somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি জানি কিসেরও লাগি প্রাণ করে হায় হায়

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিকশায় আমার পাশে চশমা চোখে জগৎ সংসারের উপর মহাবিরক্ত যেই বালিকা বসে আছে, সেই বালিকাটা অজানা কোন এক কারণে রণাঙ্গিনী মূর্তি ধারণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে । নাকের উপর বেরসিক চশমাটা বারবার নেমে পড়ায় আর বাতাসে চুলগুলো মুখে এসে পড়ায় বালিকা তাতে সফল হচ্ছে না তা ভালই বুঝা যাচ্ছে। বালিকাকে তার ভার্সিটির হল থেকে কুড়ায়ে নেবার সময় থুক্কু রিকশায় তুলে নেবার সময় জিজ্ঞেস করেছিলাম, "আমরা কোথায় যাব?" বালিকা সরল মুখে গরল ভেংচিতে উত্তর দিয়েছিল- " কাজী অফিসে বিয়ে করতে।" আমার মুখ তৎক্ষণাৎ ফ্লাড লাইটের মত ঝলমল করে উঠেছিল। উৎসাহের সাথে রিকশাওয়ালা মামাকে বললাম , "মামা নীলক্ষেত কাজী অফিস চল।" সারা রাস্তা পাশে বসা গোমড়ামুখো বালিকা কোন কথা না বলে নাক ফুলিয়েছে আর আমি দুই একটা রোমান্টিক কথা বলতে গেলেই চোখের দৃষ্টি দিয়ে আমাকে ভস্ম বানানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়েছে। রিকশা নীলক্ষেত চৌরাস্তা পর্যন্ত আসতেই বালিকা হঠাত গলার চি চি আওয়াজে রিকশাওয়ালা মামাকে বলে উঠল, "মামা, ডানে মোড় নেন। টি এস সি চলেন।" আমার আনন্দে গদগদ চেহারা এই কথা শুনেই অমাবস্যার রাতের লোডশেডিং এর মত অন্ধকার হয়ে গেল। মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেল- "লে হালুয়া ! আমি সারাটা পথ এত আশা করলাম আর তুমি আমার আশার গুড়ে বালি তো বটেই, পাথর, ধুলো সব ঢেলে দিলে !" বালিকা কিচ্ছু না বলে একবার তাকাল শুধু আমার দিকে, তাতেই আমি যা দেখার দেখে ফেলেছি। সেই দৃষ্টিতে কমপক্ষে হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ ছিল নির্ঘাত । পরে অবশ্য জোরাজুরি করে জেনেছিলাম কেন এত রেগে আছে বালিকা , সেদিন ও নাকি তার কোন এক বান্ধবী ঠাট্টার ছলে আমাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা শুনিয়েছিল। আমার মত অকর্মণ্যের সাথে প্রেম করলে সারাদিন রেগে থাকাটাই দস্তুর আসলে, সেখানে অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে বালিকা তবুও মাঝে মাঝে মেঘ টেনে এনে চোখে জমা করে আর খুব বেশি জমে গেলে তবেই বর্ষণ ঘটায় ।


ভাল কথা, বালিকার নাম তিথি। বালিকা বলছি তাই বলে ভাবার কারণ নেই, দুই বেণী ঝুলিয়ে স্কুলব্যাগ কাধে নিয়ে আমার হাত ধরে ঘুরে বেড়ায় সে, বছর দুয়েক আগেই আঠার পেরিয়েছে। দেখতে ছোটখাট এই মেয়েটার রাজ্যের যত উদ্ভট কথা বলায় আর উদ্ভট কাজ করতে জুড়ি নেই, তাই ঢং করে আমিও বালিকা বলি। নেহায়েত তিথিকে ভুলিয়ে ভালিয়ে পালিয়ে যাবার দরকার পড়লে আর যাই হোক নাবালিকা অপহরণের দায়ে লাল দালানে ঢুকতে হবেনা, এইটা নিশ্চিত। জগৎসংসারে বড়ই অদ্ভুত নিয়ম। আমার মত বাউন্ডুলে কিভাবে যে এই মাইনকার চিপায় মানে এইসব ভালবাসা টাসা ব্যাপারে ফেসে গেলাম, নিজেই বুঝিনি।


