somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদায় ব্ল্যাকবোর্ড, বিদায় বেঞ্চ, বিদায় ক্লাসরুম: কিছু সেন্টিমেন্টাল কথা।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০৭ই অক্টোবর ২০১৩
রাত ০৮ টা।


সবকিছু নিয়ে কথা:
আজকের দিন টা অন্যকোন দিনের চেয়ে একটু আলাদা ভাবে শুরু হয়েছে? একটু অন্যরকম? মনে হয় না, বরং খুব স্বাভাবিক ভাবেই আজ সুর্যদেব পূর্বাকাশে আগমন করেছেন। আর দশটা সাধারণ দিনের মত কিংবা আর দশ জন মানুষের মতই খুব স্বাভাবিকভাবেই আজকে আমার দিনটা শুরু হয়েছে। কোন পার্থক্য নেই।
তারপরও সারাদিন এবং দিনশেষে এখনও মনে হচ্ছে আজকের এই দিন স্মরণে থাকবে সারা জীবন। না, কোন উচ্চ পর্যায়ের সেন্টিমেন্টাল বিষয় এর জন্য নয়। হৃদয় ঘটিত বা হৃদয়বিদরক বা কোন হৃদয়হরণকারী ব্যাপার নয়। খুব সাধারণ সেন্টিমেন্টাল বিষয়।
সময় তার চলার পথে সর্বদাই অবিচল, সেই ঘুরে ফিরে আবার মনে করিয়ে দিয়ে গেল। কত দিন হবে? খুব বেশি হলে কুড়ি মাস। গত বছর ০৮ই মার্চ ক্লাস নাইনে ভর্তি হয়েছিলাম এই চান্দাইকোনা বহুমূখি উচ্চ বিদ্যালয়ে। ক্লাস শুরু করেছিলাম ১০ই মার্চ থেকে। তারপর থেকে সবার সাথে পরিচয় হওয়া, প্রথম বন্ধু হওয়া, ক্লাসে দুষ্টমি করে স্যারের বকা খাওয়া, কখনও তীব্র আনন্দ কিংবা খুব মন খারাপ বা খুব ব্যাক্তিগত বিষয়টা প্রিয় বন্ধুটির সাথে শেয়ার করা,ছুটাছুটি, লাফালাফি, পরীক্ষার আগে পড়াশোনা নিয়ে বাড়াবাড়ি রকম ব্যাস্ততা দেখানো, পরীক্ষার পর রেজাল্ট খারাপ করে মুখ কালো করে বাড়ি ফেরা, এইরকম হাজার হাজার স্মৃতি মিশে থাকা এই প্রতিষ্ঠানটি এই অল্প সময়ে বড় বেশি আপন হয়ে গিয়েছিলো।
তাই আজকে সকালে যখন শেষবারের মত ক্লাস করার অধিকার (!) নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটিতে ঢুকছিলাম তখন সব কিছু কেমন অবাস্তবের মত মনে হচ্ছিল।
এই ক্লাসরুম এই বোর্ড, এই বেঞ্চ গুলো এমনই থাকছে শুধু আমরা থাকছি না। কোন মানে হয়? :(
(খুব হাস্যকর কথা বলে ফেলেছি মনে হয়। আমার আসলে কিছু করার নেই। :( )
দাঁত থাকতে আমরা যে দাঁত এর যত্ন নেই না, এই কথাটা আমদের চেয়ে ভালো আর কে জানে? স্কুলে যখন থাকতাম (!) তখন মাঝে মাঝে স্কুলটাকে প্রচন্ড বিরক্তিকর মনে হত! আজ সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থা।
কেউ কেউ হয়তবা বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকাচ্ছেন, এই রকম একটা রেডিমেট আবেগ মার্কা পোষ্ট দেখে। তাদের কাছে আমি আন্তরিক ভাবে দু:খিত। মনের এই কথাগুলো লেখার জন্য এর ভালো কিছু আমি এই মূহুর্তে খুঁজে পাচ্ছি না। তাই রেডিমেটই ভরষা।
ক্লাস নাইন থেকে টেনে উঠে বন্ধু বান্ধবেরা সবাই যেন অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল, ঠিকভাবে তাল মিলাতে পারছলাম না ওদের সাথে। তাই শেষের দিকে ঠিক ভাবে স্কুলে যাইনি। হঠাৎ করেই আজকে অনেক কিছু মনে পড়ছে। অনেক কিছু চাওয়ার ছিলো সব কিছু পাইনি, অনেক কিছু চাওয়ার ছিল না, অনাকংখিত ভাবে পেয়ে গেছি। সাধারণত যে রকম হয় আরকি। তবে সেসবের জন্য খুব একটা খারাপ লাগছে না। যে জন্য একটু খারাপ লাগছে সেটা হলো, অব্যাক্ত থাকা কথা, অসমাপ্ত থাকা কথা। অনেক কথাছিল, কিছুই বলা হয়নি। কিংবা সবকিছুই বলা হয়েছে, একটু অন্যভাবে। কিংবা যা বলার ছিল তার চেয়ে একটু বেশিই বলা হয়ে। থাক, অনেক কাব্য চর্চা করে ফেলেছি, ধান ভানা বাদ দিয়ে ননস্টপ শিবের গীত গাওয়া কোন কাজের কথা না।
যাইহোক, যেখান থেকে এসেছিলাম সেখানেই ফিরে যাই, এর আগেও স্কুল পরিবর্তন করেছি কিন্তু এতটা খারাপ লাগেনি। কোন কিছু না জেনে হঠাৎ করে ছেড়ে চলে যাওয়া এবং সব কিছু জেনে ধীরে সুস্থে চলে যাওয়া মনে হয় একব্যাপার নয়।
বন্ধু বান্ধব নয় খারাপ লাগছে কিছু ইট,কাঠ,সিমেন্ট এবং বালির জন্য। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন মানুষ হারিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু খুব সহজেই ইঁট,কাঠ,বালি হারিয়ে যেতে পারে। সেই সাথে হারিয়ে যেতে পারে অধিকার্। ছাত্র হিসেবে স্কুলের কাছে ইট,কাঠ,বালির কাছে অধিকার্। "অধিকার ছাড়িয়া দিয়া,অধিকার রাখিতে যাইবার মত এমন বিড়ম্বনা আর নাই। __হৈমন্তী, শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়।"
চরম বাস্তবতার এই যুগে সেন্টিমেন্টালিটি কোন কাজের জিনিস নয়। কষ্ট ছাড়া কোন কিছু এই জিনিস টা নিয়ে আসতে পারে না। তারপরও মানুষ হিসেবে কিছু কিছু সময় একটু সেন্টিমেন্টাল হতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে একটু খানি কষ্ট পেতে।
বেঁচে থাক সেন্টিমেন্টালিটি, বেঁচে থাক কষ্ট, বেঁচে থাক প্রিয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ধূলিকণা।


