somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্কিত সবার ( শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারী) জন্য এই পোস্টটি ।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্কিত সবার ( শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারী) জন্য এই পোস্টটি ।

বলছি গতকালের কথা । শুরুতে একটু ঘটনা পরিক্রমা বলে নেয়া দরকার । অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু কারণে গত বছর ৩য় বর্ষের কয়েকটি পরীক্ষায় খারাপ করেছিলাম, তাই এবার বাধ্য হয়ে ফলোন্নয়ন পরীক্ষা দেবার জন্য ফর্ম ফিল-আপ করতে হল । ফর্ম ফিল-আপ করতে গিয়ে দেখি, ১০ ক্রেডিটে ফলোন্নয়ন পরীক্ষা দিলে আমার জন্য ভালো হয় । এবারই শেষ সুযোগ, তাই সুযোগটা আর হাতছাড়া করা যায়না । কিন্তু এক বছরে কত ক্রেডিট পর্যন্ত ফলোন্নয়ন পরীক্ষা দেয়া যায় সেটা আমার সঠিক জানা ছিলনা বলে রেজিস্টার বিল্ডিং এ গেলাম এই ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানতে । একটি নির্দিষ্ট কক্ষে গিয়ে নির্দিষ্ট একজন কর্মকর্তাকে ( নাম বলতে চাই না) সম্মান-প্রদর্শনপূর্বক জানতে চাইলাম তথ্যটা । তিনি আমাকে সরাসরি জানালেন, ২০০৭-০৮ সেশন থেকে যে নিয়ম হয়েছে তা অনুযায়ী এক বছরে সর্বোচ্চ ৮ ক্রেডিট পর্যন্ত ফলোন্নয়ন দেয়া যাবে! আমি বিরোধিতা করে জানালাম যে এমনটি হওয়ার কথা না, আমার জানামতে অনার্সের চার বছরে একজন ছাত্র সর্বমোট ২০ ক্রেডিট পর্যন্ত ফলোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে পারে এবং এক বছরে কোন ক্রেডিট লিমিট নাই( এখনকার নিয়ম অনুযায়ী) । কর্মকর্তা জানালেন, উনি যা জানিয়েছেন তাই সঠিক এবং এই বিষয়ে একমাত্র ডিপার্টমেন্ট ছাড়া আর কারো কিছু করার নেই! আমি সাথে সাথে ডিপার্টমেন্টে খোঁজ নিলাম, সেখানে থেকেও সেই একই ব্যক্তির রেফারেন্স দেয়া হল ।আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম । অনেক খোঁজ-খবর নিলাম, অনেক বন্ধুবান্ধবকে ফোন দিলাম । সবাই একই কথা বলল যে খুব সম্ভবত আমারটাই ঠিক, তারপরেও রেজিস্টার বিল্ডিং থেকে ভালো করে খোঁজ নেয়া ভালো । পরের দিন আমি আবার সেখানে গেলাম এবং আবারও সঠিক তথ্য জানতে চাইলাম । সম্মানিত কর্মকর্তা আবারও যথেষ্ট কনফিডেন্স নিয়েই জানালেন যে তিনি যা বলেছেন সেটাই সঠিক এবং খুব বিরক্তি প্রকাশ করলেন হাব-ভাবে । আমার উপস্থিতিতে আরও কয়েকজন পরীক্ষার্থীকেও তিনি একই তথ্য দিলেন! শুনে অনেকেই বিফল মনোরথে ফিরে গেলো । কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা, এত সহজে হাল ছেড়ে দেইনি কখনো; এখানে তো প্রশ্নই আসে না । আমি বিনীতভাবে বললাম, "স্যার, আমি কি এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে নীতিমালা আছে, সেটা দেখতে পারি?" এবার তিনি বললেন, "অবশ্যই পারেন, নয় কেন? আপনি কি হলে থাকেন? তাহলে আগামীকাল আসুন, দেখিয়ে দেবো।" পরের দিন ছিল হরতাল । ঘুম ভেঙ্গেই ছুটে গেলাম রেজিস্টার বিল্ডিং এ । (এই ক'দিন টেনশনে কিছুই পড়তে পারিনি।) সম্মানিত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আমাকে দেখে না চেনার ভান করলেন । আমি তাঁকে আবারও সবকিছু খুলে বলে নীতিমালা দেখতে চাইলাম । এবার তিনি তাঁর অফিসকক্ষে ঢুকে নীতিমালা খুঁজতে লাগলেন (আমাকে একবারের জন্যও বসতে বললেন না।) । কিছুক্ষণ পর নীতিমালা হাতে পেয়ে আবারও আমার ভর্তি-সেশন জানতে চাইলেন । আমি তাঁকে আবারও সব তথ্য দিলাম, বললাম আমি এ পর্যন্ত মোট ৮ ক্রেডিটে ফলোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়েছি, আরও ১২ ক্রেডিট দিতে পারার কথা । তিনি নীতিমালা দেখে এবার একটু নরম গলায় বললেন, "ঠিক আছে । আপনি ১২ ক্রেডিটের জন্য ফর্ম ফিল-আপ করেন।" আমি যথারীতি বিনীত ভঙ্গিতে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে এবং পরীক্ষার জন্য দোয়া চেয়ে চলে এলাম । এরপর আরও দুইদিন গেল ডিপার্টমেন্টে সাইন-সংক্রান্ত জটিলতায় । গতকাল টাকা জমা দিতে গিয়ে দেখি, আমার ১৭০ টাকা বিলম্ব ফি হয়েছে! ছুটে গেলাম আবারও সেই কর্মকর্তার কাছে । তিনিও একই জরিমানার কথা বললেন । আমি বললাম, "তিনদিন তো আপনার কারণেই গেলো; আপনি যদি প্রথম দিনেই সঠিক তথ্যটি দিতেন, এতদিন না ঘুরাতেন তাহলে কি আর এতটা জরিমানা গুনতে হতো আমাকে? এখন স্যার অনুগ্রহ করে জরমানা কিভাবে একটু কমানো যায় সে পরামর্শ দিন।" উনি জানালেন, জরিমানা কমানোর সাধ্য উনার নেই, এই কাজ একমাত্র ভি,সি, স্যার করতে পারেন চাইলে । তাও তিনি নাকি এখন আর করেন না!

