somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন যেমন

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(জীবনের বাস্তব এ গল্পটি গল্পের নায়কের জীবন থেকে নেয়া সত্য ঘটনা। তার অনুমতি নিয়েই লিখলাম। শুধু নামটি কাল্পনিক)

মেঘনার পাড় ঘেষে স্পীডবোট ছুটে চলেছে সাগরকে নিয়ে। দু’ঘন্টার পথ। জীবনকে সে যেন দেখছে নতুনভাবে। কেমন এলোমেলো চিন্তা হচ্ছে সাগরের। এরকম তো হবার কথা নয়। নতুন চাকুরীতে প্রশিক্ষণ শেষে যোগদান করতে যাচ্ছে। কতই না স্বপ্নের জীবন তার। খুশি হবারই কথা। কিন্তু কষ্টকর এক অতীত ঘিরে ধরেছে তাকে। রোদঝলমলে নদীর পানির বিশালতা দেখে মুগ্ধ হচ্ছে সাগর। নিজেকই প্রশ্ন করে, মুগ্ধতার কি আছে? তার প্রয়াত বাবা ছোটবেলায় অনেক গল্প শোনাতেন। মাঝে মধ্যে দার্শনিকের মত কথাও বলতেন। সাগর যখন জন্ম নেয়, তখন নাকি ভরা পুর্নিমা। মধ্যরাতে সাগরের জন্ম দিয়ে মা চলে গেলেন অজানার দেশে। ছোটবেলায় বাবা সাগরকে বলেছিলেন, ভরা পুর্নিমায় যাদের জন্ম তার নাকি তারা নাকি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে না। হিংস্র অথবা মহামানব হিসেবে তারা পরিচিতি পায়। এ চিন্তা থেকেই ছেলের নাম রেখেছিলেন- সাগর। আহামেদুর রেজা সাগর। সাগরের মত প্রশান্ত মন ও মানবিক গুনাবলী যেন তার মধ্যে বিকশিত হয় এটাই ছিল বাবার আন্তরিক কামনা। ৩০তম বিসিএস-এ উওীর্ণ হয়ে পুলিশে যোগ দিয়েছে সাগর। আত্ননিমগ্ন হয়ে ভাবছে তার বর্ণালী অতীত নাকি কষ্টকর অতীত।
সাগরের পিতা মোঃ মকবুল হোসেন। এটি তার পৈত্রিক নাম। গ্রামে সে গোর মকবুল হিসেবে পরিচিত। এ গ্রামে কবরকে স্থানীয় ভাষায় গোর বলা হয়। দিনমজুর বাবার অনেক কিছুর অভাব থাকলেও সততার কোন অভাব ছিল না। কিন্তু গ্রামের একটি ছোট দোকানঘরের মালামাল চুরির মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। জেলও হয়েছিল ৩ বছর। ২ বছরের কিছু বেশী সময় জেল খেটে ছাড়া পাবার পর গ্রামে চোর মকবুল হিসেবে কুখ্যাতি পেল সে। জেলে থাকার সময় সংসারের হাল ধরে হিমসিম খায় সাগর। বাবার এ চুরির অভিযোগটি কোন দিনই মেনে নিতে পারেনি সে। জেলখানায় দেখা করার কোন এক ফাঁকে অত্যন্ত লজ্জিত ভঙ্গিতে সে বাবাকে জিঙ্গাসা করেছিল সে কথা। বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেছিলেন, পৃথিবীতে সব রহস্য উম্মোচন হয়না, সব কথা মানুষ বিশ্বাসও করে না। এর বেশী আর কোন কথাই জানা হয়নি সাগরের। জেল থেকে বেরিয়ে মকবুল নতুন এক কাজ খুব আনন্দ নিয়ে করে। যে কেউ মারা গেলেই সে সবার আগে কবর খুড়তে চলে যায়। শতাধিক কবর খোড়ার পর গ্রামে সে গোর মকবুল হিসেবে নতুন পরিচিত লাভ করে। এসএসসিতে অভাবনীয় সাফল্যের পর সাগর ভর্তি হয় রাজধানীর নামকরা নটরডেম কলেজে। গ্রামের কিছু সজ্জন ব্যক্তি আর্থিক সহায়তা দেয় সাগরকে। তবে যিনি সবচেয়ে বেশী সহযোগিতা করেছেন, তিনি সে গ্রামের মোড়ল শামসুদ্দিন চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স শেষ বর্ষে পরীক্ষা দেয়ার সময় শামসুদ্দিন চৌধুরীর একটি চিঠি পায় সাগর। ছোট চিঠি, লিখেছেন-
