somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবীন্দ্রনাথের ভুল

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটু রোদ উঠেছে। বেশ কয়জন কলিগ মিলে বারান্দায় রোদ পোহাচ্ছি। শীত এবার কেমন পড়েছে এমন সব আলাপ এখন বেশ কমন। কোথায় সর্বনিম্ন হয়েছে কিংবা পরিবেশ বিপর্যয় হতে আর বেশী বাকী নেই। এসময় যে ঘটনাটা সাধারণতঃ ঘটে, কেউ একজন একেবারে বিপরীত কোন আলাপের অবতারণা করেন। আজকের সেই কেউ একজনের বিষয় ছিল, আমি রবীন্দ্রনাথের কবিতায় একটা ভুল বের করেছি।
সাধারণতঃ এরপরে আমাদের কারো জানতে চাওয়া উচিৎ ভুলটা কি। খুব কমন যে ভুলটা সবার মুখে প্রথম আসে তা হচ্ছে, ‘ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি’—ঘরের তালা না ভেঙ্গে চাবি ভাঙতে চাওয়া। এই আলোচনা শুরু করতে চাচ্ছিলাম না। তাই নিজেই বলে ফেললাম, কোনটা? ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি?
সেটা তো আগেই ধরেছি। নতুন আরেকটা ধরেছি।
এবার উৎসাহ বোধ করলাম। কোনটা?
‘দুই বিঘা জমি’। ঐ লোক, উপেন না কি নাম, বেটার তো ছিলই দুই বিঘা জমি। তো সেটাও তো জমিদার নিয়ে নিল। তাইলে তো তার আর এখন কোন সম্পত্তি নাই। এখন তো সে পথের ফকির, সর্বহারা। তারপরও কবি কয়, ঐ বেটা নাকি সারা দুনিয়া ঘুরছে। ক্যামনে ঘুরলো? ক্যাস পাইল কই?
কবিতায় যদিও বলা আছে সন্যাসী বেশে সাধুর শিশ্য হয়ে ঘুরেছে তারপরও তিনি মানতে নারাজ। তখন দুই বাংলা এক ছিল। সম্ভব নাকি পায়ে হেঁটে এতো জায়গায় ঘোরা। গল্প এরপর দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনার দিকে মোড় নিল। কে কোন দেশ ঘুরেছেন তাঁর গল্প শুরু হল। রবীন্দ্রনাথ বেচারা আপাতত কাঠগড়া থেকে মুক্তি পেলেন।
আজকে দুদকের একটা প্রেস রিলিজ তখন থেকেই টিভি চ্যানেল গুলোর স্ক্রলে দেখাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক দুদকের নেয়া ব্যাবস্থায় সন্তুষ্ট এমনটাই বলবার চেষ্টা। দেশের দুর্নীতি দমন কমিশনকেই ব্যখ্যা দিয়ে বেড়াতে হচ্ছে যে তাঁরা পদ্মা সেতুর জন্য যে অভিযোগ পত্র তৈরি করেছেন তাতে কোন দুর্নীতি হয় নি। রবীন্দ্রনাথের কবিতার ব্যবচ্ছেদ করার মত অবস্থা। শুধু যে কবিতা লিখে ছুটি পাবেন তা হবে না, প্রমাণ করতে হবে ক্যাশ ছাড়াও দুনিয়া ঘোরা যায়।
একবার এক কবির কবিতা খুব নামী এক পত্রিকায় ছাপা হয়। সবাই জিজ্ঞেস করল, কিভাবে এই অসাধ্য সাধন করলি? এতো নামী দামী পত্রিকা তোর কবিতা ছাপালো? সে উত্তরে মৃদু হেসে বলল, না ছাপিয়ে উপায় আছে? এবার আমি কবিতার সাথে একটা চিরকুট পাঠিয়েছিলাম। যদি এবারো না ছাপেন তাহলে আমার যত কবিতা আছে সবগুলো একসঙ্গে পাঠিয়ে দিব। একসঙ্গে এতগুলো কবিতা পড়ার ভয়ে সম্পাদক সাহেব হয়তো সমঝোতা করতে রাজী হয়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের অবস্থা কেন যেন সেই সম্পাদকের মত মনে হচ্ছে। যতবার চেষ্টা করছে দুর্নীতির আসল হোতাদের ধরার ততবারই তাঁরা পিছলে যাচ্ছে। লাভ যা হচ্ছে তা একরাশ বস্তা পচা রিপোর্ট পড়তে হচ্ছে। আকারে ইঙ্গিতে যতই বোঝাচ্ছে কোন লোককে ধরতে হবে ততই অন্য লোককে ধরে পেশ করা হচ্ছে। একে ছুটি দিচ্ছে তাঁকে পদত্যাগ করাচ্ছে কিন্তু দুর্নীতি কে করেছে তা বলছে না সরকার। দুদক কে দ্বায়িত্ব দিলে দু একটা পুঁটি মাছ ধরে এনে হাজির করছে আর বলছে এরাই রুই কাতলা। বেশী চাপ দিলে হয়তো দেখা যাবে আরও কোন পোনা মাছ ধরে এনেছে আর বিশাল আরেক রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছে। তখন আবার সেই রিপোর্ট পড়তে হবে।
যেকোনো রাজনৈতিক আড্ডায় অনেকেই থাকেন খুব বেশী রাজনীতি বোঝেন। এমন লোকেরা যে মতবাদ দিচ্ছেন তা হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক আসলে টাকা আটকেছে অন্য কারণে। ওরা বলেছে তোমরা আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারটা মিটমাট কর তারপর লোন পাবা। সেই ব্যাপারে একটা নেগশিয়েশান হলেই লোন দিবে। তবে এই সরকারের আমলে হবে না। ঠিকঠাক মত ইলেকশান হলে তখন লোন দিবে। আর ঝামেলার কোন ইলেকশান হলে কিছুই দিবে না।
রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন তাঁকে কেউ মুক্ত করুক। তা সে ঘরের তালা ভেঙ্গেই হোক আর চাবি ভেঙ্গেই হোক। সেই চাওয়া তো আমাদেরও। আমরাও তো চেয়ে আছি কে আমাদের সেই সব বিদেশী প্রভুদের দাসত্ব থেকে মুক্ত করবে। মুক্ত করবে আমাদের অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার থেকে। একটু মুক্ত বুদ্ধি নিয়ে একটু মুক্ত চিন্তা নিয়ে চলতে পারব। একটা দুর্নীতি মুক্ত সমাজ পাবো। কিন্তু সেই ‘কে’ এর দেখা আমরা তো পাচ্ছিই না বরং বিরক্তিকর কবি ঘাড়ে চেপে বসছে পাঁচ বছরের জন্য। ওদের অন্ততঃ একটা কবিতা না ছাপলেও সমস্যা, সারা বছর তখন কবিতা শুনতে হবে। দুজনের কবিতা একসঙ্গে আবার ছাপানো সম্ভব না। তাই একজনের টা ছাপা হয় আর আরেকজনের টা সারাবছর শুনতে হয়। শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হলে তখন? তখন আর কি, রবীন্দ্রনাথের ভুল খুঁজতে বসি।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ফাঁদ (The Middle Class Trap): স্বপ্ন না বাস্তবতা?

লিখেছেন মি. বিকেল, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৪৫



বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত কারা? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কিছু রিসার্চ এবং বিআইডিএস (BIDS) এর দেওয়া তথ্য মতে, যে পরিবারের ৪ জন সদস্য আছে এবং তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×