ছুটে গেলাম ভি,সি, স্যারের অফিসে । স্যার সবসময় ব্যস্ত থাকেন, দেখা করাই মুশকিল । যত বড় দায়িত্ব, তত বেশি ব্যস্ততা । এটাই স্বাভাবিক । তবু একটু অপেক্ষা করতেই স্যারের রুমে প্রবেশের অনুমতি পেলাম । অফিস তখন অনেক মান্যগণ্য লোকজনে ভর্তি । এরই মাঝে স্যার আমাকে ডাকলেন । আমি এগিয়ে গিয়ে স্যারকে সবকিছু খুলে বললাম এবং ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলাম, সাথে সাথে জরিমানা কমানোর আবেদন করলাম । এটাও বললাম যে এই সামান্য টাকা জরিমানা কোন বিষয় না, কিন্তু এমন ভুল তথ্য দেয়াটা তো ঠিক না । অনেকেই নিশ্চয়ই তাঁর থেকে এই ভুল তথ্য পেয়ে সেই অনুযায়ী ফর্ম ফিল-আপ করেছে, যত সংখ্যক ক্রেডিটে পরীক্ষা দেয়া দরকার ততগুলোতে দিতে পারেনি! স্যার যথেষ্ট সদয় হয়ে সময় নিয়ে সব শুনলেন এবং আমার যুক্তির সাথে একমত পোষণ করলেন । বললেন, "উনি তো যথেষ্ট sincere বলেই জানতাম, এমন তো করার কথা না!" এরপর তিনি আমাকে বসতে বলে ওই কর্মকর্তাকে ডাকালেন ।দুই-তিনবার লোক পাঠানোর পর তিনি এলেন । আমি তাঁর সামনে সম্পূর্ণ ঘটনা এবং আমার অভিযোগ,প্রার্থনার কথা বললাম । শুনেই সেই কর্মকর্তা অস্বীকার করলেন এবং ঘটনার ভুয়া বিবরণ দিয়ে স্যারকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলেন । তবুও শেষ পর্যন্ত যুক্তি-তর্কে আমারই জয় হল । স্যার আমার পক্ষে রায় দিলেন এবং ওই কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিলেন ওই ৩ দিনের যা জরিমানা হয় সেই টাকা যেন মওকুফ করা হয় । তারপর স্যারকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি ওই কর্মকর্তার সাথে উনার অফিসে গেলাম এবং তাঁকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম যে শুরুতেই সঠিক তথ্য দিলে এতটা ঝামেলা কারোরই করা লাগতো না । কথার এক পর্যায়ে উনি বললেন, "আপনি কাজটা ঠিক করলেন না।"

এখন কথা হচ্ছে, এটাকে কি আমি হুমকি হিসেবে নেবো? তিনি কি আমার আসলেই কোন ক্ষতি করতে পারেন? আমি তো স্বাভাবিকভাবেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিমাত্র । এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রেজাল্টের প্রশ্ন, জীবনের প্রশ্ন । এসব বিষয়ে কোন ছাড় নেই । আমি প্রতিবাদ করেছি, যা করা উচিৎ মনে হয়েছে করেছি । শ্রদ্ধেয় ভি,সি, স্যার আমাদের অভিভাবক । তিনি বিচক্ষণতার সাথে দুজনের বক্তব্য শুনেই রায় দিয়েছেন । এজন্য স্যারকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা । আর সেইসব careless কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ, শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে খেলবেন না প্লিজ! দয়া করে আগে নিজে নীতিমালা জানুন, তারপর সবাইকে সঠিক তথ্যটি দিন । ধন্যবাদ ।

১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×