somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বরেণ্য বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু

বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানী, বাংলার বিজ্ঞান চর্চার পথিকৃত স্যার জগদীশচন্দ্র বসু। বাঙালি জাতির গৌরব কালজয়ী এ বিজ্ঞানী ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর পিতার কর্মস্থল ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, তিনি বদলী হয়ে ফরিদপুরে আসেন। জগদীশের শিক্ষাজীবন শুরু হয় ফরিদপুরে। তিনি যে বাড়ীতে থাকতেন তার পাশ দিয়ে পদ্মার একটি শাখা নদী বয়ে গিয়েছিল। তিনি নদীর পাশে বসে থাকতে ভালোবাসতেন। স্থানীয় স্কুলে পড়া শেষ হলে পিতা ভগবানচন্দ্র জগদীশচন্দ্রকে কলকাতার হেয়ার স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। স্কুলের হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা হল জগদীশের। ছাত্র হিসেবে জগদীশচন্দ্র যেমন মেধাবী; পড়াশুনায় তেমনি ছিল গভীর অনুরাগ। ষোল বছর বয়সে জগদীশচন্দ্র প্রথম বিভাগে এন্ট্রাস পরীক্ষায় পাশ করে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হলেন। ১৮৭৭ সালে তিনি এফএ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করলেন। তিন বছর পর তিনি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ পাশ করলেন। ১৮৮০ সালে জগদীশচন্দ্র বিলাতের পথে যাত্রা করেন।

লন্ডনে গিয়ে ডাক্তারি পড়ার জন্য মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলেন। কিন্তু মৃতদেহ কাটাকুটির সময় প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। শেষে মেডিকেল শিক্ষা ছেড়ে তিনি ক্যামব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলেন। অবশেষে ১৮৮৪ খ্রি: তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রী নিয়ে ফিরে এলেন ভারতবর্ষে।

ভারতে ফিরে আসার আগে, ইংল্যান্ডের পোস্ট মাস্টার জেনারেল ভারতের বড় লাট লর্ড রিপনকে চিঠি লিখে দিলেন জগদীশচন্দ্র বসুকে যেন শিক্ষা বিভাগে ভালো চাকুরী দেয়া হয। সে সময় ইংরেজ সাহেবদের ধারণা ছিল ভারতীয়রা বিজ্ঞান শিক্ষায় অনুপযুক্ত। নানা অজুহাত সৃষ্টি করার পর অবশেষে অস্থায়ী অধ্যাপক পদে নিযৃুক্ত করা হল তাঁকে। এ পদে ইংরেজ অধ্যাপকরা যে বেতন পেতেন জগদীশচন্দ্র বসুর জন্য দুই-তৃতীয়াংষ বেতন নির্ধারণ করা হল। আবার অস্থায়ী বলে ঐ বেতনের অর্ধেক দেওয়া হতো।

এ ব্যবস্থায় জগদীশচন্দ্র বসুর আত্মসম্মানে ঘা লাগলো। ইংরেজ ও ভারতীয়দের মধ্যে বেতন বৈষম্য দুর করার জন্য প্রতিবাদ জানালেন। তাঁর প্রতিবাদে কেউ কর্ণপাত না করলে, তিনি স্থির করলেন কোন বেতন নেবেন না। বেতন না নিয়েই নিয়মিত ক্লাশ চালিয়ে যেতে লাগলেন।
অধ্যাপনার এক বছরের মধ্যেই জগদীশচন্দ্র তাঁর গবেষণাপত্র ইংল্যান্ডের রয়েল সোসাইটিতে পাঠালেন। অল্প দিনের মধ্যেই তা প্রকাশিত হলো। রয়েল সোসাইটির তরফে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য বৃত্তি দেয়া হলো। এছাড়া লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় তাকে উ.ঝপ. উপাধি দিলো।

ইতোমধ্যে তিনি তিন বছর বিনা পারিশ্রমিকে অধ্যাপনা করে গেছেন। তাঁর এ নীরব প্রতিবাদে শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হলো কলেজ কর্তৃপক্ষ। জগদীশচন্দ্র বসুকে শুধু যে ইংরেজ অধ্যাপকদের সমান বেতন দিতে স্বীকৃত হলো তাই নয়। তার তিন বছরের সমস্ত প্রাপ্য অর্থ মিটিয়ে দেয়া হলো। এ অর্থে সমস্ত দেনা শোধ করলেন জগদীশচন্দ্র।

গবেষণাগারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছাড়াই জগদীশচন্দ্র ইলেকট্রিক রেডিয়েশন বিষয়ে গবেষণা করতেন। তাঁর প্রথম প্রবন্ধ ছিল ‘বিদ্যুৎ উৎপাদক ইথার তরঙ্গের কম্পনের দিক পরিবর্তন”। এ প্রবন্ধটি তিনি এশিয়াটিক সোসাইটিতে পেশ করেছিলেন। এর পরের প্রবন্ধগুলো ইংল্যান্ডের ‘ইলেট্রিসিযান’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন।

এ সময় জগদীশচন্দ্র বিনা তারে বৈজ্ঞানিক তরঙ্গের মাধ্যমে শব্দকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিভাবে পাঠানো যায় সে বিষয়ে গবেষণা করেছিলেন। এছাড়া অপর যে দুইজন বিজ্ঞানী এ গবেষণায় এগিয়ে ছিলেন তারা হলেন-আমেরিকার বিজ্ঞানী লজ, ইতালীর মার্কনী। জগদীশ ছিলেন এ বিষয়ে অগ্রণী।

