বেশ কয়েক বছর আগের কথা, তখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমাদের সময়ে বিরিশিরি খুব আকর্ষনীয় একটা জায়গার মধ্যে ছিল। ঘুরতে যাওয়ার জন্য বিরিশিরি হলে কোনো কথা নেই! গারো পাহাড়ের সিঁথি বেয়ে নেমে আসা সোমেশ্বরী হচ্ছে তার মূল আকর্ষন। টলমলে চোখের মত স্বচ্ছ যার জল, জলবতী চোখের মতই মায়াবী। স্থানীয় পাহাড়ী মানুষগুলো সরল ও অতিথি বৎসল। একবার আমরা দুই বন্ধু ঠিক করলাম, নগরে তো বহুদিন হল, এবার একটু সোমেশ্বরীর হাওয়া জল খেয়ে আসা যাক! তৃতীয় এক বন্ধুও যোগ দিল, কিন্তু ও পরের দিন রওনা দিতে পারবে, ভালো কথা, তুমি পরের দিনই আস,- এই বলে আমরা দুইজন রওনা করলাম!
বিরিশিরির উৎরাইল বাজার যখন পৌছুলাম তখন রাত এগারোটার বেশী বাজে। স্থানীয় সময় হিসেবে তখন অনেক রাত। গন্তব্য YMCA রেস্ট হাউজ, আগে যতবার এসেছি, এখানেই উঠেছি। ওখানকার কয়েকজনের সাথে পরিচয় হয়ে গিয়েছে, আশা করি থাকার জায়গা পাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। তবে পৌছানোর পরে পরিবেশ একটু অন্যরকম লাগলো। পীত বর্ণের হাফ প্যান্ট পড়া অজস্র নারী পুরুষ চারপাশে হাঁটাহাঁটি করছে আর অবোধ্য কিচির মিচিরে মাঠ ঘাট গরম! আর যা শুনলাম তাতে তো চোখ ছানাবড়া, - ৩৪ জন জাপানি না কোরিয়ান এখন আর মনে নেই,- একসাথে এসে হাজির, - no vacancy! মানে? এত রাতে আমরা যামু কই? আরচু, এভারেস্ট দা, যারা YMCA’র স্টাফ, তাদেরই নাকি থাকার জায়গা নেই। আমরা কই থাকবো! আশে পাশে তখন আর কোনো হোটেলও ছিলো না।
দুই দোস্ত মিলে শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলাম, কুছ পরোয়া নেই, সোমেশ্বরীতে চলে যাব, রাতটা আরও ভালো যাবে। আরচুকে বললাম, তাহলে ভাল মানের কিছু পরিমান চু ম্যানেজ করে দেন। আরচু বয়সে বৃদ্ধ, গারো ভাষায় আরচু মানে খুব সম্ভবত দাদু। সবাই তাকে আরচু বলতো, আমরাও বলতাম। চু হচ্ছে বিরিশিরির পরবর্তী আকর্ষন,- একধরনের পানীয়। মুলত ভাত, সাথে নানাকিছু মাটির কলসে করে মাটির নিচে পুতে নির্দিষ্ট সময় ফার্মেন্টেশন চালান হয়, বাঁশের পাইপ দিয়ে কলস থেকে টেনে খেতে হয়। বহু ধরনের পানীয় পান করেছি, কিন্তু চু এর মত আর কিছু না। পেটে পড়লে উড়তে ইচ্ছে করে।
থাকার জায়গা দিতে না পারায় আরচু কিঞ্চিত দুঃখিত, মনোবেদনা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি লিটার দুই চুশুয়া ম্যানেজ করে দিলেন। এইটা নাকি ঘনীভূত চু, আরও জোশিলা! আমরা খুশিমনে মামের বোতল ভর্তি করে সোমেশ্বরী পাড়ে চলে আসলাম। সোমেশ্বরী প্রকৃতিতে পাহাড়ি নদী, পাড় ঘেঁষে বেশ বিস্তীর্ন সাদা বালির চর, বর্ষায় ঢল না নামলে অন্য সব সময় শুকনা থাকে। আমরা বালির মধ্যে খুঁজে খুঁজে একটা ভাঙ্গা নৌকার পাশে আমাদের রাত্রীকালীন খুটি পুঁতলাম। তার আগে যে হোটেল আমাদের পাহাড়ি খাসির মাংস খাইয়েছিল, সেই হোটেল থেকে পেট পুড়ে ভাত খেয়ে এসেছি।
আমরা ভাঙ্গা নৌকায় আমাদের ব্যাগপত্র রেখে চু পান সহযোগে সোমেশ্বরী মন্থনে মগ্ন হয়ে পড়লাম, আশাপাশে কোনো বাড়িঘর মানুষ জনের ইশারা ইঙ্গিত কিছু নেই। বেশ কিছুক্ষন ধরে নদীর সাথে সুখকর থ্রিসাম জলকেলী খেলা শেষ করে আবার পাড়ে বসে আছি। আকাশে ততক্ষণে চাঁদ এসে হাজির, সাদা ধবধবে বালি ঝলসে উঠছে তার কোমল আলোয়। সোমরস ঘুরছে হাতে হাতে, - চাঁদের আলো নাকি নদীর মায়া, নাকি নির্জনতার ঘোর নাকি রাত্রির নিমগ্নতা পান করছি জানি না, কিন্তু শিরায় শিরায় নাচ শুরু করেছে আরেক মাতাল নদী!
