somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ফোটোগ্রাফী-১৫

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ফোটোগ্রাফী নিয়ে কিছু কথা বলব। গত তিন মাস ফোটোগ্রাফী নিয়ে কিছুই লিখিনি। প্রথমে একটা কথা বলে রাখি- আমি মনে করি, বই পড়ে-পড়ে ফোটোগ্রাফী শেখা সম্ভব না। যেমন আপনি বই পড়ে সাঁতার শিখতে পারবেন না। সাঁতার শেখার জন্য আপনাকে পানিতে নামতে হবে। আর ফোটোগ্রাফী শেখার জন্য ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে আপনাকে মাঠে ঘাটে নেমে পড়তে হবে। প্রচুর ছবি তুলতে হবে। অন্যের ছবি দেখতে হবে। কথায় বলে- 'গাইতে গাইতে গায়েন' ঠিক ছবি তুলতে তুলতে আপনি ভালো একজন ফোটোগ্রাফার হয়ে যাবেন।

আজ একজন পরিচিত ইমামের সাথে আমার দেখা মালিবাগ মোড়ে। এই ইমাম আমাকে ছোটবেলা থেকে চিনেন। অনেক বছর পর আজ দেখা। অনেক কথার পর ইমাম জানতে চাইলেন- আমি এখন কি করি । আমি বললাম- ফোটোগ্রাফী। ইমাম বলল- অটোগ্রাফী আবার কি জিনিস! আমি বললাম অটোগ্রাফী না ফোটোগ্রাফী। ছবি তুলি। ইমাম প্রচন্ড অবাক হয়ে বললেন- ছবি তোলা বন্ধ করো, এই কাজ হারাম। একদম জাহান্নামে যাবে। তারপর সে আরবী'তে কি-কি যেন বলল। আমি বললাম- আপনি যদি হজ্বে যেতে চান, তখন আপনার ছবি তুলতে হবে। পত্রিকাতে ছবি লাগে- আমরা যদি ছবি না তুলি- তাহলে কিভাবে হবে? ইমামের শেষ কথা হলো- অন্য কাজ করো, কিন্তু ছবি তোলা বাদ দিয়ে।

ইদানিং আমার কাছে অনেক ছেলে-পেলে আসে। তারা নতুন ক্যামেরা কিনেছে বা কিনবে। তারা অনেক রকম প্রশ্ন করে। আমি খুব বুঝদার মানূষের মত তাদের প্রশ্ন শুনি। তারা ভাবে আমি অনেক বড় ফোটোগ্রাফার। ফোটোগ্রাফী'র সব বিষয় খুব ভালো জানি। সত্যি কথা বলতে- ফোটোগ্রাফী'তে আমি এখনও শিশু। গত তিন বছরেও একটা অসাধারন ছবি তুলতে পারিনি। আমার অভিজ্ঞতা বলতে অল্প কিছুদিন যুগান্তর আর সমকাল পত্রিকাতে কাজ করেছি। এর আগে এক বছর অনলাইন পত্রিকাতে কাজ করেছি। পত্রিকাতে কাজ বাদ দিয়েছি- এখন সব মনোযোগ দিয়েছি ওয়েডিং ফোটোগ্রাফী'তে। যারা নতুন ক্যামেরা কিনে আমার কাছে আসে- সবার প্রথমে আমি তাদেরকে ক্যামেরা কিভাবে ধরতে হয়, সেটা শিখাই।

ইদানিং অনেক ছেলে পেলে ফোটোগ্রাফী নিয়ে খুব বেশী লাফা লাফি করছে! হেং করেংগা- তেং করেংগা টাইপ। আসলে এটা ওদের বয়সের দোষ। কিছুদিন এমন লাফালাফি করে একদম চুপ হয়ে যাবে। ক্যামেরার আগে অনেকে গিটার নিয়ে খুব লাফালাফি করত। ছোটবেলা সব বাচ্চা'রাই ক্রিকেট খেলে- কয়জন আর জাতীয় দলে চান্স পায়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবাই চলতে পারে না। তবে যারা ভালো কিছু করতে চায়- তাদের আমি খুব সম্মান করি। একদিন একছেলে এসে আমাকে বলল- ভাইয়া ক্যামেরা কিনব, কোন ক্যামেরাটা ভালো হবে? 'কোন ক্যামেরা কিনব'- খুবই বোকা'র মত একটা প্রশ্ন। একজন দক্ষ ফোটোগ্রাফারের জন্য ক্যামেরা কোনো সমস্যা না, সে মোবাইল দিয়ে দারুন ছবি তুলতে পারেন। দামী ক্যামেরা হলেই- যে আপনি ভালো ছবি তুলতে পারবেন- এই রকম ধারনা মন থেকে মুছে ফেলাই উত্তম ।

