somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইন্টারনটে স্বাধীনতার লড়াকু সনৈকি

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অ্যারন সোয়ার্স্টজ| যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিবান্ধব তরুণদের একজন। একাধারে কম্পিউটার প্রোগ্রামার, লেখক, উদ্যোক্তা, রাজনৈতিক সম্বন্বয়কারী এবং ইন্টারনেট জগতের অ্যাকটিভিস্ট হিসেবে অ্যারন বিশেষ পরিচিত।

তবে অ্যারনের সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি ইন্টারনেট জগতের আরএসএসফিডের জনক। তিনি একই সঙ্গে ইন্টারনেটে তথ্য অবাধ হওয়ার আন্দোলনের মানুষ। ইন্টারনেটে স্বাধীনতা নিশ্চিত করায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে অ্যারন।

অনলাইনে ইন্টারনেট স্বাধীনতার অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে অ্যারনের নাম চলে আসে সবার আগে। ইন্টারনেটের জনক টিম বার্নাস লিয়ের সামাজিক আন্দোলন হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যেতে অ্যারনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

থ্রি ডব্লিউয়ের (ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব) প্রবক্তা টিম বার্নাস সব সময়ই ইন্টারনেটে অবাধ ব্যবহারে গুরুত্ব দিতেন। তবে শুরু থেকেই ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রণ করা যে পাঁয়তাড়া চলছিল তাকে এগিয়ে নিতে অ্যারন ছিল অন্যতম একজন উদ্যোক্তা।

অ্যারনের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে। বাবা রবার্ট সফটওয়্যারের ব্যবসা করতেন। তখন সবে বিশ্বব্যাপী কম্পিউটার জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবের যুগ। বাবার পাশে থেকেই কম্পিউটারে দীক্ষা নেন অ্যারন। ছোটবেলা থেকে এ যন্ত্রকে তিনি ভালোবাসতেন পরিবারের অন্যসব মানুষগুলোর মতোই।

সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ছাড়াও কম্পিউটার কালচার নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেছেন অ্যারেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি আর্টসডিজিটা অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন। তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি অলাভজনক ওয়েবসাইট তৈরির করাই ছিল প্রতিযোগিতার বিষয়। এতে পুরস্কার ছিল বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সময় কাটানো।

মাত্র ১৪ বছর বয়সেই তিনি নেটওয়ার্কিং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। তাদের সঙ্গে বসেই তিনি আরএসএসফিডের কাজ শুরু করেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন অ্যারন।

যদিও মেধার কোনো কমতি ছিল না অ্যারনের। প্রমাণ মেলে তিনি যখন বিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পান। তবে মাত্র এক বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের প্রথম সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ইনফোগামি’। এটি বন্ধুরা মিলেই প্রতিষ্ঠা করে।

নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করতে থাকেন অ্যারন এবং তার বন্ধুরা। এটি মূলত উইকি প্ল্যাটফর্মে কাজ করতো। পরে তারা ওপেন লাইব্রেরি তৈরিতেও কাজ করে। কিন্তু অ্যারন এখানেও খুব স্বস্তিতে ছিলেন না। তিনি নতুন কিছু শুরু করতে চাইতেন। বলা হয়, আর্থিক সমস্যার কারণেই নিজেদের উদ্যোককে এগিয়ে নিতে পারছিল না ইনফোগামি।

অ্যারন তখন আরও একটি প্রতিষ্ঠান দেওয়ার চেষ্টা করেন। রেডিট নামে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে ফেলেন। শুরুতে কিছুটা ধকল গেলেও রেডিট সাইটে ভিজিটরের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে ইনফোগামি এবং রেডিট একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক উত্তেজিত ছিলেন অ্যারন। এক বছরের মাথায় জনপ্রিয় ‘উইয়ার্ড ম্যাগাজিন’ এ সাইটটি কিনে নেয়। অ্যারনকে প্রধান রেখেই সান ফ্রান্সিস্কোতে নব উদ্যোগে যাত্রা করে রেডিট।

