somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদালত অবমাননার অভিযোগ অস্বীকার করে বক্তব্যের স্বপক্ষে অবস্থান নিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেহেদী হাসান, ১০/১০/২০১৩
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচার নিয়ে টিভি টকশোতে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার স্বপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তিনি। আদালত অবমাননার অভিযোগ বিষয়ে দাখিলকৃত লিখিত জবাবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কোন ধরনের দু:খপ্রকাশ বা নিজের বক্তব্যকে ভুলও বলে স্বীকার করেননি।
আদালত অবমাননা বিষয়ে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন তিনি ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী কোন অপরাধ করেননি টকশোর বক্তব্যের মাধ্যমে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ বিষয়ে আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ শুনানীর জন্য ধার্য্য ছিল। এ উপলক্ষে সকালে তিনি ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। তিনি তার পক্ষে কোন আইনজীবী নিয়োগ দেননি। নিজের বক্তব্য নিজেই উপস্থাপনের জন্য লিখিত আকারে নিয়ে আসেন এবং আদালতে তা দাখিল করেন। তবে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহসহ অপর অভিযুক্তরা ট্রাইব্যুনালে না আসায় আজ শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি।

সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর পক্ষে সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন এর সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন হাজির হয়ে বলেন, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তাই তিন সপ্তাহ সময় দরকার। এছাড়া চ্যানেল ২৪ এর অপরাপর অভিযুক্তদের পক্ষে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান হাজির হয়ে সময় আবেদন করেন। আদালত তাদের আবেদন গ্রহণ করে শুনানী এবং হাজিরার জন্য আগামী ৬ নভেম্বর পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাথে দার্শনিক ফরহাদ মজহার, রাজনীতিবিদ আসম আব্দুর রব, নারীনেত্রী ফরিদা আখতারসহ বিপুলসংখ্যক ভক্ত ট্রাইব্যুনালে আসেন।

লিখিত জবাব :
ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে লিখিত বক্তব্য কোর্টে দাখিল করেছেন তাতে তিনি লিখেছেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত আদালত অবমাননার অভিযোগের উত্তরে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে দ্বিধাহীন কন্ঠে নি:সংকোচে আমি বলতে চাই যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে ১৮ সেপ্টেম্বর মুক্তবাক অনুষ্ঠানে খোলামনে আলোচনা করে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১১(৪) ধারা মোতাবেক কোন অপরাধ করিনি, আমি মনগড়া কোন মিথ্যা বক্তব্য দেইনি, কল্পকাহিনী সৃষ্টি করিনি এবং আদালতের কার্যক্রমে কোনভাবে বাঁধাও সৃষ্টি করিনি। জনগনের মনে আদালত সম্পর্কে অনাস্থা ও ঘৃনা সৃষ্টি করিনি। বরঞ্চ জনগনের বক্তব্যসমূহ পুনরুল্লেখ করে সমস্যার প্রতি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমি আদালতের সুহৃদের কর্তব্য পালন করেছি। জনসম্মুখে কোন চলমান মামলা সম্পর্কে আলোচনা বা বক্তব্য কিংবা মন্তব্য করলেই তা সাবজুডিস হয়না।

লিখিত জবাবে জাফরুল্লাহ চৌধুরী উল্লেখ বলেছেন, ‘বিচারপতি হাসনাইনের জবানবন্দী শুনতে চাই’ শিরোনামে ২ অক্টোবার প্রথম আলোতে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে ২২ জুলাই প্রধান বিচারপতির কাছে লেখা চিঠিতে বিচারপতি শামীম হাসনাইন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে এটি সম্ভবত একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এই চিঠিতে লেখা হয়েছে, এটা সত্য যে একাত্তরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আগস্ট পর্যন্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছিলেন।

