somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ছোট বেলার গরু পালন! হাম্বা.....

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের যখন প্রথম গরু কিনে তখন আমি বেশ ছোট ৬/৭ বছর । তাই গরু পালনের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি পাই । তখন আমাদের গরু ছিলো মাত্র একটি সাথে একটি বাছুর । কালো রং এর গাই গরু (গাই মানে গাভি ) । প্রতিদিন দুধ দিতো ।

একদিন গরুটা অসুস্থ হয়ে মারা যায় । সেদিন বাবার চোখে আমি কান্না দেখেছিলাম। দাদা বাবাকে বুঝালেন অবলা প্রানির জন্য কান্না করতে হয় না । আসলে বাবা নিজেকে বেশি দায়ী ভাবছিলেন, কারন গত বর্ষায় গোয়াল ঘরের চাল ভাঙ্গা ছিলো । বৃষ্টি আসলেই গরুটি ভিজে সারা রাত দাঁড়িয়ে থাকতো মা বার বার তাগিদ দেবার পরও বাবা গুরুত্ব দেয়নি ।

তার পর ৬/৭ বাছর আর আমাদের গরু কিনে নাই । আমি যখন ক্লাশ সেভেন/এইট এ তখন আবার আমাদের গরু কিনে । প্রথম দিনতো গরু দেখে খুবই খুশি (কিন্তু আমি কি জানতাম আমার কপালে আজাব চাপতে যাচ্ছে ?) । গরুটা দেখে শান্ত মনে হচ্ছিলো সাদা রং এর । আমি একটু সাহস করে কাছে গেলাম গরুটা তেমন কিছু করলো না । সবাই বলতে থাকলো ভালোই তো আরমানি তো ইচ্ছা করলে গরুটা পালতে পারে!
প্রথম প্রথম গরু পালন খারাপ লাগতো না । তাছাড়া আমার দায়িত্ব ছিলো কম , সকাল বেলা গরুটাকে মাঠে হাছাড় দিয়ে আসতাম ( হাছাড় মানে মাঠে ভালো ঘাস দেখে গরুকে শক্ত করে খুঁটি মেরে রাখা যাতে সে এই এরিয়ার বাহিরে যেতে না পারে ) মাঝে মাঝে গিয়ে খুঁটি চেঞ্জ করে দিয়ে আসতাম, দুপুরে পানি খায়াবার জন্য বাসায় নিয়ে আসতাম , আবার মাঠে দিয়ে আসতাম। সন্ধ্যায় ফাইনালি বাসায় নিয়ে আসতাম ।

কিন্তু কাজতো আছতে আছতে বাড়তে থাকে । কাচি দিয়ে খ্যার ( খড় ) কাটা , চারিতে পানি দেওয়া (চারি মানে গরুর খাবার খাবার জন্য বড় পত্র বিশেষ ) মাঝে মাঝে গবর ফালানো উঁহ!:(( আর দুধ পানানো ( দুধ দোহানো )

দুধ পানানো এতো সহজ কাম না ! কিছুখন পরই হাতের আঙ্গুল অবশ হয়ে আসে । আমি আধা সের, তিন পোয়া পর্যন্ত পেতাম । আমাদের সাদা গরুটা ১- ১.৫ লিটার দুধ দিতো । আমারা একজন লোক কন্ট্রাক করেছিলাম শুধু সকাল বেলা দুধ পানিয়ে দিয়ে যেতো । কোনো দিন লোকটা না আসতে পারলে আমি ও মা মিলে কাজটা শেষ করতাম ।