আমার বন্ধুর নাম ধরা যাক মাহিন, মাহিনকে আমরা ডাকি পাগলা। বন্ধুরা যখন খারাপ ভালো কোনো একটা নামে ডাকে তখন তার কিছুটা সারবস্তু থাকবেই, পাগলারও আছে। আমাদের মধ্যে ও কিছু কাজ জড়তাহীন নির্লিপ্ততার সাথে করে ফেলতে পারে। ও এখন যেটা করলো, - বিনা সঙ্কোচে জামা প্যান্ট পরনে যা ছিল খুলে ফেললো! আমার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শত ইচ্ছে হলেও হুট করে আমি এরকম কিছু করতে পারি না। তবে কেউ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে আমি তার সঙ্গী হতে দ্বিধা করি না। প্রথমে একটু শকড হইলেও আমি দ্রুত আমার শক কাটিয়ে উঠলাম এবং সত্ত্বর আমার যাবতীয় বস্ত্র বিসর্জন দিলাম। এবং আবিস্কার করলাম নিখাদ নগ্নতা সভ্যতা ঝেড়ে ফেলার জন্য এক দারুন টনিকের কাজ করে। নদীর সাথে, রাতের সাথে, চাঁদের সাথে যেন পুরোপুরি মিশে গেলাম,- আমিও এখন ওদের মত আদিম ও মুখোশবিহীন, শরীরের কোথাও কোনো বাহুল্য লেশমাত্র নেই। বাকি রাতটা আমরা খুব চুপচাপ নিজেদের মধ্যে ডুব দিয়েই কাটালাম। রহস্যময় অন্ধকারে নদীর বয়ে চলা স্রোত, নদীটাকে মনে হতে লাগলো যেন জীবন্ত, ওর বুকের সেতারে তোলা আছে ঝরে পড়া মেঘেদের সঙ্গীত। শুধু কান পেতে শুনে যাও। আবার মনে হতে লাগলো আমি যেন সেই আদিম মানুষটা, যে জন্মের পর কোনো দিন নদী দেখেনি, নদীর কথাও শোনে নি। হাঁটতে হাঁটতে বহুদূরে হারিয়ে গিয়েছে এক চাঁদজ্বলা রাতে। পথের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে এক রুপালী স্রোত, কলকল ঝিরিঝিরি মনমাতানো গানে আদিম মানুষটার কেমন লাগতো? আমার মনে হতে লাগলো আমিও বোধ হয় আগে কখনও নদী দেখিনি, প্রথম দেখার বিস্ময় নিয়ে ডুব দিতে ইচ্ছে করলো জলে। বেঁচে থাকাটা যে কী প্রচন্ড রকম অলৌকিক ও বিস্ময়কর, সেটা যেন প্রথমবারের মত ও সবথেকে তীব্রভাবে অনুভব করতে পারলাম!
