স্টিভ জবসকে অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা বলার চেয়ে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, জিনিয়াস বা জীবনধারা পাল্টে দেওয়া মানুষ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয় বেশি। আর তিনি এখনও সরব হয়ে আছেন মিডিয়ায়। কখনও হয়তো তার ছেলেবেলার বাড়িটি সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এমন খবরে, কখনও স্টিভের স্পর্শ থাকলে কেমন হত আইফোন ফাইভএস-এর চেহারা-- এমন সব প্রশ্নে।
Published : 07 Oct 2013, 05:12 PM
অথচ দিনদুয়েক আগেই চলে গেল তার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।
২০১১ সালের ৫ অক্টোবর জীবনাবসান হয় স্টিভের। প্রাণঘাতী রোগটির নাম ছিল অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার।
শুক্রবার জবসের প্রয়াণ দিনে, অ্যাপল সিইও টিম কুক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রতি একটি খোলা চিঠি লিখেছেন।
“স্টিভ ছিলেন এক অসাধারণ মানুষ এবং তিনি পৃথিবীকে এগিয়ে দিয়ে গেছেন। আমি তাকে প্রায়ই স্মরণ করি। তার বন্ধুত্ব, দূরদৃষ্টি এবং নেতৃত্বের স্মৃতি আমার জন্য অসম্ভব কর্মশক্তির উৎস।”-- ওই চিঠিতে বলেছেন কুক।
কুক আরও যোগ করেছেন, “তিনি একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে গেছেন, যেটি কেবল তার পক্ষেই তৈরি করা সম্ভব ছিল। তার চেতনা সবসময়ই অ্যাপলের ভিত্তি হিসেবে থাকবে। যে কাজ তিনি অসম্ভব ভালোবাসতেন তাতে আমরা নিজেদের নিয়োজিত করার মাধ্যমেই স্টিভকে যথাযোগ্য সম্মান জানানো সম্ভব।”
২০০৪ সালে বিরল ধরনের অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার থেকে ‘সেরে ওঠেন’ স্টিভ এবং প্রায় জোর করেই ওই রোগের কারণে তাকে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আর ওই অসুস্থ শরীরের স্টিভই তৈরি করে গেছেন প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে আইকনিক পণ্যগুলো, যার মধ্যে রয়েছে আইফোন, আইপড বা আইপ্যাড। শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালের ২৪ অগাস্ট তিনি সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং অ্যাপল চালানোর দায়িত্ব আসে টিম কুকের হাতে।
জবসের হাতে তৈরি পণ্য দিয়েই এখনও অ্যাপলের প্রায় সবটুকু আয় হচ্ছে। তবে বাজার বিশ্লেষক আর প্রযুক্তিবিদদের কাছ থেকে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন আসতে শুরু করেছে স্টিভের দূরদৃষ্টি এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতার চিহ্ন অ্যাপলের আগামী পণ্যগুলোতে থাকবে কি না। অ্যাপলভক্তদের জন্য স্বস্তির খবর, আইফোন ফাইভএস প্রথম সপ্তাহান্তেই প্রায় এক কোটি বিক্রি হয়েছে এবং অ্যাপলের স্টক শেষ বলে রিপোর্ট দিয়েছে পত্রিকাগুলো। বলা যেতে পারে বাজারে অ্যাপলের দাপট এখনও অটুট আছে।
স্টিভ জবসের প্রয়াণের পর গত দুই বছর চলতি পণ্যগুলো নিয়ে অ্যাপল ভালো অবস্থানেই আছে বাজারে; তবে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যত বিষয়ে প্রশ্নও উঠছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রশ্নের একটি শেয়ার বাজারে অ্যাপলের অবস্থান এবং দুই হল, ৩-৪ বছর পরপর অ্যাপল বাজার পাল্টে দেওয়া একেকটি পণ্য এনে বাজিমাত করত, সেটি ভবিষ্যতে আর সম্ভব হবে কি না।
অনেকেই বলছেন, স্টিভ জবস হয়তো অন্তত একটি পণ্য রেখে গেছেন যেটি এখনও কুপারটিনোর অ্যাপল দুর্গ থেকে বেরোয়নি। অনেকের ধারণা সেই পণ্যটি হবে অ্যাপল টিভি। তাই যদি হয়, তবে এটা হবে স্টিভ জবসের ‘লাস্ট ওয়ান থিং’।
ওয়াল্টার আইজ্যাকসনের লেখা জীবনীতেও উল্লেখ আছে-- স্টিভ বলেছিলেন, “এটার (অ্যাপল টিভির) ইন্টারফেস হবে অকল্পনীয় রকম সহজ। শেষ পর্যন্ত এটা আমি দাঁড়া করাতে পেরেছি।”
টিম কুকও সম্প্রতি অল থিংস ডি নামের সম্মেলনে আভাস দিলেন অ্যাপল টিভির। তিনি বলেন, এটি অ্যাপলের জন্য ‘তীব্র আগ্রহের’ একটি ক্ষেত্র।
২০১৪ সালে এসে অ্যাপল যদি নতুন শ্রেণির কোনো পণ্য তাদের প্রোডাক্ট লাইনে যোগ করেতে পারে, সেটি অ্যাপল টিভি, আই ওয়াচ বা অন্য কোনো ধরনের পণ্য হোক, তাহলেই কেবল অ্যাপলের ভবিষ্যৎ বিষয়ে আপাত সংশয় দূর হওয়া সম্ভব।