somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলোচিত সমালোচিত ইউসুফ রাজা গিলানি

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটু দেরিই হয়ে গেছে। হোক তবু আমাদের জানতে হবে। বেশ কিছু কারনেই পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ আমাদের জন্য আবশ্যিক। প্রথমত, পরমাণু শক্তিধর এবং বৃহত্তম মুসলিম একটি রাষ্ট্র হচ্ছে পাকিস্তান। দ্বিতীয়ত, স্বাধীনতার ঠিকাদারি গ্রহনকারী এদেশের বাচাল শাসকবর্গ কারণে-অকারণে পাকিস্তান প্রসঙ্গের অপব্যাখ্যা ও কটূক্তি করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন, বাস্তবতা জানাটা তাই যথেষ্ট প্রয়োজন। তৃতীয়ত, পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট যে কায়দায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গিলানিকে অব্যাহতি দিলো, তাতে যে কারো গিলানির প্রতি নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক, সত্য পরখ করাটা তাই খুব দরকারি।

যে কারণে গিলানি অযোগ্য
সামরিক শাসন পাকিস্তানের নিয়তি। ৬৫ বছরের পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা প্রায় সামরিক শাসন দিয়েই মোড়া। কখনো সখনো স্বপ্নে দেশটি গণতন্ত্রের সন্ধান পেলেও নিমিষে তা হারিয়ে গেছে। স্থায়ী হতে পারেনি। আশার কথা, ২০০৮ থেকে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচে’ দীর্ঘমেয়াদী গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায়। সম্প্রতি দেশটির সুপ্রিমকোর্ট প্রধানমন্ত্রী গিলানিকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। গণতন্ত্রের কলিকাল না পেরোতেই এমন ধাক্কা পাকিস্তান সামলে ওঠতে পারবে কিনা, পাকিস্তানের জন্য এটা কতোটুকুই বা সুফল বয়ে আনবে- সে বিতর্কে আমি জড়াবো না। তবে কোর্ট যা করেছে তা নিশ্চিত বাড়াবাড়ি। যা আদৌ কাম্য ছিল না।
প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে সুইজারল্যান্ড আদালতে দায়ের হওয়া অর্থ পাচার মামলা ফের চালু করতে সে দেশের সরকারকে চিঠি লিখতে প্রধানমন্ত্রী গিলানিকে পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট নির্দেশনা প্রদান করেছিল। কিন্তু গিলানি সেটা পালন করেনি। গত ২৬ এপ্রিল আদালত অবমাননার খড়গ তার উপর নেমে আসে। সেদিন আদালত তাকে ৩০ সেকেন্ডের দণ্ডাদেশও দেন। পরবর্তীতে স্পীকার ড. ফাহমিদা মির্জা প্রধানমন্ত্রীকে অযোগ্য ঘোষণা করবেন না বলে রুলিং দেন। এদিকে গিলানিও আর কোনো আপিল করেননি। সুতরাং ফলাফল যা হবার তাই হয়। রুলিংয়ের বিরুদ্ধে বিরোধী দল আদালতে পিটিশন দায়ের করে। পরে সুপ্রিমকোর্ট তাকে প্রধানমন্ত্রী ও পার্লামেন্ট সদস্য পদে অযোগ্য ঘোষণা করেন।

কোর্ট কোনো রায় দিলেই হারাম জিনিস হালাল হয়ে যায় কিনা, ফতোয়া প্রদান নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে কিনা, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া থেকে মুজিবে স্থানান্তরিত হবার সুযোগ আছে কিনা, গণমানুষের প্রাণের দাবি তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল হবে কিনা, বৈধভাবে মালিক হওয়া এবং এতিম বিধবাদের জন্য বরাদ্দকৃত খালেদা জিয়ার ৪০ বছরের বসবাসকৃত বাড়িটি অবৈধ হওয়াটা আমরা মেনে নিতে পারি কিনা- সব দেশেই এসব প্রশ্ন করার অবকাশ থাকে। বিশ্বের প্রায় সব দেশের সংবিধানে আছে: 'প্রেসিডেন্ট বা রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের ফৌজদারি কার্যধারা অচল।' পাকিস্তান সংবিধানের ২৪৮ অনুচ্ছেদে এটা বলা আছে। আর জারদারির মামলাটি বহু পুরনো; ১৯৯০ এর কথা। জারদারি প্রেসিডেন্ট হবার পর সুইস সরকার মামলাটি হিমাগারে নিক্ষেপ করেছিল। এসব কারণ এবং সংবিধানের উক্ত অনুচ্ছেদের শিরোধার্য বিধান- সব মিলিয়ে গিলানি সুইস কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখেননি। আদালতের নির্দেশ মানেননি। এখন বাড়াবাড়ি কে করেছে, গিলানি না কোর্ট? সেটা মূল্যায়নের পূর্বেই বলা যায়, গণতন্ত্র এখনো পাকিস্তানে শিশুকাল পার করছে। এছাড়া আরো অনেক কঠিন সংকট এ মূহুর্তে পাকিস্তানকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সে প্রেক্ষাপটে সুপ্রিমকোর্টের এমন ‘অতি-কঠোর’ নীতি ভালো ফল আনবে না। আনতে পারে না।
অবশ্য বর্তমান দেশটির প্রধান বিচারপতি ইফতেখার মোহাম্মদ চৌধুরী বেশ কিছুদিন যাবৎ জারদারি সরকারের বিরুদ্ধে বৈরী মনোভাব পোষণের অভিযোগে সমালোচিত হচ্ছেন। এর পেছনের হেতু আবার বেশ দীর্ঘ। তথাপি পট পরিবর্তনে একজন বিচারপতি থেকে অধিকতর সংযম, চিন্তাশীল সিদ্ধান্ত এবং দেশ জনগণের স্বার্থ বিশেষভাবে মূল্যায়িত হবার দাবি রাখে।