শেষ কথা:
এতক্ষণে নিশ্চয়ই খুব ভালো করে বুঝে গেছেন সামনে ২১ তারিখ থেকে আমার Test Exam। এবং আমি পড়া বাদ দিয়ে এই মহান বিষয়টি নিয়ে মহাগ্রন্থ রচনা করছি। :-P
অনেকটা সময় ব্যায় করে ফেললাম এই কর্মে। :-P সুতরাং এই মূহুর্তে পড়তে না বসলে Good bye. এই Good bye এর সময়টাকে এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিদেন পক্ষে টেস্ট এক্সাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত। :-) কতটুকু পারব বলতে পারছি না। বাঁকিটুকু তার ইচ্ছা।
ও হ্যাঁ, আমার দোয়া করা কিন্তু সবার জন্য বাধ্যতামূলক! :-)
সব্বাইকে শারদীয় দূর্গাপূজা, লক্ষীপূজা এবং পবিত্র ঈদ-উল-আযহার শুভেচ্ছা, শুভেচ্ছা এবং সবার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।


পুনশ্চ:
"প্রকৃতি এবং বিবেক এই দুই শক্তি কে একত্র করে তোমাদের জীবনকে পরিচালিত করতে হবে। প্রকৃতি যেমন তার নিয়মের বাইরে কাউকে যেতে দেয় না, তেমনি বিবেকও মন্দ কাজে তোমাকে পা বাড়াতে দেবে না। বিবেককে পূর্ণ রুপে প্রতিষ্টা করাই শিক্ষা প্রাধান লক্ষ্য। জীবনে মানুষ হও। তোমাদের প্রতি শুভ কামনা।"
আমাদের Math এবং Science টিচার মধুসূধন স্যার আজকে ক্লাসে যে কথা গুলো বললেন তারই কিছু অংশে সারকথা। (স্যার কথা গুলো অনেক সুন্দর করে বলেছিলেন, আমার পুরোটা মনে নাই। তা হ-য-র-ল-ব করে ফেললাম)
এই মানুষটিকে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এতটাই পছন্দ করে যে আমার মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় Math এর মত এমন রসকষ হীন বিষয়ের কোন শিক্ষককে এর আগে কেউ এতটা পছন্দ করতে পেরেছে কিনা।
স্যারের জন্য ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা বা শুভকামনা এই জাতীয় শব্দ ঠিক উপযুক্ত নয়। তাই তার জন্য রইল আমার পিতৃতূল্য শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।


প্রিয় মধুসূধন স্যার সহ আমার সকল শিক্ষক, চাইন্দাইকোনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিটি ধূলিকণা এবং হাইস্কুল লাইফ মিস করা সকল ছাত্র ছাত্রীর প্রতি উৎসর্গকৃত।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×