বছর খানেক আগে আমার এক বন্ধু মিনহাজের মাকে হাসপাতালে রক্ত দিতে গিয়ে তিথির সাথে পরিচয়, তিথি মিনহাজের খালাত বোন । অপারেশনের জটিলতার কারণে যেদিন রক্ত দেয়ার কথা ছিল, সেদিন রক্ত নেয়া হয়নি। এজন্য পরপর কয়েকদিনে হাসাপাতালে যাওয়া আসা করে আর করিডোরে চিন্তিত মুখে বসে থাকা তিথিকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বেশ ভালই একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে মাঝে মাঝে ফোনে কথা হত।যতটা না বলতাম , শুনতাম বেশি। এই মেয়েটার রাজ্যের যত গল্প, সব শুনে হু, হ্যাঁ, হুম ছাড়া আর কিছু বলার সুযোগ তেমন পেতাম না। এটুকু বুঝেছিলাম, মেয়েটা অনেকটাই সহজ সরল। মাস চারেক পর একদিন ফোনে কথায় কথায় বলেছিলাম, “ ভাবছি, বিয়ে করব। চাকরি বাকরি নাই তো কি হয়েছে, তাতে সুবিধা বেশি। সারদিন বৌ এর আঁচল ধরে ঘুরে বেড়াতে পারব। শুধু ঝামেলা একটাই, বেকার বলে কোন মেয়ে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে বলে মনে হচ্ছেনা, তাই বিরাট চিন্তায় আছি।" বাস্তবে এরকম উদার মেয়ে পাওয়া গেলে আমি আরো কি কি করতাম তা বলা শুরু করতেই দেখি তিথি ঝাড়ি মেরে কল কেটে দিয়েছে। আমি কিছুই বুঝলাম না, আমার দোষটা কি !


দুদিন যেতেই বুঝতে পারলাম, আমি ঘুণাক্ষরেও যা ভাবিনি, তাই ঘটে গিয়েছে। জীবনের চাওয়া আর সেটা পাওয়ার যোগ্যতার জটিল সমীকরণ বালিকা তখনো বোঝেনি। ছোটবেলায় মা হারিয়ে জীবনের বেশিরভাগ সময় হোস্টেলে কাটানো এই মেয়ের কানে কানে কেউ তখনো বলে দেয়নি, অসমতায় ভালবাসতে নেই, আর ভালবাসলেও সেটা বলতে নেই ।ঝড়ের মত দমকা বেগে ভালবাসাটা যদি জীবনে চলেও আসে , তাহলেও কিছু কিছু ঝড়ে মনের জানালাটা শক্ত করে আটকে রাখতে হয়। "মোহ" নাম দিয়ে সেই ভালবাসার অনুভূতিটাকে মনের গহীন কোণে চাপা দিয়ে রাখতে শেখায়নি কেউ তাকে তখনো । বালিকা তাই নাছোড়বান্দা, তার এই বাউন্ডুলে “আমি” কেই চাই, সময় অসময়ে গিটারে সুর তুলে যে তাকে গান শুনাবে, তার সারাদিনের জমানো এতাল বেতাল অর্থহীন যত কথা শুনে বলবে না, “ কি যে সব বলনা তুমি” !


