মিট করে হাসছে আর খোশ গল্প করছে।

ইতোমধ্যে আমার হালিম খাওয়া শেষ। পরিচিত ওয়েটারকে ডেকে চায়ের অর্ডার দিলাম। দুটো বাচ্চা নিয়ে এসেছে যে মেয়েটি সে বাচ্চা দুটির মা নাকি বড় বোন ঠাহর করতে পারলাম না। মা হবেই হয়তো, কারণ প্রায় ২বছর বয়সী ছোট ছেলেটার সাথে উনার চেহারার মিল আছে। উনারা অর্ডার দিলেন চিকেন বিরিয়ানী। বিরিয়ানি আসার পর আরেক যন্ত্রনা। তিনজনের কেউ খেতে পারছে না। প্রায় পাঁচ বছর বয়সী ছোট মেয়েটা কিছু বলছে না। কিন্তু ছেলে বাচ্চাটার চিৎকারে ছোট্ট কেবিনটায় সিডর শুরু হয়েছে। মা এবার নিজের ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইল খোললেন ও হিন্দি একটা গান ছাড়লেন: তেরি মাস্ট মাস্ত দু নেয়ন, মেরা দিলকা লেগেয়া চেয়ন। বাচ্চা টা কি বুঝলো কে জানে, কান্না থেমে গেল। এক প্লেট থেকে তিনটি প্রানী চিকেন বিরিয়ানি খাচ্ছে। মা পাখি যেভাবে বাচ্চাদের খাইয়ে দেয় ঠিক সে ভাবে- একবার বড় ছানা, একবার ছোট ছানা। মাঝে মাঝে এক লোকমা নিজেও খাচ্ছে, নৈসর্গিক দৃশ্য।

আমার ফোনটা বেজে উঠলো । রিসিভ করতেই এক কন্ঠ: " কি হলো আপনি কই, ক্যাম্পাসে ফিরবেন না? " কিন্নরী এ কন্ঠ বড় পবিত্র, বড় মায়াময়। যেমনটা ভোরের কুসুম সূর্য্য-হিমেল হাওয়া, নদীর টলমল জল- কুয়াশা সুশীতল, ঝকঝকে শিশির- বৃষ্টি ঝির ঝির। বড় পবিত্র, বড় মায়াময় সে।
আমি গলার স্বর পাল্টানোর অভিনয় করি- এইতো আমি সেফ্রনে, একা একা হালিম পরটা খাই।" "আপনার কি মন খারাপ?" খাইছেরে ! কিভাবে বুঝলো? সে কি আমার ভ্যাম্পায়ার মার্কা চেহারাটা দেখে ফেলেছে ! তাহলে কি কন্ঠ শোনে..... আর লুকানো যাবে না, স্বীকার করে ফেললাম। "আমার খাওয়া শেষ, বিল দেব। একটু পরে তোমাকে ফোন দিচ্ছি।"

আমি বিল পরিশোধ করে কেবিনের দরজা খোলে বেড়িয়ে আসি। এক টেবিলে হিন্দি গান ছেড়ে এক প্লেটে তিন প্রানী বিরিয়ানি খাচ্ছে। আরেক টেবিলে মিট মিট করে হাসছে দুজন । তাদের অর্ডার নিয়ে এখনো ওয়েটার আসে নি। আর আমি বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় রিকশা খুঁজি ।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×