somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিন্দি সিরিয়াল

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘আব্বু’
সুর করে ডাকা। হালকা কান্নার লক্ষণ। মনে হচ্ছে কান্না শুরু দ্বার প্রান্তে। যদি আমার কাছ থেকেও ভালো কোন আশার বাণী না পায় তবে হয়তো অঝোর ধারা শুরু হবে। লক্ষণ ভালো না। পুত্র দ্বয়ের বড় জনের গলার আওয়াজ। এবং যে এসেছে সে সম্ভবতঃ অন্য জনের নামে নালিশ করতে এসেছে। মারামারি কিংবা ঝগড়া। আর এখন আমাকে বিচার করতে হবে। ল্যাপটপে কাজ করছিলাম। চোখ তুলে তাকালাম।
যা ভেবেছি তা সম্ভবতঃ না। কারণ দুই পুত্র সম্মিলিত ভাবে এসেছে। একজনের পাশে আরেকজন। কিছুক্ষণ আগে পারস্পরিক ঝগড়া হয়েছে এমন মনে হচ্ছে না। অর্থাৎ এঁকে অন্যের নামে নালিশ করতে আসেনি। নালিশ অন্য। এবং ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে নালিশটা সম্ভবতঃ আমি বুঝতেও পেরেছি। বলাই বাহুল্য সে নালিশের কোন সুরাহা আমি করতে পারবো না। সরাসরি তো আর নিজের অথর্ব তা স্বীকার করা যায় না। এখন শুরু হবে নিজের দুর্বলতা ঢাকবার অপচেস্টা। শুরুতেই তাই জিজ্ঞেস করলাম
‘কি?’
‘আম্মু দিচ্ছে না।‘
একবার ভাবলাম যে বলি, এতে কান্না কাটির কি আছে। আমাকে কি কোনদিন কাঁদতে দেখেছিস? বললাম না। ওদের কাছে এখনও তাঁদের পিতা কিছুটা হলেও বীর পুরুষ। ভুলটা ভাঙ্গাতে চাইলাম না। তবে সমস্যার একমাত্র সমাধান যে কোন একজনের ত্যাগ স্বীকার। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে না সহধর্মিণী ত্যাগের মুডে আছে তাই পুত্র দ্বয়ের ত্যাগ স্বীকারই হতে পারে একমাত্র সমাধান। আর সেই পথে চলবার উপায় একটাই, পুত্র দ্বয় কে বোঝানো। শুরু করলাম চেষ্টা। জানাতে চাইলাম,
--কোন সিরিয়াল?
নামটা জানাল। এরপর নির্ণায়ক প্রশ্নটি করলাম।
--এটা কি আম্মুর ফেভারিট?
দারুণ করুণ মুখ করে মাথা নাড়ল। অর্থাৎ ‘হ্যাঁ’। এখন আমার কাজ পুত্র দ্বয়কে যথাসম্ভব ভদ্র ভাষায় নিজের অপারগতা প্রকাশ করা। তাঁর চেয়েও জরুরী, পরিস্থিতি মেনে নিতে শেখানো। আমি যেমনটা শিখে গেছি। কপালে আর কোন দিন টেলিভিশান দেখা নেই, এই সত্য যত দ্রুত মেনে নেবে ততই মঙ্গল। ‘বামন হয়ে চাঁদ ধরার চেষ্টা’ যত দ্রুত থামে ততই মঙ্গল। বললাম,
--তাহলে আমি কি করব?
--তুমি একবার বল।
পিতাকে বীরপুরুষ মনে করার ওদের ধারনাটা এবার বোধহয় ভেঙ্গে দেয়ার সময় হয়েছে। মনে প্রশ্ন জাগলো, সত্যটি কি ওরা এতদিনে জেনে গেছে? তথ্যটি জানবার জন্য এবার সবচেয়ে করুণ প্রশ্নটি করলাম।
--তোমার কি মনে হয় আমি বললে আম্মু শুনবে?