''অমরত্বেরও মৃত্যু হবে নালন্দা, জোছনার জলজ-অন্ধকারে।
সোমরস পান করে ঈশ্বর নামছেন সোমেশ্বরী জলে
আমি দশমাস আরাধনায় জাইগা থাকবে সোমপুরে,
সোমেশ্বরী থেকে দূরে;
তুমি আসবে তন্দ্রায়, চন্দ্রা নদীর ওপারে;
আমি ঘুম-মন্দিরায় সুর তুলবো বাকি কয়মাস
টেরাকোটায় শিল্পিত খোদাইয়ের মাঝে।''
আবার একসময় সোমেশ্বরীকে মনে হতে লাগলো ভয়ানক রূপসী কোনো নারী, এমন মোহিনী, আমি আমার কোনো স্বপ্নে দেখা স্বপ্নেও দেখিনি,- যার মাদকতা রক্তে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে, কাব্য করে নদীকে নারীর সাথে তুলনা দিচ্ছিনা, কোনো নদী যে শরীরে কামোত্তজনার মত আগুন ধরিয়ে দিতে পারে সেটাই আমার নদীর সাথে প্রথম ও একমাত্র অভিজ্ঞতা।
চাঁদ ডুবে গেছে ততক্ষনে, পূব দিকে আলোর আভা, - আস্তে আস্তে ঘোর থেকে জেগে উঠলাম। চারপাশে প্রকৃতির মধ্যেও একটা পরিবর্তন আসছে এটা খুব ভালো করে বোঝা যাচ্ছে। আমরা সুশীল সভ্য ছেলেদের মত পোশাকগুলো আবার লটকে নিলাম শরীরে। গন্তব্য দুর্গাপূর, শরীর ক্লান্ত, থাকার একটা ব্যবস্থা করে ঘুম দিতে হবে। ফেরার পথেও একটা মজা হল, নদীর পাড় ঘেঁসে রাস্তায় ওঠার সময়, তখনও আলো ফোঁটেনি ঠিকমত, আরেক নৌকার পাশে আমরা সাদা জোব্বা পড়া একটা জীন দেখলাম! ওইটা একটা জীন, এইটা বোধগম্য হওয়া মাত্র আমরা দুই মাতাল দুই জনকে ধরে এক ছুট দিলাম! বিদ্রুপকারীরা বলতে পারে ভয়ে দৌড়েছি, সেটা আমি মনে করি ভুল হবে, আসলে মূল বিষয় হল ভোরবেলা জীনের সাথে সাক্ষাৎ করাটা মোটেই ভাল লাগে নি। দৌড় দেওয়াটা নিতান্তই আত্মরক্ষামূলক সতর্কতা। তবে রাস্তায় উঠেই আমরা আমাদের সামলে উঠতে পারলাম, যখন দেখলাম সাদা জোব্বা পড়া আরও কিছু মুসল্লি নামাজ পড়তে বের হয়েছে! তবে এবার ওদের চোখে বিস্ময়! আমরা দুইজন তরতাজা তরুন অবিন্যস্ত বেশভুষা, ঢুলুঢুলু চোখ, টলোটলো পায়ে কিভাবে নদীর মধ্যে দিয়ে উঠে আসলাম- এই সংক্রান্ত হাজারো প্রশ্ন ওদের মুখে ভোরের সূর্যের মতই স্পষ্ট হয়ে উঠছে! এরকম পরিস্থিতিতে পাগলা বন্ধু দূর্দান্ত, সে নিজে এগিয়ে গিয়ে সবাইকে উচ্চস্বরে বিশুদ্ধ উচ্চচারণে সালাম দিল- ‘আসসালামু আলাইকুম অয়া রাহমাতুল্লাহে অয়া বারকাতুহু’। ওনাদের লম্বা সালামের উত্তর নিতে নিতে আমরা পা চালিয়ে বহুদুর!