সব বুঝে শুনে মনে হল, এই মেয়েটার একটা থেরাপি দরকার। শক থেরাপি। এতদিন গোপন করে যাওয়া কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে আমি বলে ফেললাম তিথিকে , "আমি একটা মেয়েকে ভালবাসতাম ,মেয়েটা আমাকে কঠিন রকম ছ্যাকা দিয়ে আমার বন্ধুর গলায় মালা পরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে । তাতে আমি এতটাই কষ্ট পেয়েছি যে, তারপর থেকেই আমি আর কোনকিছুর ধার ধারিনা, নিজের ইচ্ছেয় চলি, এমন কি পড়াশুনাটাও তারপরে দুম করে জেদের বশে ছেড়ে দিয়েছি।দু চারটা সার্টিফিকেট নিয়ে কোট টাই পরা ভদ্রলোক সাজার ইচ্ছেটাও মরে গেছে। পরে দুই একবার আবার চেষ্টা করেছিলাম পড়াশুনাটা শেষ করতে ,কিন্তু আমার ভেতরে হয়ত যথেষ্ট তাগিদ ছিলনা, দুই একদিন পরেই আবার সব ছেড়েছুড়ে বাউন্ডুলে জীবনে ফিরে এসেছি। সত্যি বলতে কি, বাউন্ডুলে জীবনের স্বাদ একবার পেয়ে গেলে গৎবাঁধা জীবনে ফিরে আসা মোটামুটি অসম্ভব । পরে একসময় মেনেই নিয়েছি, সবাই যদি লেখাপড়া করে গাড়ি ঘোড়াই হাঁকাবে, নিজের মত করেও তো কাউকে বাঁচতে হবে। আমি সেই স্বেচ্ছাচারী দলের মানুষ। আর এখন, রাজ্যের যত অনিয়মই আমার ক্ষেত্রে নিয়ম হয়ে গেছে। তাই সারদিন গান গাই, ঘুরিফিরি, নানান মানুষের সাথে মিশি আর খেয়েদেয়ে নাক ডেকে ঘুমাই। এই কারণে, আর দশটা সাধারন মানুষের মত আমার আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখা সাজে না। আমার নিজের বাবাই অভিমানে মাস গেলে আমার সাথে একটা কথা বলেনা, সেখানে আমার ঘাড়ে জলজ্যান্ত তোমাকে চাপানোর কথা চিন্তা ও করতে পারিনা। এত সব কথার সার কথা হল, মানে মানে তুমি ভালয় ভালয় কেটে পড়, নাহলে পরে পস্তাবা।তাছাড়া আরো একটা ব্যাপার। আমার মত আধাশিক্ষিত একটা ছেলেকে আবেগের ঠেলায় ভালবেসে ফেলেছ,ভাল কথা। পরিবার ,আত্মীয়স্বজন আর বন্ধু বান্ধবের সামনে আমার পরিচয় দেবে কিভাবে? তাদের অবজ্ঞার দৃষ্টি সহ্য করার ক্ষমতা আছে তো ?"


ভাবলাম, এই কথা শুনে তিথির ভালবাসা কর্পূরের মত উবে যাবে। কিন্তু, উল্টো সে আমাকে আরো সান্ত্বনা দিতে লাগল। আঠার উনিশ বছরের যাচ্ছেতাই আবেগ কে প্রশ্রয় দিয়ে বলে- এতে তার কিচ্ছু যায় আসেনা। দরকার হলে আমাকে অথবা তাকে বদলে নেবে, তবুও সে আমাকেই ভালবাসবে।দুদিন পর তিথিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, "আচ্ছা তিথি, আমাকে বিয়ে করলে আমাদের সংসার চলবে কিভাবে?" সারাদিন গান গেয়ে বাউন্ডুলেপনা করে বেড়ালে মন ভরলেও পেট তো আর ভরবে না। তিথি জবাব দিয়েছিল, " আমি চাকরি করব। সারাদিনের জ্যাম, ভিড় ঠেলে মেজাজ তুঙ্গে থাকা অবস্থায় যখন বাড়ি ফিরব তখন তুমি আমাকে একটা গান শোনাবে। আর যদি একান্তই দরকার হয়, তবে আমি টাকা জমিয়ে তোমাকে দেব। তুমি একটা ব্যাবসা করবে। চাকরি ছাড়া কি জীবন চলেনা? " তিথির উত্তর শুনে আমি নিজেই ভড়কে গিয়েছিলাম। আমার একটা কথাই মনে হল, নারী প্রজাতির এই বিশেষ নমুনা টাকে বানানোর সময় কিছু কিছু সফটওয়ার দেয়া হয়নি এর ভিতরে, তা না হলে কোন সুস্থ স্বাভাবিক মেয়ে আমার মত বানরের গলায় মুক্তোর মালা হতে চায় ! সে যাক , আমার কি ! দুদিন পর নিজেই বুঝবে আর তখন নিজেই পালিয়ে কূল পাবেনা ।