১৮৯৫ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রথম এ বিষয়ে পরীক্ষা করেন। কলকাতার টাউন হলে সর্বসম্মুক্ষে এ পরীক্ষা পেশ করেন। এরপরে তিনি বিনা তারে তাঁর উদ্ভাবিত যন্ত্রের সাহায্যে নিজের বাসা থেকে এক মাইল দূরে কলেজে সংকেত আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করলেন।

১৮৯৬ সালে গবেষণার জন্য ইংল্যান্ডে যাবার অনুমতি পেলেন। ডরৎবষবংং ঞবষবমৎধঢ়যু সম্মন্ধে তাঁর আবিষ্কারে ইংল্যান্ডে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে জগদীশচন্দ্র বসু লিখেছিলেন, একটি বিখ্যাত ইলেকট্রিক কোম্পানি আমার পরামর্শমত কাজ করে ডরৎবষবংং ঞবষবমৎধঢ়যু বিষয়ে প্রভূত উন্নতি করিয়াছেন। আমি আর একটি নতুন পেপার লিখিয়াছি, তাহাতে চৎধপঃরপধষ ডরৎবষবংং এর অনেক সুবিধা হইবে।

লণ্ডনে থাকার সময় জগদীশচন্দ্র অনুভব করলেন বিলাতে বিজ্ঞানীরা কত আধুনিক গবেষণাগারের সুবিধা পাচ্ছে। অথচ ভারতবর্ষে কিছুই নেই। তাঁর অনুরোধে লর্ড কেলভিন ও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা ভারত সচিবের কাছে গবেষণার কাজে সুযোগ প্রদানের জন্য অনুরোধ জানালেন। মূলত তাঁরই প্রচেষ্টায় ১৯১৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে একটি আধুনিক ল্যাবরেটরি গড়ে উঠেছে।
১৮৯৭ সালে ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এসে অধ্যাপনার কাজ শুরু করলেন, সে সাথে গবেষণা। এ সময়েই তিনি উদ্ভিদ বিষয়ক যূগান্তকারী গবেষণা আরম্ভ করেন।

১৯০০ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পদার্থবিদ্যা বিষয়ক সম্মেলনে যোগ দেবার জন্য ডাক এলো জগদীশচন্দ্রের। জুলাই মাসে জগদীশ চন্দ্র প্যারিসে পৌঁছান। এখানে তাঁর বক্তৃতার বিষয় ছিল “জীব ও জড়ের উপর বৈদ্যুতিক সাড়ার একাত্বতা”।

১৮৯৯ থেকে ১৯০৭ পর্যন্ত জগদীশচন্দ্র বসু জীব ও জড়ের উদ্দীপনায় সাড়া দেওযার ক্ষমতা নিয়ে গভীর অধ্যয়ন ও গবেষণায় ব্যাপৃত থাকেন। উদ্ভিদ জগতের সংবেদনশীলতা বিষয়ক গবেষণার পর জগদীশচন্দ্র আত্মনিয়োগ করেন প্রাণী-পদার্থবিদ্যা এবং উদ্ভিদ শরীর তত্ত্ব বিষয়ক গবেষণায়। ১৯০৮ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে তিনি অসংখ্য গবেষণা প্রবন্ধ রচনা করেন।

তৃতীয় পর্যায়ে তিনি গবেষণা শুরু করেন, “উদ্ভিদ ও প্রাণীদের দেহকলার মধ্যে তুলনামূলক গবেষণা।” এ সময়ে তিনি আবিষ্কার করেন তাঁর যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ।

১৯১৩ সালে জগদীশচন্দ্র চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। জগদীশচন্দ্রের প্রচেষ্টায় ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়য “বিজ্ঞান মন্দির”। জগদীশচন্দ্রের এ প্রতিষ্ঠান শুধু ভারতবর্ষের নয়, সমগ্র বিশ্বের একটি অন্যতম গবেষণাগার।

১৯১৬ সালে জগদীশচন্দ্র বসু ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯২০ সালে তিনি রয়্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের ফেলো নির্বাচিত হন এবং ১৯২৮ সালে ভিয়েনা একাডেমী অব সায়েন্সের করেসপন্ডিং সদস্যপদ লাভ করেন।

বয়স বাড়ার পর মাঝে মাঝে তিনি অসুস্থ থাকতেন। ১৯৩৭ সালে তিনি তখন গিরিডিতে ছিলেন। বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে কলকাতায় আসার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন ২৩ নভেম্বর সকালে গোসলের সময় অচৈতন্য হয়ে পড়ে গেলেন। অল্পক্ষণের মধ্যেই তাঁর হৃদস্পন চিরদেনর মতো স্তব্ধ হয়ে গেল। স্যার জগদীশচন্দ্র বসু একজন বাঙালি হয়ে বিজ্ঞানে যে অবদান রেখে গেছেন, তা থেকে পৃথিবীর সব মানুষ উপকৃত হচ্ছে। যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন তিনি অমর থাকবেন একজন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী এবং সর্বোপরি একজন বাঙালি হয়ে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×