বাবা সাগর
নিজেকে এখন একা ও অসহায় মনে হয়। মৃতু্ভয় আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। তোমার কৃতজ্ঞতাবোধে আমি মুগ্ধ। একটি সত্য কথা তোমার জানা দরকার। তোমার লেখাপড়ার ব্যাপারে আমি যে আর্থিক সহযোগিতা করছি, তা আমার মহানুভবতা নয়। এটি আমার পাপের অনুশোচনার প্রয়াস। তোমার বাবা মিথ্যা অভিযোগে জেল খেটেছিল। এটি তিনি জানতেন, কিন্তু কেন নীরব ছিলেন। নিয়তি হয়তো এ রহস্য নিয়ে এখনও খেলছেন। ভালো থেকো এবং দীর্ঘায়ু হও।
ইতি
শামসুদ্দিন চৌধুরী
চিঠি পড়ে প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা শুরু হলো সাগরের। সে এ কি শুনছে? যে শামসুদ্দিন চৌধুরীকে সে দয়াবান এক পিতার আসনে বসিয়ে রেখেছেন, তার মুখে একি শুনছি। এ চিঠি কি অন্য কেউ লিখেছ ? বাক্স থেকে শামসুদ্দিন চৌধুরীর অন্য চিঠিগুলো বের করলো সাগর। নাঃ হাতের লেখার হুবুহু মিল রয়েছে। একসময় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল সাগর। তখন সন্ধ্যা। হাত মুখ ধুয়ে নিজকে সামলে নিল সাগর। ঠিক করলো আগামী সপ্তাহে শেষ পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি যাবে। ঘটনার পুর্বাপর জানবে চৌধুরী সাহেবের কাছে। কিন্তু সেটি আর হয়ে উঠেনি। দু’দিন পরই মারা গেছেন চৌধুরী সাহেব। সাগর বাড়ী গিয়ে জেনেছিল মৃত্যুর আগে চৌধুরী সাহেব অনেক খবর পাঠিয়েছিল বাবাকে। তিনি যাননি। চৌধুরী সাহেবের দাফনের সময় তিনি লাশের পাশে দাঁড়িয়ে বিড় বিড় করে কি যেন বলছিলেন। কোন এক রাতে বাবার সাথে রাতে খেতে বসেছিল সাগর। একবার মনে হয়েছিল চিঠির প্রসঙ্গ তুলবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হয়ে উঠেনি। চৌধুরী সাহেবের মৃত্যুর প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি অস্ফুট স্বরে বললেন, মৃত ব্যক্তিরা সব সমালোচনার উর্দ্ধে।
স্পীড বোট চালকের হাতের স্পর্শ পেয়ে সম্বিত ফিরে পায় সাগর। তাকিয়ে দেখে ওসি সাহেব কয়েকজন পুলিশ স্কট নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে আজকে সাগর যোগদান করবে নতুন কর্মস্থলে। চলন্ত জীপে সাগর ভাবছে,- গোর মকবুলের ব্লাড লাইন শেষ হয়েছে এক অজানা অধ্যায়ে। নিয়তি কি তাকে নিয়েও নতুন কোন খেলা খেলবে ?
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×