গিলানির সাফল্য
পাকিস্তানের গণতন্ত্রের ইতিহাসে গিলানির নাম যুগের পর যুগ আলোকজ্জ্বল হয়ে থাকবে। এই স্বল্প সময়ে যে মেধা, বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য, সহনশীলতা এবং ত্যাগ স্বীকার তিনি করেছেন- বর্তমানে তার জুড়ি মেলা ভার। ক্ষমতা গ্রহনের শুরুতে কেউ কেউ তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশংকা প্রকাশ করলেও তা আর সত্য হয়ে ওঠেনি। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছিলো। দলের প্রতি আনুগত্য ও দেশ জনগণের স্বার্থ- এ দুটির মাঝে যে এতো সুন্দর সমন্বয় তিনি করতে পারবেন, তা দেখে অনেকেই অভিভূত হয়েছিল।
উল্লেখ করার মতো ব্যাপার হচ্ছে- যে দেশে গণতন্ত্র এতোটা ভঙ্গুর, সে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে গিলানির মনোনয়ন পর্বও ছিলো যথেষ্ট স্বচ্ছ পরিষ্কার। একথাও সুবিদিত যে, দুর্নীতি তো দূরে থাক, বিন্দুমাত্র অনুরোধও তিনি জারদারিকে করেননি। অবশ্য দলীয় আনুগত্য, স্বাধীন চিন্তা, ইস্পাতসম দৃঢ় মনোবল এবং দলের ভেতরে কোন্দলে না জড়ানো- তার এসব গুনাবলী পাকিস্তানের শীর্ষপদে আসিন হতে তাকে সাহায্য করেছে। এসব ক্ষেত্রে তিনি পূর্ব থেকেই পরীক্ষিত ছিলেন। মোশাররফ তার শাসনামলে গিলানির মতো যোগ্য নেতাদের নিজ দলে ভেড়াতে খুব কোশেশ করেছিল। অনেকেই তখন বলির পাঠা হয়ে পিপিপি ছেড়ে গেলেও তিনি যাননি। বহু কষ্ট মোজাহাদা করে সেখানেই থেকে যান। সেজন্যে মোশাররফের ভুয়া মামলায় ৫ বছর জেল খাটার মতো ত্যাগের বিসর্জনও তাকে দিতে হয়েছে। এছাড়া দেশটির ভয়াবহ বন্যা, বিন লাদেনের মৃত্যু, মেমোগেট কেলেংকারী, তালেবান হামলা, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংকট তিনি প্রজ্ঞার সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এতো এতো দক্ষতার পরিচয় দিয়ে পাকিস্তানিদের প্রসংশা কুড়িয়ে আরো বহুদিন স্বমহিমায় তিনি উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন- এমনটাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

গিলানির ব্যর্থতা
ব্যর্থতা বলতে এতো ইস্যু মোকাবেলা করতে গিয়ে তিনি অর্থনীতির দিকে ঠিক সেভাবে নজর বোলাতে পারেননি। এই সুযোগে দুর্নীতি ও কর ফাঁকি সহ পাকিস্তানকে ৮.৫ ট্রিলিয়ন রুপি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
শেষ কথা, বাংলাদেশের এক সাংবাদিক কলামিষ্টের গিলানি সম্পর্কীয় মন্তব্যটি এখানে উল্লেখের লোভ সংবরণ করতে পারছি না। গিলানির উপর বয়ে যাওয়া ঝড় ও তার প্রতিরোধ পদ্ধতি দেখে তিনি লিখেছেন, ‘ইউসুফ রাজা গিলানি দলের প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষায় যেমন উত্তীর্ণ, তেমনি তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেননি। অন্যদিকে আদালতের প্রতি অশ্রদ্ধা যেমন তিনি দেখাননি, তেমনি গণতান্ত্রিক শাসন অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছেন। অবশ্য এজন্য তাকে বড় ধরনের ঝুঁকিই নিতে হয়েছে। ছাড়তে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পদ।

আমার বলতে ইচ্ছে করছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আদালত কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে তিনি কীরূপ হম্বিতম্বি করতেন আর কীসব জঙ্গি কাণ্ডকারখানার সূচনা করতেন- বিষয়টা ভাবার চেষ্টা করছি আর কি!

দ্রষ্টব্য : লেখাটি আমার অন্যান্য ব্লগে প্রকাশিত
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×