somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খোদার খেলা

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রমিজ উদ্দিনের বয়স ৭০ পেরিয়েছে কিছুদিন আগে। অন্যান্য অবসরপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মত তারও অখন্ড অবসর। শুধুমাত্র বিভিন্ন দিবসেই তাদের একটু কদর বাড়ে। আর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেলেও যখন দেখেন তার প্রিয় স্বাধীনতাটাকে লুন্ঠনকারীদের অনেকেই সামনের সারিতে বসে আছে তখন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননা। তাই এখন আর ঐ সব অনুষ্ঠানেও যান না খুব একটা । সারাদিন বাসার ভিতরেই থাকেন সবসময়। হ্যা একদমই যে বেকার তা বলা যাবে না। তিনি একজন নামকরা আম্পায়ার । আশেপাশের যে কোন এলাকাতেই ক্রিকেট খেলা হলে উনার ডাক পড়ে সবার আগে। তরুণদের কাছে তার সম্মান অনেক বেশি। তিনিও সানন্দেই রাজি হন সবসময়। একসময় তিনিও ক্রিকেট খেলতেন। সেটা প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের কথা । তখন ছিল পাকিস্তান আমল। পূর্ব পাকিস্তানের নামকরা এক ক্লাবে বেশ ভালই খেলতেন তিনি। ঘরোয়া অনেক খেলাতেই পশ্চিম পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ধরাসায়ীও করেছেন কখনও কখনও। শুধু তিনি কেন আরো অনেকেই ভাল খেলতেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাকিস্তান জাতীয় দলে কোন ক্রিকেটারই নেয়া হত সে সময়। দলে নেয়া তো দূরের কথা তাদেরকে কোন রকম মূল্যায়নই করা হত না। আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম থাকলেও খেলার কোন আয়োজনও করা হত না সে সময়। আমেরিকাতে সভ্য সমাজ শুরু হওয়ার আগে নিগ্রোদের সাথে সাদা চানড়ার লোকজন যে রকম কুকুরের মত আচরণ করত পশ্চিম পাকিস্তানিদের আচরণও তাদের সাথে ঠিক এ রকমই ছিল। শরীরে বাঙালি রক্ত প্রবাহিত হওয়া রমিজ উদ্দিন এগুলো সহ্য করতে পারতেন না একদমই। তিনি জানতে চাইতেন একই মানের খেলোয়ার হয়েও কেন তিনি খেলতে পারবেন না জাতীয় দলে? একই মানের স্টেডিয়াম থাকলেও তার মাঠে কেন খেলা হবে না কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ? একই দেশের বাসিন্দা হয়েও কেন তিনি হেবেন অচ্ছুত? তখন ৬৫ সালের কখা। পাকিস্তান জাতীয় দলের টিম গঠন করা হচ্ছে এবং বরাবরের মতই পূর্ব পাকিস্তান থেকে কাউকেই রাখা হয়নি দলে। এটা আর সহ্য করতে পারলেন না তিনি। তখনকার পাকিস্তানি এক কর্মকর্তার কাছে তিনি এর জবাব চাইলেন। ঘৃণ্য এক জবাব পেয়ে তিনি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। তার মনে জমে খাকা সমস্ত ক্ষোভ একসাথে প্রকাশ করলেন ঐ পাকিস্তানী কর্মকর্তার কাছে। এবং শুধুমাত্র ঐ অপরাধেই তাকে ধরে নিয়ে দুই মাস নির্যাতন করা হয়েছিল। এতে তিনি শারিরীকভাবে যতটা না আঘাত পেয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি আঘাত পেয়েছিলেন তার মনে। যে আঘাতই তাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল একাত্তরের যুদ্ধে। সে যুদ্ধ ছিল তার কাছে বাঙালিকে অবহেলা করার প্রতিশোধ নেয়ার যুদ্ধ, যে যুদ্ধ ছিল তার কাছে বাঙালির সম্মান পুনরুদ্ধারের যুদ্ধ। বাংলাদেশ স্বধীন হল আজ প্রায় চল্লিশ বছর। এই দীর্ঘ সময়টাতে পরিস্থিতি পাল্টেছে অনেক। বাংলাদেশ ক্রিকেটেরও উন্নতি হয়েছে অনেক। ইদানিং টিভি-পত্রিকায় একটা খবর দেখছেন বাংলাদেশ দল নাকি পাকিস্তান যাবে ক্রিকেট খেলার জন্য। পত্রিকায় ছবি দেখেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামাল দাড়িয়ে আছেন পাকিস্তানের এক মাঠে। তার আশেপাশে কমান্ডো বাহিনী ঘিরে রয়েছে, মাথার উপর দিয়ে সামরিক হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে নিরাপত্তার শতভাগ নিশ্চিত করার জন্য। ইদানিং নাকি বলাও হচ্ছে বাংলাদেশের খেলোয়ারদেরকে প্রেসিডেন্টের সমান নিরাপত্তাও দেয়া হবে। এই খবরগুলো পড়ে রমিজ উদ্দিন খুবই আনন্দ পান, যে আনন্দ তিনি পেয়েছিলেন একাত্তরে সেই একই আনন্দ। আশ্চর্য এক শিহরণ অনুভব করেন তিনি। তাঁর ঐ দিনটার কথা মনে হয়ে যায় দ্রুত, যেদিন পূর্ব পাকিস্তানর খেলোয়ারদের সামর্থ থাকা সত্যেও কেন দলে নেয়া হবেনা জানতে চাওয়ায় তাকে এক ঘৃণ্য জবাব দেয়া হয়েছিল। তখনই তাঁর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে দেখ পাকিস্তানীরা দেখ যে বাঙালিদের নাম তোরা অতিরিক্ত খাতায়ও রাখতি না, যে বাঙালীদের তোরা পশুর মত ঘৃণা করতি আজ সেই বাঙালীদের বিপিএল এ খেলার জন্য তোদের দেশের ক্রিকেটাররা হা করে তাকিয়ে খাকে দলে নেবার আশায়। আর সেই বাঙালি খেলোয়ারদেরী তোরা তোদের দেশে প্রেসিডেন্টের সম্মান দিয়ে খেলতে নেওয়ার আশা প্রকাশ করেও বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকিস সম্মতি পাবার আশায়।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×