এই কি আমার স্বাধীন দেশ যার সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ, চিরসমুন্নত। এই দেশ স্বাধীন করার জন্য আমাদের বীরযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন???? ভেজাল ওষুধ বিক্রি করবা তোমরা, সেই ওষুধ খেয়ে মানুষ মরবে, আরো অসুস্থ হবে; কিন্তু তোমাদের কিছু বললে, তোমাদের কাণ্ডকারখানা কেউ সিলগালা করে দিলে তোমরা তখন খুব অধিকারসচেতন হয়ে যাও, তোমাদের 'গুণধর' সহকর্মীদের নির্লজ্জের মতো সমর্থন করো, অসহায় মানুষদের জিম্মি করে ওষুধের দোকান বন্ধ করে রাখো। তোমরা কি এতটুকুও বোঝো না যে, মানুষ সবচেয়ে অসহায় থাকে যখন সে অসুস্থ হয়। শুধু সেই মানুষটাই যে একা অসহায় হয় তাই না, সে তার আশেপাশের সবাইকে নিয়ে হয়। জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে যেসব জিনিস লাগতে পারে তার অন্যতম একটা পাথেয় হল পথ্য। অথচ তোরা করলি কি আজ? সব ওষুধের দোকানপাট বন্ধ করে রাখলি!!!! তোদের অসৎ বন্ধুদের বাঁচাতে দেশের নিরীহ মানুষদের হয়রানি করলি। তোদের মধ্যম পুরুষে সম্বোধন করে লিখা শুরু করেছিলাম কিন্তু পরে দেখলাম এটা নীতিবহির্ভূত একটা কাজ হয়ে যায়। ওষুধ বিক্রি বন্ধ রেখে নজিরবিহীন ধর্মঘট
আসলে আমিই একটা নির্বোধ, অসহায় গাধা। কেন ভুলে যাচ্ছি যে-একটা দেশ যখন নীতিহীন কিছু মানুষদের দখলে চলে যায় তখন তার দেহে ক্যান্সার ধরা পড়ে। মানুষ কারণ ছাড়া মানুষকে হয়রানি করে। বিশ্বজিৎ দাসের মতো নিরীহ মানুষ অকালে চলে যাবে। ঘৃণ্য নরপশুদের বাঁচাতে ডাকা অন্যায় হরতালে গরিব চালক দগ্ধ হবে, তার প্রায় পথে বসা পরিবার পুরো পথে বসে যাবে। একরাশ স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠা সেই মফস্বলের মেয়েটি কিছু বিপথগামীর অন্যায় লালসার শিকার হবে, সমাজের কোথাও আশ্রয় না পেয়ে বোকার মতো নিজে নিজেই এই জগত সংসার ছেড়ে চলে যাবে। মাদকের সর্বনাশা নেশায় মা-বাবার মতো অকৃত্রিম বন্ধুকে নৃশংসভাবে শেষ করে দিবে কুলাঙ্গার সন্তান। সব জায়গায় আজ অনিয়ম, দুর্নীতির ছড়াছড়ি। সেখানে তোরা ভেজালের কারবার করবি, তোদের সেই কারবারে কেউ বাগড়া বাধালে একজোট হয়ে নির্লজ্জ প্রতিবাদ করবি এটা তো খুব স্বাভাবিক ভাবনা। কি আওয়ামী লীগ, কি বিএনপি, কি বাকি অন্যরা- কেউ আজ আর দেশ ও দশের কথা চিন্তা করে না। সবাই আছে আজ যার যার ধান্দায়। ভেজাল ওষুধ বিক্রেতাদের মুক্তির আশ্বাস
আজ আমি আজিজ সুপার মার্কেটে গিয়েছিলাম আমার ডিপার্টমেন্টের এক স্যারের জন্য একটা গিফট কিনতে। উনি আজ পিএইচডি করার জন্য ইংল্যান্ড চলে যাবেন। এখন হয়তো আকাশমাঝে গন্তব্যপানে। শাহবাগ গিয়ে দেখলাম সব ওষুধের দোকান বন্ধ। প্রথমে ভাবলাম আজ মঙ্গলবার হয়তো। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। কিন্তু পরক্ষনেই বুঝলাম যে আজ এই অঞ্চলের সাপ্তাহিক বন্ধ না, আর সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও এইসব ফার্মেসির দোকান কয়েকটা খোলা থাকে। আমি একদিন এখানকারই এক ওষুধ বিক্রেতাকে প্রশ্ন করেছিলাম যে, আজ বন্ধের দিনও দোকান খোলা রেখেছেন কেন? উনি উত্তরে বলেছিলেন, অসুখবিসুখ কি বন্ধ মেনে আসে, ভাই? সেই আপনিই তো আজ আপনার কথার খেলাপ করলেন। কি করলেন না? আজ কি বাংলাদেশে কেউ অসুস্থ হয়ে ওষুধের জন্য ছোটাছুটি করেনি? আজ কি কারো অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগেনি? আজ কি কোন মেয়ের মা হবার সেই সৌভাগ্যমণ্ডিত দিনটি ছিল না? আজ কি কোন ক্যান্সার রোগীর অতি গুরুত্বপূর্ণ কেমোথেরাপির দিনটি ছিল না? কি মনে হয়? আমার তো মনে হয় 'ছিল না এসবের কিছুই আজ'। ওষুধ যোগাড়ে দিশেহারা
১৯৯৭ সালে খান আতাউর রহমান এখন অনেক রাত নামের এক মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। মুভিটির শেষদৃশ্যে পাগল হয়ে যাওয়া ফারুক একটা কথা বলতে বলতে পাগলাগারদ থেকে বেরিয়ে যায়---- আসাদ, শাব্বির, কামাল, তোরা কোথায়? এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি, এখনো ভোর হয়নি, এখনো অনেক রাত। রতন, শহীদ, আসাদ, শাব্বির, কামাল, তোরা কোথায়? কোথায় হারিয়ে গেলি? এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি, এখনো ভোর হয়নি, এখনো অনেক রাত। এখনো অনেক রাত।
আসলেই এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি, এখনো কিছু বাকি আছে হয়তো। এখনো অনেক রাত।
ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:১৪