দুজনই একমত। একসঙ্গে মাথা নাড়িয়ে জানাল ‘না’।
এবার বোঝানোর একটা ক্ষুদ্র চেষ্টা নিলাম। ‘আম্মু সারাদিন তোমাদের জন্য রান্না বান্না করেছে। সারাদিন তো তোমাদের জন্যই এতো কষ্ট করেছে। এখন একটু টিভি দেখতে দিবা না?’
‘তাহলে আমরা কখন দেখব?’
ভয়ংকর এবং খুবই যুক্তি যুক্ত প্রশ্ন। সকালে ওদের স্কুল। এরপরে বাসায় ফিরে কিছু খাওয়া দাওয়া করেই এরপরে কোচিং। সেখানে বেশ কিছু পড়ানো হয় আর কিছু ‘হোম ওয়ার্ক’ আর স্কুলের ‘হোম ওয়ার্ক’ তো আছেই। সঙ্গে আছে ক্লাস টেস্ট। টেস্ট মানেই তাঁর আগে পুরনো সব পড়া একসঙ্গে পড়তে বসা। এতসব সেরে তিভি দেখবার সময় তো পাওয়ার কথা না। বুদ্ধিটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম। এদের টিভি দেখা আটকানোর একটাই রাস্তা, ‘পড়াশোনা’। সেই অব্যর্থ ওষুধ ব্যবহারের ক্ষীণ চেষ্টা করলাম। জানতে চাইলাম, ‘ক্লাসের সব পড়াশোনা শেষ হয়েছে?’
‘সব শেষ করেই তো দেখতে চাচ্ছি।‘
শেষ অস্ত্রও হাতছাড়া। এই বয়সে পড়াশোনার যে বিশাল চাপ। বই এর যে বিশাল ওজন, তারপরও সেসব শেষ করতে হয়। বহু চেষ্টার পরেও সব কিছু সারতে সারতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়। এরপরে বিপুল আশা নিয়ে যখন টিভি রুমে যায় তখনই জানতে পারে শুরু হয়ে গেছে ‘হট কেক’ ‘পছন্দের’ ‘ঝগড়া বহুল’ ‘বহু প্রতীক্ষিত’ এসব হিন্দি সিরিয়াল। মধ্যবিত্ত বাঙালি রমণীর জীবনের অন্যতম চাহিদা, অন্যতম বিনোদন।
মাঝে মাঝে পুত্রদ্বয় নিজেরাও দেখে না এমন না। তখন গৃহ শান্তিতে বাঁধা পরে না। প্রায় প্রতিটি সিরিয়ালের ঘটনা কিংবা চরিত্রের নাম মুখস্থ। এরপরও তাঁদের নিজস্ব কিছু কার্টুন প্রোগ্রাম আছে। যেগুলো মিস হওয়া তাঁদের জন্য পৃথিবীর অন্যতম কষ্টের একটি ঘটনা। ওদের জন্য কষ্ট পেলেও খুব বেশী কিছু করার নেই। এর আগে এক দিন বলতে যেয়ে উত্তর পেয়েছিলাম, ‘এখন ডিস্টার্ব করো না, শয়তানটা এখনই ধরা পড়বে।‘
পিতার অক্ষমতা যদিও বুঝে গেছে তারপরও কেন যে ক্ষীণ আশা নিয়ে বুক বাঁধছে সেটাও যত দ্রুত মিলিয়ে যাবে ততোই মঙ্গল। সেটা বোঝানোর সময়ও বোধকরি হয়ে গেছে। সৎ স্বীকারক্তিটি এবার করলাম, ‘
--জানোই তো আমি বললেও রিমোট দিবে না।
কাঁদো কাঁদো গলায় করুণ কণ্ঠে জানতে চাইলো,
--আমরা এখন কি করব?
কোটি টাকা দামের প্রশ্ন। এবং এর কোন উত্তর নেই। তাঁর চেয়েও জরুরী ব্যাপার হচ্ছে, কথাটা ওদেরও বোঝা উচিৎ। বললাম, ‘
আমিই বা কি করব?
একই সঙ্গে সুন্দর এবং ভয়ংকর একটি সমাধান দিল।
--আরেকটা টিভি কিনো।

৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×