কিন্তু নতুন অফিসে প্রচন্ড হতাশ ছিলেন তিনি। নিজের মন মতো কিছুই করার সুযোগ তিনি পাচ্ছিলেন না। মালিক হয়ে উইয়ার্ড ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ অ্যারনের সব ভাবনাগুলোর গুরুত্ব দিচ্ছিল না। হুট করেই অ্যারনকে মূল পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়।

হতাশা, ক্ষোভ, দুঃখ ও অসম্ভব যন্ত্রণা বুকে নিয়ে নিজের তৈরি আইডিয়া ও প্রতিষ্ঠানকে থেকে বিদায় নেন অ্যারন। প্রচন্ড হতাশা নিয়ে ২০০৭ সালে ‘জটিট্ট’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ শুরু করেন। কিন্তু তবুও মনের বেদনা নিয়েই তিনি পথ চলেছেন। দীর্ঘ সময় পর ২০১০-২০১১ সালের বিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইথিকস বিভাগের ফেলো হিসেবে দায়িত্ব নেন।

অ্যারন একইসঙ্গে ওয়েবডট পাই অথবা ওয়েব অ্যাপলিক্যাশন ফ্রেমওয়ার্কের ক্রিয়েটর এবং ডিমান্ড প্রোগ্রেসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ইন্টারনেটে তথ্য অবাধে ছড়িয়ে যাওয়ার পক্ষে এ সংগঠনের মাধ্যমেই আন্দোলন শুরু করেন অ্যারন। শুরু থেকেই ইন্টারনেটে মানুষের বাক রুখে দেওয়ার বিপক্ষে অ্যারন ছিলেন সোচ্চার।

বিশেষ করে ‘স্টপ অনলাইন প্রাইভেসি অ্যাক্ট’ এর বিপক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন অ্যারন। তিনি এক সম্মেলনে জানান, এ অ্যাক্ট মানুষের কথা বলার সব অধিকার রুদ্ধ করে দেবে। তার আগেই এ অ্যাক্টকে আমাদেরই হত্যা করতে হবে। এ আইন সম্পর্কে অনেকে অনেক কিছু বলবে। বিশেষ করে রাজনীতিবিদেরা এ আইনের পক্ষে তালিও বাজাবেন।

কিন্তু একটি সত্য কথা বলি, এ আইন আমাদের মুক্ত নয়, বরং অবরুদ্ধ করে ফেলবে। নিজেদের রক্ষার জন্যই লড়তে হবে। কারণ আমি মনে করি, আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। আর এ যুদ্ধে আমরা জয়ী হবো।

কারণ প্রতিটি মানুষ নিজেদের নায়ক হিসেবে দেখতে চায়। এ যুদ্ধে সবাই নায়ক। যে নায়কেরা অন্যরকম একটি গল্প রচনা করতে সক্ষম। নিজের স্বাধীনতা রক্ষায় সবাই এক হওয়া প্রায়োজন।

এমনই ছিলেন অ্যারন সোয়ার্স্টজ। মাত্র ২৬ বছর বয়সের এ প্রতিভা মানুষ তৈরি আইনের ফাঁদে পড়ে হতাশায় ক্ষোভে অবশেষে ১১ জানুয়ারি (শুক্রবার) আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন।

পুলিশ যেন তার পিছুই ছাড়ছিল না। অপরাধ ছিল এমআইটির নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে লক্ষাধিক গবেষণাপত্র অনলাইনে উন্মুক্ত করে দেন অ্যারন।

সঙ্গে সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিভাগ এবং এমআইটির চোখে অপরাধী বনে যান অ্যারন। যে সাইট থেকে অ্যারন গবেষণা পত্রগুলো নিয়েছিলেন, সে ওয়েবসাইটের কর্তৃপক্ষ মামলা তুলে নিলেও যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিভাগ মামলা সচল রাখে।

মাসের পর মাস আদালতে হাজিরা দিতে দিতে অ্যারন চরম আর্থিক চাপে পড়ে। অপরাধে ৫০ বছর জেলে কাটাবার ভয় ও ছিল।

এ সময় বেঁচে থাকার কোনো উপায় খুঁজে পাননি অ্যারন। সবাইকে কাঁদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কালোর আইনকে তুচ্ছ ঘোষণা করেই বড্ড অভিমানে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন অ্যারন সোয়ার্স্টজ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অজ্ঞ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫২


ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×