somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতীয় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডাঃ ইব্রাহিম কঠোর পরিশ্রমী, নিয়মানুবর্তী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, সত্ ব্যক্তি এবং কর্তব্যপরায়ণ ছিলেন। শিক্ষাজীবনে তার মেধা ও সাধনার মেলবন্ধনের ফলে অবজ্ঞাত ও অনগ্রসর সমাজ ও পরিবেশ থেকে তিনি উঠে এসেছিলেন সাফল্যের শিখরে। ১৯৩৮ সালে কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হতে এম বি পাস করে চাকরিতে যোগ দিয়ে মাস তিনেকের মত চক্ষু বিভাগে কাজ করার পরই কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রফেসর অব মেডিসিনের হাউজ ফিজিশিয়ানের পদটি পেয়ে যান তিনি। ডাঃ ইব্রাহিমই এই পদে প্রথম মুসলমান ডাক্তার ছিলেন। আর এই পদটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ডাঃ ইব্রাহিমের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এ সময়ে (১৯৩৮-৪৫) এবং পরবর্তী দুবছর (১৯৪৫-৪৭) কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান হিসেবে তিনি দেশব্যাপী নন্দিত প্রখ্যাত বিপ্লবী নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, অনন্ত সিং, ডিএন ধীরেন্দ্র মুখার্জী এবং সর্বভারতীয় মুসলিম নেতৃবৃন্দের মধ্যে কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শের-ই-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ ব্যক্তির চিকিত্সাসূত্রে সান্নিধ্যে আসেন। পরবর্তীতে তিনি একাধারে দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের এডিশনাল ফিজিশিয়ান এর এবং অধ্যাপনা করেন কলেজের ক্লিনিক্যাল মেডিসিন ও মেডিসিন বিভাগে (১৯৫০-১৯৬২), স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিনের অধ্যাপক ও পরে অধ্যক্ষ (১৯৬২-৬৪), করাচির জিন্নাহ স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল সেন্টারের মেডিসিনের অধ্যাপক ও পরিচালক (১৯৬৪-৭১) এর পদে।

১৯৭৫-৭৭ সাল পর্যন্ত ডাঃ মোহাম্মদ ইব্রাহিম স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ, শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনিই প্রথম তদানীন্তন সরকারের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রধান ভূমিকা পালন করেন এবং জাতীয় জনসংখ্যা কাউন্সিলকে পরিবার পরিকল্পনা নীতিমালা ও জাতীয় কার্যক্রম পরিচালনার নিয়ন্ত্রকের কার্যকর ভূমিকায় দাঁড় করান।

ডাক্তার ইব্রাহিম John Ruskin (8 February 1819–20 January 1900) এর অর্থনৈতিক দর্শন বিষয়ক প্রবন্ধাবলী Unto This Last (1860) বইটির ছাঁচে তার সমগ্র কর্মজীবন গড়ে নিয়েছিলেন, যে বইয়ে রাসিকন দেখিয়েছেন 'অর্থ ও বিত্ত মানুষের সত্যিকারের মূল্যায়ন করে না, মানুষের মূল্যায়ন হয় অন্য মানুষের তার উপর আস্থার ভিত্তিতে... একজন লোক ধনী কি নির্ধন সেটা নির্ধারিত হওয়া উচিত সেই লোকটির প্রতি অন্য কতজন লোকের আস্থা রয়েছে, সেটার ভিত্তিতে। যাকে দেখলে মানুষ আনন্দে হেসে উঠবে। মনে করবে তাদের পরম হিতৈষী চলে এসেছেন, এবার সকল সমস্যার সমাধান করে তাদের দুশ্চিন্তামুক্ত করবেন তিনি। তাকে দেখামাত্রই সবাই উল্লসিত মনে স্বতস্ফূর্তভাবে পথ ছেড়ে দাঁড়াবে। অর্থাত্ মানুষের ভালোবাসা, সহযোগিতা এবং অবস্থাই ধনী-নির্ধন পার্থক্যের মাপকাঠি।'

রাসকিনের ভাবদর্শনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (১৮৬৯-১৯৪৮) ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তো বটে বিশ্বব্যাপী মহাত্মা নামে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হন এবং খ্যাতি অর্জন করেন। গান্ধীজী ১৯০৮ সালে গুজরাটি ভাষায় সর্বোদয়া শিরোনামে Unto This Last-এর ভাবানুবাদ করেন। ডাঃ ইব্রাহিম গান্ধীজীর এই ধ্যানধারণাকে তার চিন্তা-চেতনার চৌহদ্দীতে ঠাঁই দিয়েছিলেন।

বাল্যজীবনে ডাঃ ইব্রাহিম যে নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছিলেন তা হল বড় মানুষ হওয়া, বড় লোক হওয়া নয়। এই লক্ষ্য অর্জনে তার সাধনার প্রেরণার উত্স ঐতিহ্যবাহী পরিবারের আদর্শ, এই আদর্শকে চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য করে তুলতে তিনি সদা সচেষ্ট ছিলেন। ফলে তিনি একটি অটল আনুগত্য সম্পন্ন নিবেদিতপ্রাণ কর্তব্যনিষ্ঠ কর্মীগোষ্ঠী সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন।

লেখক: সরকারের সাবেক সচিব এবং এনবিআরের চেয়ারম্যান। বর্তমানে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির চীফ কোঅর্ডিনেটর

তথ্যসূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক,৬ সেপ্টেম্বর,২০১৩ ইং
thedailystar.net
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×