পরদিন বিকালে আমাদের তৃতীয় দোস্ত হাজির। ধরা যক ওর নাম রবিন, আমাদের মধ্যে বাইরে থেকে ওই সবথেকে রাশভারী টাইপের, টুকটাক লেখালেখি আঁকাআঁকির শখ আছে। সন্ধ্যার পরে আমরা যথাযথ প্রস্তুতি সম্পন্ন করে (ট্রিপল ডোজ চুশুয়া!) নদীর পাড়ে। আগের রাতের স্বর্গীয় অভিজ্ঞতা দোস্তকে না দেখালে তো ওর জীবনটা বৃথা হয়ে যাবে, আমরা বন্ধুরা থাকতে ওর জীবনটা কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা দিন বন্ধু জগত সংসারের তিন মহারাজ বনে গেলাম, দুনিয়ার কোনো কিছুতেই আমাদের আর কিছু যায় আসে না। দুই জনে মগ্নতা আসে, তিনজনে আসে উল্লাস। কিছুক্ষনের মধ্যেই পাগলা বন্ধু যথারীতি বস্ত্র বিসর্জন দিল, তার সাথে আমিও যোগ দিলাম। এই দফা রবিন বেশ থতমত খেয়ে গেল, মোটা চশমার মধ্যে দিয়ে গোলগোল চোখে তাকিয়ে বলতে লাগলো- এই তোরা কী করছিস? এই তোরা কী করছিস? ওকে পাত্তা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, বরং আমরা ওকেও বস্ত্র বিসর্জনের প্রস্তাব দিলাম। সে লাজুক প্রতিরোধে জানালো,- সেটা সম্ভব না। কিন্তু সেটা তো হতে পারে না, ওকে তো এই আদিম স্বর্গে পোশাক পড়ে ঢুকতে দেবে না,- আমরা বন্ধুরা থাকতে তো ওর জীবনটা ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। আমরা তার উপরে প্রবল ঝাঁপিয়ে পড়ে তার বস্ত্র হরণের প্রচেষ্টায় নিমগ্ন হলাম! সে প্রচুর চিৎকার করলো, গালি দিল, অতঃপর একসময় দুইজনের বিক্রমের কাছে পরাজিত হয়ে বালির মধ্যে শরীর ঢেকে বসে রইলো। ওকে আমরা আরও কিছু সোমরস পান করালাম, সে কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বাভাবিক হতে পারলো এবং আমাদের সাথে নদী বিহারে যোগ দিল। ন্যাংটো অবস্থায় ওর চোখের পুরু চশমাটা খুব বেমানান লাগায় চশমা নিয়েও আপত্তি জানানো হল, - এইদফা বন্ধু খুব আনন্দের সাথেই চশমা বিসর্জন দিল। দুইজনে মগ্নতা, তিনজনে হৈচৈ, এর প্রমান রাখার জন্যই কিনা জানি না, পাগলা দোস্তের মাথা পুরোপুরি গরম হয়ে গেল। সে ঘোষণা করলো যে সে আর এই সভ্য সমাজে বাস করতে চায় না, সে সোমেশ্বরীর জলে ভেসে যাবে। ন্যাও ঠ্যালা, পাগল সামলাও এবার। সে নদীর মাঝখানে গিয়ে হাত পা ছেড়ে ভেসে পড়তে চায়। খুব বেশী পানি নেই, কিন্তু স্রোত আছে অনেক। এর মধ্যে ও ভেসে গেলে কী কেলেঙ্কারিটা হবে! সেইটা আমরা দুইজন বুঝলেও পাগল কী আর বোঝে? ও যতবার ভেসে যেতে চায়, ততবার আমরা ওর হাত পা চ্যাংদোলা করে ডাঙ্গায় তুলে নিয়ে আসি। আর ও আমাদের বাপ-মা-দাদা-দাদী ৭২ জেনারেশন ধরে গালি দিতে থাকে, আর চিৎকার- ‘তোরা আমারে ছাইড়া দে, তোরা আমারে ছাইড়া দে’! এইরকম চললো বেশ কিছুক্ষন। আবার আমরা ওকে যখন মাঝ নদী থেকে তুলে আনার চেষ্টা করছি, তখন হঠাৎ দেখলাম দুরের পাড় ঘেঁষে টর্চ জ্বালিয়ে একদল মানুষ আসছে। ওদের উচ্চ স্বরের কথা শোনা যাচ্ছে, - নদীর পাড়ে এত রাতে কারা,- এই