মাস কয়েক তিথির সমস্ত জ্বালাতন সহ্য করতাম তিথির মোহ কাটার অপেক্ষায়।একবার ঘরপোড়া গরু সিদূরে মেঘ দেখলে ডরাবে, এ আর নতুন কি !তাই আমি সরাসরি প্রত্যাখ্যান বাদ দিয়ে এই পথ ধরলাম। এই শহরের অলিগলি চষে বেড়াতাম সময়ে অসময়ে। তিথির আবদার মেটাতে শপিং এর মত ভয়ংকর যন্ত্রণার মধ্যে দিয়েও অনেকবার যেতে হয়েছে। অবশ্য দিন শেষে আবিষ্কার করতাম, সামান্য এক ডজন কাঁচের চুড়ি পেয়ে মেয়েটার উচ্ছ্বাস, অনেকটা ছেলেমানুষের মত "এটা কি ওটা কি, এটা এরকম কেন, ওটা লাগবে" এইসব বলে আমার যে কান ঝালাপালা হওয়ার অবস্থা, ব্যাপারটার মধ্যে অন্যরকম একটা ভাল লাগা কাজ করে। একদিন বাচ্চাদের জামাকাপড়ের একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে গেল তিথি। হা করে ভিতরে তাকিয়ে আছে।তাগাদা দিতেই আমাকে একটা হালকা বেগুনি রঙ এর ছোট্ট একটা ফ্রক দেখিয়ে বলে,"ফ্রকটা কি সুন্দর না !আমি এইটা কিনব।" আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, "এইটা কিনে কি করবা?" বলে, "আমি রেখে দেব।এখন এইটা না কিনে রাখলে আমার যখন মেয়ে হবে, ততদিনে তো এইটা বিক্রি হয়ে যাবে!" আমি বালিকার এই অকাট্য যুক্তি সত্ত্বেও তাকে একটা রাম ঝাড়ি দিয়ে ওখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছিলাম।


আরো কিছুদিন যেতেই আমি নতুন এক বিপদ টের পেলাম। নিউটনের তৃতীয় সুত্র আমার উপর কেরামতি দেখানো শুরু করেছে। দিন যতই যেতে থাকে, তিথির ভালবাসার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যাবার বদলে আমি ততই এই মেয়েটার মায়ায় জড়াতে থাকি। একেকটা দিন না, একেকটা বেলা বদলের সাথে সাথেই এই মেয়েটা আমার চোখে অপ্সরী হয়ে উঠতে থাকে। যতবার ভাবি, এই মেয়েটাকে পাত্তা দিব না, আমার নিজের হাত,পা, মাথা, শরীর আমার সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করে আর কিছুদিন পরপরই আমি নিজেকে আবিষ্কার করি তিথির হোস্টেলের সামনে।


ভালবাসা বাসির ব্যাপারটা হাত থেকে ফসকে যাবার আগেই আমার মনে হয়, আমার কোন অধিকার নেই এই মেয়েটার জীবনকে একটা গোলকধাঁধা বানানোর। কিছুদিন যেতেই যখন এই মেয়ে তার বান্ধবীদের জীবনসঙ্গীদের যোগ্যতার মাপকাঠিতে আমাকে মেপে দেখতে পাবে, আমি সেই দাড়িপাল্লার আশাপাশে যাবার যোগ্য ও নই, তখন তীব্র হতাশায় ভুগবে মেয়েটা। ভালবাসা, করুণা যাই বলি না কেন, কিছু একটার টানে অন্যরকম এই মেয়েটা নিজ থেকে আমাকে ছেড়ে যেতে পারবেনা হয়ত । তাই আমার উচিৎ ডুব দেয়া। এক বছর, দুই বছর, বড়জোর আরো বেশ কয়েক বছর তীব্র কষ্টে এই মেয়েটা পাগল প্রায় হবে হয়ত, কিন্তু একসময় রূপকথার গল্পটা হবে অন্য কোন রাজকুমারের। সিপাহী সান্ত্রীর সাথে সারাজীবন কষ্টে ঘর করার চেয়ে তা বোধ হয় ঢের ভাল। শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম কিছু না জানিয়ে তিথির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেব।একপ্রকার কাপুরুষের মতই বলা চলে। পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াবতী মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে তার গভীরতম ভালবাসার প্রত্যাখ্যান আমার পক্ষে সম্ভব না, তাই এই চুপি চুপি পলায়ন।


প্রথমে নাম্বার চেঞ্জ করলাম। আমার যেই বন্ধুর নাম্বার তিথির কাছে ছিল, তাকে বলে দিলাম তিথির কল যেন রিসিভ না করে। তিথির নাম্বার টা তো মুখস্থই ছিল। ভীষণ ইচ্ছা করত, একবার ওর গলা শুনতে ! বিকেল হলেই আনমনে বকবক করা ওই বালিকার গালে শেষ বিকেলের রোদের লুকোচুরি দেখার নেশাটাও চেপে বসত। গীটার টা নিয়ে নাড়াচাড়া করতাম, বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজি, তবুও রাত নামলেই সবকিছু থমকে যেত। অনেকটা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মত আমার সমস্ত সত্তা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ত একটা অবশ অনুভুতি- " কি জানি কিসের লাগি প্রাণ করে হায় হায় " । আর সেরের উপর সোয়া সের হিসেবে এই সময়ে তিথির সাথে পার করা সময়ের স্মৃতিগুলো বারবার হামলা চালাত মনের জানালায় !


