somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বসনিয়া গণহত্যার আদি-অন্ত

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বলকান রাজ্য Bosnia-Herzegovina(বস নিয়া-হার্জেগোভিনা),Serbia(সার্বিয়া),(Montenegro)মন্টেনিগ্রো,(Croatia)ক্রোয়েশিয়া,(Slovenia)স্লোভেনিয়া,(Macedonia)ম্যাসেডোনিয়া;
যুগোস্লাভিয়ার অন্তর্ভূক্ত বলে বিবেচিত হয়।১৯৮০ সালে যুগোস্লাভিয়ার অবিসংবাদিত নেতা Josip Broz Tito এর মৃত্যুর পরে যুগোস্লাভিয়ার বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে সুসম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে । এই প্রক্রিয়া আরো তরান্বিত হয় যখন অত্যাচারী সার্বিয়ান নেতা Slobodan Milosevic ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন।
কারণ, তিনি সার্বদের প্রাধান্য দিয়ে অন্যদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরন করতেন।১৯৯১ সালে Slovenia,Croatia,Macedonia নিজেদেরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষনা করে।
অবিসংবাদিত নেতা Josip Broz Tito এর মৃত্যুর পরে যখন সার্বরা অন্যদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় মনোযোগি ;তখন শান্তিপ্রিয় বসনিয়ান জনগন চাচ্ছিলেন জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বসনিয়ার অস্তিত্ব রক্ষা করতে।
বসনিয়ান নেতা Alija Izetbegovic নেতৃত্বে Coalition সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।১৯৯২ সালের এপ্রিল মাসে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার স্বাধীনতা
ঘোষনা করা হয়।
কিন্তু,এরই মধ্যে সার্বিদের প্রতিনিধিত্বকারী নেতা Radovan Karadzic ; Serbian Democratic Party কে সরকার থেকে সরিয়ে নেন।মূলত এটি সার্বিয়ান শাসক গোষ্ঠীর চক্রান্ত।
এরপরের কয়েক বছর সার্ব আর্মি বসনিয়ার মুসলিমদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন করে।
১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সার্ব আর্মি প্রায় এক লক্ষ বসনিয়ান মুসলিমকে হত্যা করে বা শতকরা ৮০ ভাগ বসনিয়ান নিরীহ মুসলিমকে হত্যা করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে হিটলার কর্তৃক সংঘটিত গনহত্যার পরেই অন্যতম
জঘন্য হত্যাকান্ড হচ্ছে বসনিয়ার হত্যাকান্ড। এদিকে ১৯৯২ সালের মে মাসের প্রথম দিকে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান কমিটি 'বসনিয়াকে' স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত্বি দান করে।স্বাধীনতার স্বীকৃত্বি যেন সার্বদের আরো উন্মত্ত করে তোলে।Slobodan Milosevic এর নেতৃত্বে সার্ব আর্মি বসনিয়ার 'Sarajevo' তে ব্যাপক ধংসযজ্ঞ চালায়।শুধু 'Sarajevo' ই নয় তাদের হাত থেকে বসনিয়ার Zvornik,Foca,Visegrad ও রক্ষা পায়নি।এই ধংসযজ্ঞের ফলে কয়েক হাজার বসনিয়ান উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়।
সার্ব আর্মি ১৯৯৩ সালের শেষ-অবধি বসনিয়ার তিন-চতুর্থাংশ দখল করে
নেয়।শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সার্বদের সাথে 'Croatian Bosniak Federation' চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়।
বসনিয়ার এমন সংকটময় সময়ে জাতিসংঘ অগ্যাত কারণে বসনিয়ার চলমান সম্যসায় হস্তক্ষেপ করতে অপারগতা প্রকাশ করে ।তবে তারা উদ্বাস্তুদের জন্য সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে আশা ব্যক্ত করে।
ক্রমাগত হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকায় জাতিসংঘের পক্ষে আর উটপাখির মতো মুখ লুকিয়ে থাকা সম্ভব হলো না।জাতিসংঘ বসনিয়ার নিয়ন্ত্রনে থাকা Srebrenica,Zepa,Gorazde কে নিয়ে ১৯৯৩ সালে 'নিরাপদ অঞ্চল' ঘোষনা করে।ঐ অঞ্চলের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয় UN এর অধিন 'ডাচ শান্তিরক্ষী' বাহিনীকে।
১১ জুলাই ১৯৯৫ সালে সার্ব আর্মি ; 'ডাচ শান্তিরক্ষী' বাহিনীকে তোয়াক্কা না করে হামলা করে বসে।তারা 'ডাচ শান্তিরক্ষী' বাহিনীকে 'নিরাপদ অঞ্চল' ছাড়তে বাধ্য করে।সম-সাময়িক সময়ে বেস কিছু যানবাহন এনে বসনিয়ান নারীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পাশবিক নির্যাতনে হত্যা করার জন্য।
আর আটকে পড়া যুবক থেকে বৃ্দ্ধ সবাইকে নির্বিচারে বন্দুক,কামান,বিমান থেকে গুলি ,বোমা নিহ্মেপ করে হত্যা করা হয়।সে এক নারকীয় দৃশ্য।প্রায় ৮০০০ লোক এই হত্যাকান্ডের শিকার হন।বিশ্ব বিবেক তখন মুখ থুবড়ে পড়েছিল।
Srebrenica, Zepa, Gorazde দখলে নিয়েই ক্ষান্ত হলো না ;তারা 'Sarajevo' এর জনাকীর্ন বাজারে বিনা উস্কানিতে বোমা বিস্ফোরনে বেশ কিছু নিরীহ মানুষ কে হত্যা করে।এযেন হত্যার মহড়া চলছে।
এতকিছুর পরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন দেরীতে হলেও এ সংঘাত থামাতে হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে থাকেন।
১৯৯৫ সালের আগস্ট মাসে সার্ব আর্মি সাফ জানিয়ে দেয় তারা জাতিসংঘের আর কোন প্রস্তাব মানবে না।এবার 'North Atlantic Treaty Organization' সার্ব আর্মির অবস্থানগুলো লক্ষ্য করে তিন সপ্তাহ ধরে স্থল ও আকাশ পথে আক্রমন পরিচালনা করে এবং সেই সাথে জাতিসংঘ সার্বিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে।
এর প্রেক্ষিতে 'Slobodan Milosevic' এর নেতৃত্বাধীন সার্ব আর্মি পরাস্ত হতে বাধ্য হয় এবং সেই সাথে জন্ম লাভ করে স্থায়ী স্বাধীন বসনিয়া।
পরবর্তিতে 'International Criminal Tribunal' গঠন করে Slobodan Milosevic,General Ratko সহ ১৬০ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে বিচার কাজ শুরু করা হয়।যাতে বেশ কয়েকজনকে নানা মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে এবং আরো কিছু অভিযুক্ত অপরাধীর বিচার কাজ চলছে।
তথ্যসূত্রঃ
HistoryPlace.Com
History.Com
Name of Documentary Film:-Srebrenica:A Cry From The Grave
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৪৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×