দুধ দোহানোর বিষয়ে আর একটু বলি : রাতের বেলা মা গরুকে এক জায়গায় বাছুরকে আরেক জায়গায় শক্ত করে বেঁধে রাখা হয় যাতে তারা কাছে না আসতে পারে । সকাল বেলা দেখবেন দুধে গরুর ওলান ফুলে আছে । যা যা লাগবে- একটি দুধ দোহানোর পাত্র , একটি বাটিতে অল্প তেল আর কমপক্ষে একজন সাহায্যকারী যে মাঝে মাঝে বাছুরটিকে গরুর কাছে আনবে আবার প্রয়োজনে দুরে সরিয়ে নিবে ।
প্রথমে বাছুরটিকে ছেড়ে দিন, সারা রাত না খাওয়া বাছুড় দৌড়ে যাবে দুধ খাবার জন্য কিন্তু যেমনি একটি বাটে দুই/তিন টান দেবে সাথে সাথে তার মুখটা চেঞ্জ করে দিন অন্য বাটে। এখানেও দুই/তিন টান দিলে আবার চেঞ্জ করে অন্যটাতে দেন। এই ভাবে চারটি বাটেই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে করুন । এতে বাটগুলি যেমন নরম হবে তেমনি ওলানটা আরও দুধে ভরে যাবে ।
এবার বাছুরটাকে দুরে সরাতে বলুন । দুই হাতের দুই আঙ্গুলে তেল নিয়ে দুধের পাত্রটি ওলানের নিচে রেখে শুরু করুন চিনোর-মিনোর-চিনোর..... ;)

কিছুক্ষণ পর দেখবেন আর দুধ বের হচ্ছে না। কি ব্যাপার ! এত কম দুধ হবারতো কথা না । কোনো চিন্তা করিয়েন না । আবার বাছুরটিকে ছেড়ে দেন , আগের মত দু/তিন টান দিলেই বাট চেঞ্জ করে করে সরিয়ে নিয়ে আসুন। আবার আপনার কাজে লেগে পড়ুন ।
কিছু কিছু চুরা “মা গরু” আছে তারা তাদের বাচ্চাদের জন্য দুধ স্টক করে রাখে। আর মানুষ কি আজিব, বাছুরে হক এর দুধ আমরা জুর করে ছিনতাই করছি , আর তার মা নিজের বাচ্চার জন্য একটু দুধ রাখতে চাইলে তাকে উপাধি দিচ্ছি চুরা । /:)

বছর বছর আমাদের একটা একটা করে গরু বাড়তে থাকে । একসময় আমাদের গরুর সংখ্যা হয় বাছুর সহ চারটি । একটি গাই, একটি বহন , একটি ধামরা বাছুর আর একটি ছোট বাছুড় । ( এখানে বলে রাখি গরুর সব বাচ্চাকে (স্ত্রী বা পুরুষ ) ছয় মাস পর্যন্ত বাছুড় বলা যায় , তার পার বহন বাছুড়(স্ত্রী) আর ধামরা বাছুড়(পুরুষ) । বহন/বকনা বড় হয়ে গাই/গাভি। আর ধমরা বড় হয়ে বলদ অথবা ষাঁড় ।

গরু দেখা শোনার জন্য লোক রাখলে আমি মুক্তি পাই কিন্তু সে অসুস্থ থাকলে বা বাড়ি যাবার ছুটি নিলে তার দায়িত্ব আমার ঘাড়েই এসে পড়তো । এমনও হতো দুই দিনে ছুটির কথা বলে ৩/৪ দিন কাটিয়ে দিতো । আমি মাঝে মাঝে নিজে তাদের বাড়তে গিয়ে এক দিন আগেই নিয়ে আসতাম ।
দিনে দিনে লোক পাওয়া কঠিন হয়ে গেলো । আমিও বড় হয়ে গেছি , গরুর ঘাস কাটতে প্রেকটিস এ বাঁধে । অবশেষে একদিন বাবা সব গরু এক সাথে বিক্রি করে দিলেন । বাঁচলাম ! B-)

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৫০
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অলীক সুখ পর্ব ৪

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৫

ছবি নেট

শরীর থেকে হৃদয় কে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে চেয়েছি
তুমি কোথায় বাস করো?
জানতে চেয়েছি বারবার
দেহে ,
না,
হৃদয়ে?
টের পাই
দুই জায়গাতে সমান উপস্থিতি তোমার।

তোমার শায়িত শরীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় জেনে নেই!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫১

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় তা জেনে নেই৷ এবার আপনাদের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ঘটনা শেয়ার করবো৷ আমি কোরিয়ান অর্থনীতি পড়েছি৷ দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১৯৭০ সালের পর থেকে প্রায় আকাশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৮

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪


আজকের গল্প হেয়ার স্টাইল ও কাগজের মোবাইল।






সেদিন সন্ধ্যার আগে বাহিরে যাব, মেয়েও বায়না ধরল সেও যাবে। তাকে বললাম চুল বেধে আসো। সে ঝটপট সুন্দর পরিপাটি করে চুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×