একদিন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে ছবি তুলতে গেলাম। 'কনে' আমাকে বলল- ভাইয়া- এমন ভাবে ছবি তুলবেন, যেন আমাকে চিকন লাগে দেখতে। বিয়ের অনুষ্ঠান গুলোতে বেশীর ভাগ মেয়েই ছবি তোলার আগে বলে- ছবি যেন সুন্দর হয়। তখন আমি মনে মনে বলি- মুখে এক গাদা ময়দা মেখে সুন্দর হতে পারিস নাই- তাহলে ক্যামেরায় কি করে সুন্দর করি। একদিন এক বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তুলছি- এমন সময় এক আন্টি এসে ফিস ফিস করে বললেন, আমার ভাইয়ের মেয়ের কয়েকটা ছবি তুলে দাও তো। বিয়ের জন্য। ছবিটা যেন সুন্দর হয় । মজার ব্যাপার হলো- আন্টির ভাইয়ের মেয়ের বেশ কয়েকটা ছবি তুলে দিয়েছিলাম। সেই ছবি বরপক্ষ দেখে খুব পছন্দ করে ফেলে। মেয়েটিকে বিয়ে করে কানাডা নিয়ে যায়।

একবার এক শিল্পপতি'র মেয়ের বিয়েতে ছবি তুতলছি- কম করে হলেও তিন হাজার মানুষ এসেছে- বিয়েতে। স্টেজে দুই পরিবারের সবাই উঠেছে। গ্রুপ ছবি তোলা হবে। বুড়ো দাদা, নানীকে কোলে করে স্টেজে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে একজন মন্ত্রী আছেন। সরকারী দলের মন্ত্রী। সবাই রেডী। ঠিক তখন আমার ক্যামেরাটি নষ্ট হয়ে গেল । কিছুতেই কাজ করছে না। স্টেজে সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আরেকবার- এক বিয়ের অনুষ্ঠানে আমার ছবি তোলার কথা। ছবি তুলতে সময় মতই গেলাম । কিন্তু হঠাত করে আমার প্রেশার উঠে গেল । গাড় ব্যাথা করতে লাগল। চোখে সব কিছু ঝাপসা দেখতে লাগলাম- সেই অনুষ্ঠানে- কথা ছিল তিন শো ছবি তুলে তাদের দিতে হবে- আমি তাদের মাত্র পনের টা ছবি তুলে দেই। তারা তো আমার সাথে অনেক রাগারাগি- আমাকে জেলে দিবে, আমি ফোটোগ্রাফী কি করে করি দেখে নিবে, ইত্যাদি ইত্যাদি... ।

ইদানিং ফোটোগ্রাফী'তে আমার অনেক নাম ডাক হয়েছে। আমার বাসার আশে পাশে সবাই আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। আমার মেয়ের জন্মদিন, আমার ছেলের বিয়ে, অমু্ক অনুষ্ঠান, অমুক উদ্ববোধন ইত্যাদি ইত্যাদি... । অনেক সময় মন না চাইলেও নানান অনুষ্ঠানে যেতে হয়। অনেক বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফিরতে ফিরতে গভীর রাত হয়ে যায়। বেশ কয়েকবার ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছি। নানান অনুষ্ঠানে ছবি তুলি, কিন্তু নিজের জন্য ছবি তোলা হয় না। ঠিক করেছি এবার থেকে তিন মাস পর-পর নিজের জন্য ছবি তুলব। ক্যামেরা নিয়ে বের হয়ে যাব- অচেনা কোনো গ্রামে। নিজের ইচ্ছা মত ছবি তুলব। কারো ইচ্ছায় ছবি তোলাতে অনেক যন্ত্রনা। আমি সবার আগে একজন ফোটোগ্রাফার কিভাবে তার ক্যামেরা ধরেন- তা খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করি। সত্যি কথা বলতে- ইদানিংকার অনেক ছেলে পিলে ঠিক ভাবে ক্যামেরাই ধরতে জানে না।

যারা ভালো ছবি তুলতে চান- তাদের জন্যন কিছু টিপস দিলাম। ছবি তোলাটা শুধুমাত্র ক্লিক করলাম আর ছবি উঠল এমন কিছু না এটা মনে হয় আর বলার দরকার নাই। মনে তীব্র ইচ্ছা রাখুন- আমি ভালো ছবি, তুলতে চাই। মন থেকে হিংসা বিদ্বেষ বাদ দিন। লোভী হবেন না। হাসি খুশি থাকুন। দিনের বেলায় manual setting বুঝতে সমস্যা হলে বা সময় কম পেলে camera এর P option টা ব্যবহার করুন ।আলো যাতে সবার চেহারায় একইভাবে পরে তার প্রতি লক্ষ রাখতে পারেন। বিশেষ করে গ্রুপ ছবি তোলার সময়- আলোর দিকে বেশী লক্ষ্য রাখবেন। প্রতিদিন প্রচুর ছবি তুলতে থাকুন। ছবি তুলতে তুলতে একদিন ভাল ফটোগ্রাফার হয়ে যাবেন । ফটোগ্রাফাররা বিভিন্ন জায়গায় ছবিতুলতে বেশ কিছু ঝামেলায় পড়ে। অনেকে প্রশ্ন বিদ্ধ করে,ছবি তোলা নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হয়নি এমন ফটোগ্রাফার নেই বললেই চলে।
মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার সময় মোবাইলটিকে কোন প্রকার নাড়াচাড়া করবেন না তাহলে ছবি ভালো আসবেনা ।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×