তিথির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করার দুদিনের মাথায় একটা পাগলামি করে ফেললাম। তিথির ভার্সিটির সামনের ওভারব্রিজটায় দাঁড়িয়ে খুঁজছিলাম তিথিকে। একটা ক্ষীণ আশা ছিল তিথি নিশ্চয় ক্লাসে যাবে। আমাকে তিথি দেখতে না পেলেও আমি মিনিট কয়েকের জন্য হলেও ওকে দেখতে পাব।এটাই বা কম কি ! কিন্তু পরপর তিনদিন দাঁড়িয়ে থেকেও তিথিকে দেখতে পেলাম না। নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হচ্ছিলাম আমি। তিথির জন্য এত উতলা হওয়ার কোন মানে আছে ! ওর হৃদয়ের মালিকানা আমিই তো স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছি। কি আসে যায় তিথির ভাল থাকা, মন্দ থাকায় ! নিজেকে এতকিছু বুঝিয়েও লাভ হয়নি তেমন। সেই একই অনুভুতি, সেই শুন্যতা ... সারারাত জেগে অনেক চিন্তা ভাবনার পরে মনে হল, মানুষের জীবনটা বড্ড বেশি ছোট, এত ছোট্ট একটা জীবনে এত বেশি হাহাকার নিয়ে বেঁচে থাকা যায়না। আর যেই পারুক, আমি স্বার্থপর মানুষ, লোকের কথায় আমার কিচ্ছু যায় আসে না। তিথিকে ছাড়া হেলায় অথবা ভালবাসায় গোটা একটা জীবন কাটিয়ে দেয়া আমার আমার দ্বারা হবেনা।


পরদিন সকালে এই বাউন্ডুলে আমি আবার হাজির হয়েছিলাম তিথির হোস্টেলের সামনে। অবশ্যই খালি হাতে যাইনি। তিথির হাতের দুমদুম কিল খাবার মানসিক প্রস্তুতি তো ছিলই, আর এই কয়দিন কোথায় ছিলাম সেইটার ব্যাখ্যা হিসেবে গোটা তিনেক মিথ্যে ঘটনা ও সাজিয়ে রেখেছিলাম মনের মধ্যে । তিথি সামনে আসলে সবগুলা গুবলেট পাকিয়ে যাবার ভয় ছিল অবশ্য। সে যাই হোক, বাউন্ডুলে হই আর যাই হই, সেইদিন বালিকার জন্য তার অতি সাধের সেই হালকা বেগুনি ফ্রকটা গিফট হিসাবে নিতে ভুল হয়নি, । গিফটটা পেয়েই অবশ্য বালিকার অশ্রুপ্রপাত বন্ধ হয়েছিল, তা বলাই বাহুল্য।


এখন রাতদুপুরে ঘুম ভেঙ্গে গেলে তিথির সাথে বিচ্ছেদের ওই কয়েক দিনের বোবা কষ্ট টা গলায় এসে দলা পাকানো কান্নার তোড়জোড় করেনা, আমাদের দুজনের আঙ্গিনা জুড়ে এখন রোদের দৌরাত্ম্য , মেঘ কেটে গেছে সেই কবে। সমস্ত অনুভুতিকে গ্রাস করা "কি জানি কিসের লাগি প্রাণ করা হায় হায়" এই অনুভুতিটা আর হামলা চালায় না মনের জানালায়। আমি জানি, এক জীবনে মানুষ খুব বেশি বদলাতে পারেনা নিজেকে। তবুও কেন যেন এই মেয়েটা বদ্ধ পরিকর, এই আমার বাউন্ডুলে পরিচয় টা বাদ দিয়ে আমাকে কোনভাবে জাতে তোলা যায় কি না। তাই মাঝপথে ছেড়ে আসা পড়ালেখা নামক আপদটাকে সাগ্রহে আবার গলায় তুলেছি। কে জানে তিথি নামক এক অসাধারণ মানবীর ভালবাসায় লেখা হলেও হতে পারে, একটা বসন্ত দিনের রূপকথা ।


((( মাঝে মাঝে গল্পের প্যারা ছেড়ে আশপাশের কারো জীবনেও লেগে যায় রূপকথা টাইপ লুতুপুতু ভালবাসার ছোঁয়া, এটা যাদের জীবনের গল্প, তারা ভাল থাকুক )))
৩৫টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×