চ্যানেল ২৪ এ করা বক্তব্যের স্বপক্ষে জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন, স¤প্রতি মাননীয় আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ্বকে কর্মশালায় বলেছেন, সপ্রীম কোর্টের বিচার প্রাথীদের ভোগান্তির শেষ নেই। ফাইল জমা দিতে, শুনানীতে, মামলা কার্যতালিকায় নিতে, আদেশের কপি পেতে বিভিন্ন ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হন বিচারপ্রার্থী জনগন। তিনি বলেন, নিন্ম আদালতের চিত্র তো আরো ভয়াবহ, কোর্টের ইটও নাকি টাকার জন্য হা করে থাকে। এ অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। কোন কোন ক্ষেত্রে দুনীতি আরো বেড়েছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। এ অবস্থার পরিবর্তন চাই। বিচার বিভাগের প্রতি কতকাংশ মানুষের আস্থার অভবা দেখা দিয়েছে......।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরো একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন তার লিখিত জবাবে।
১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা ট্রিবিউনে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন এর বক্তব্য দিয় শিরোনাম করা হয়েছে । শিরোনামটি হল ডু নট পে ব্রাইবস টু জাজেস (বিচারকতের ঘুষ দেবেননা)।
এসব বক্তব্য উদ্ধৃতি করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রশ্ন করেছেন আইনমন্ত্রীর এ সত্য ভাষনের জন্য কি সুপ্রীম কোর্টে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হবে?
বিচারপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে কি বিচারকদের সম্মানহানি হয়েছে? বিচারকদের প্রতি কি জনসাধারনের অনাস্থা সৃষ্টি হবে?

জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন, আমি বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। দেশবাসী মনযোগ দিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যক্রম লক্ষ্য করছে এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছে। এটা তাদের অধিকার। আমিও এ সম্পর্কে বক্তব্য রেখেছি। এতে আদালতের বিচারকার্য বিঘিœত হয়না। এ ধরনের প্রকাশ্য আলোচনার উদ্দেশ্য জনগনের মনে ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে ঘৃনা ও অনাস্থা সৃষ্টি নয়। বরং বিচারের প্রতি জনগনের আস্থা ও শ্রদ্ধা বাড়ানো।
যুদ্ধাপরাধ বিচারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে তিনি লিখেছেন, মাননীয় বিচারপতিগন, আমি আশা করছি আমাকে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে রেহাই দিয়ে আমার বাক স্বাধীনতার অধিকারের স্বীকৃতি দেবেন। আমি আদালত ও ন্যায় বিচারকদের প্রদি সবসময় শ্রদ্ধশীল।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর চ্যানেল-২৪ এ রাত ১১টায় প্রচারিত মুক্তবাক নামক টকশো অনুষ্ঠানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলছে, সে নাকি ছিলই না। এর পক্ষে সে চারজন সাক্ষী মেনেছে। একটা তো বললাম, আমাদের সালমান, আরেকজন হলেন হাইকোর্টের একজন সিটিং জাজ। তিনি (হাইকোর্টের বিচারপতি শামীম হাসনাইন) বলেছেন তিনি স্যা দিতে চান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে। সাক্ষ্য দেয়ার অনুমতি চেয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে দরখাস্ত দিয়েছেন কিন্তু অনুমতি পাননি। তাকে অনুমতি দেয়া হয়নি এই যে জিনিসটা এর ফলে কী হবে? সন্দেহটা কিন্তু মানুষের মনে থেকেই যাবে। আইনে বলে দশজন আসামি খালাস পেয়ে যাক, কিন্তু একজন নিরপরাধ যেন শাস্তি না পায়। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মনে প্রানে ঘৃণা করি আমি। এই লোক দাবি করেছে, সে (ঘটনার সময়) ছিল না। সে হাসনাইন নামের এক জজ সাহেবকে সাী মেনেছে। সেই জজ সাহেবকে কেন সাী দিতে দেননি, এটাকে যদি না দেয়া হয়, তাহলে কি বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদবে না?’

এ বক্তব্যের জের ধরে টকশোতে অংশগ্রহণকারী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, অনুষ্ঠান সঞ্চালক মাহমুদুর রহমান মান্না ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল-২৪ এর সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের বিরুদেধ বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২৬ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ তাদের বিরুদ্ধে রুল জারি করে ১০ অক্টোবর হাজির হওয়ার জন্য। একই সাথে কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা মর্মে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।










২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×