খবর নেওয়ার জন্য তথ্যানুসন্ধানী একটা দল আসছে বোঝা গেল। আমরা পানির মধ্যে সাথে সাথে জমে গেলাম। সর্বনাশ! রাতে খাবার হোটেলে শুনে আসা কথাটা মনে পরে গেল। আমরা রাতে নদীর পাড়ে যাব শুনে হোটেল ওয়ালা বলেছিল যে কিছুদিন আগে নাকি নদীর পাড়ে খুন হয়েছিল, আমরা গেলেও যেন খুব সাবধানে থাকি। যথারীতি আমরা ওর কথা পাত্তা দেই নাই। এখন যে আমরা জমে গেলাম সেটার কারন এটা নয় যে আমরা ভাবছি যে ওরা আমাদের তিনজনকে মেরে ফেলবে, সমতলের সংবদ্ধ হিংস্রতা পাহাড়িদের মধ্যে দেখি নাই। আমাদের জমে যাওয়ার মূল কারন হচ্ছে আমাদের পোশাক সবার ডাঙ্গায়, আমরা এখন যদি পাড়ে উঠে পোশাক উদ্ধার করতে যাই, তার আগেই ওদের আলো খেয়ে আমাদের মান সম্মানের সলিল সমাধি হয়ে যাবে। আবার ওরা যদি আমাদের কে পানির মধ্যে খুজে পায়, আমাদের অবশ্যই সারেন্ডার করে ডাঙ্গায় উঠে ওদের কে পরিচয় দিতে হবে, সেটারও উপায় নেই, আবারও সেই মান সম্মানের প্রশ্ন! আমরা পাগলাকে কোনোরকম ঠান্ডা করে ডুবুরী স্টাইলে নাক উচিয়ে নদীর আরও গভীরে ঢুকে নাক ভাসিয়ে দুরু বুকে অপেক্ষায় রইলাম। মনে মনে দোয়া দরুদ যা মনে আছি পড়ছি সমানে, ওরা আমাদের না পেয়ে যদি পাড়ে আমাদের পোশাকও পায়, তাহলেও আমরা ধরা, তখন গিয়ে কাপড় উদ্ধার করার জন্য হলেও আমাদের ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। এইবার আমরা মনে মনে ইচ্ছে মত গালি দিচ্ছি পাগলাকে, - ওর “তোরা আমারে ছাইরা দে” টাইপ চিৎকার শুনেই নিশ্চয় ওরা এসেছে, ভাবছে আজকে আবার কে কারে খুন করে ফেললো!
যাই হোক, এই জন্মের তো কোনো পূন্যের কথা মনে করতে পারি না, নিশ্চয় গত জন্মের কিছু ছিল, এই জন্য ওরা আমাদের বা আমাদের কাপড় কিছুই পেল না, কিছুক্ষণ এদিক অদিক টর্চ মেরে বিদায় নিল, আমরাও হাঁপ ছেড়ে নদী থেকে উঠে আসলাম। উঠে পাগলাকে একটা স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দেওয়া হল, সেইটা আর এই বেলা বলছি না। তবে ও আর চিৎকার চেঁচামেচি না করে বেশ শান্ত হয়ে গেল!
পরের দিন সোমেশ্বরীর একটা দুর্লভ রূপ দেখেছিলাম, সেটা হল পাহাড়ি ঢল, ঢল নামলে এই সোমেশ্বরীকে আর চেনা যায় না, নদীর প্রশস্ততা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ, এপাড় থেকে ওপাড় দেখাটাই কষ্ট, আর স্রোতের তোড়ের কথা নাই বললাম। তবে পরের ও শেষ রাতে আমরা নদীতে হাঁটু ডোবানরও সাহস পাইনি। এর আগে আমরা দেখিয়েছিলাম সোমেশ্বরীকে আমাদের মাতাল রুপ, সোমেশ্বরী আজ দেখালো তার ভরা মাতাল রূপ, তার সামনে নিজেদের মনে হল অতি তুচ্ছ, সামান্য, ওর এই প্রবল বয়ে চলার পাশে আমাদের আলাদা কোনো অস্তিত্বই নেই, আমরা বিষয়টা সম্যক উপলদ্ধি করতে পেরে সুরসুর করে আবার ফেরত আসলাম নগরে।
*** কবিতা কবি শামীম রেজার, দূর্জয় ভাইয়ের সৌজন্যে যার সাথে পরিচয়!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৪