হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গা পূজা। এখন বাঙালির সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। একটু সময় করে আপনিও দেখে নিতে পারেন দূর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ঢাকার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ও চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় দুর্গা উৎসব নিয়ে এই প্রতিবেদন।
Published : 11 Oct 2013, 09:10 AM
ঢাকেশ্বরী মন্দির
রাজধানীর সবচেয়ে বড় দুর্গোৎসব হয় ঢাকার প্রাচীনতম ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত এখানে চলে পূজার সব রকম আনুষ্ঠানিকতা। দূর্গা পূজা দেখার সঙ্গে সঙ্গে দেখে নিতে পারেন ঢাকার অন্যতম ঐতিহ্য এ মন্দিরটিও। মূল পূজা মণ্ডপের পেছনে পুরনো মন্দিরটির অবস্থান।
অনেক ঐতিহাসিকের মতে ঢাকেশ্বরী থেকেই ঢাকা নামের উৎপত্তি। বর্তমানে এখানে ৪টি শিবমন্দির আছে। এর নির্মাণশৈলী অনেকটা বৌদ্ধ মন্দিরের মতো। এগুলো তৈরি করেছিলেন সেনাপতি মান সিংহ। কিংবদন্তি আছে ষোড়শ শতকে তিনি এখানে শিবলিঙ্গ স্থাপন করে মন্দির ৪টি নির্মাণ করেন।
রমনা কালী মন্দির
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দক্ষিণ প্রান্তে রমনা কালী মন্দিরেও ঘটা করে পালন করা হয়ে দুর্গা উৎসব। বেশ পুরনো এ মন্দির ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী ধ্বংস করে ফেলে। পরে এখানে আর বড় কোন স্থায়ী মন্দির নির্মাণ করা না হলেও দুর্গা পূজা পালন করা হয়। পূজার আগে রমনা এলাকায় নির্মাণ করা হয় বড় আকারের অস্থায়ী মন্দির। যা বাঁশের তৈরি, ঢেকে দেওয়া হয় রঙিন কাপড় দিয়ে।
রাম কৃষ্ণ মিশন মন্দির
রাজধানীর রাম কৃষ্ণ মিশন সড়কে রয়েছে রাম কৃষ্ণ মিশন ও মঠ। শ্রীরামকৃষ্ণের আদর্শ প্রচারের উদ্দেশ্যে ঢাকার এ মিশনটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৯ সালে। ১৯১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার বেলুর মঠের স্বীকৃতি লাভ করে। এখানকার মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। যা প্রতিবছর মহা অষ্টমীর দিনে এ মন্দিরে পালন করা হয়। এক কিশোরী কুমারীকে দেবীর আসনে বসিয়ে মাতৃরূপে পূজা-অর্চনা করা হয়। ঢাকের বাদ্য, শঙ্খের ধ্বনি, কাঁসার ঘণ্টা, আর উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে কুমারী মাকে পরিয়ে দেয়া হয় পুষ্পমাল্য।
বনানী পূজা মণ্ডপ
বনানী মাঠে গত কয়েক বছর ধরে পালন করা হচ্ছে শারদীয় দূর্গা উৎসব। এটি এখন ঢাকার সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় পূজামণ্ডপ। কাঠের তৈরি অস্থায়ী এ মণ্ডপ আকর্ষণীয় করে নির্মাণ করা হয় প্রতি বছর। ষষ্ঠী থেকে দশমী— প্রতিদিনই এখানে নানান আয়োজনে চলে পূজা। দশমীর দিন বিকেলে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা গুলশান-বনানী এলাকা ঘুরে দেবী দুর্গাকে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় আশুলিয়ায়।
কলাবাগান পূজামণ্ডপ
রাজধানীর কলাবাগান মাঠে বসে আরও একটি আকর্ষণীয় পূজামণ্ডপ। কয়েক বছর ধরে এটিও অস্থায়ীভাবে তৈরি করা হচ্ছে। ধানমন্ডির কলাবাগান এলাকায় বসবাসরত হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্যোগে এই আয়োজন চলে। উৎসবের দিনগুলোতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে জড়ো হন পূজা দেখতে।
এছাড়াও ঢাকার লক্ষীনারায়ণ মন্দির, জয়কালী মন্দির, ঢাকা ব্রাহ্মসমাজ মন্দির, গৌড়িয়া মঠ, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরসহ পুরনো ঢাকার সব মন্দিরেই জাকজমক ভাবে শারদীয় দূর্গা পূজা পালন করা হয়।
শাঁখারিবাজার
দূর্গা পূজা দেখার জন্য যেতে পারেন পুরনো ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়। সেখানকার সবচেয়ে বড় আয়োজনে পূজা পালন করা হয় শাঁখারিবাজারে। এই এলাকায় বেশ কয়েকটি মণ্ডপে পূজা হয়। পুরনো মন্দির ছাড়াও রাস্তার উপরে, দুপাশে বসে বেশ কয়েকটি মণ্ডপ। দুর্গা পূজার সময় পুরো এলাকাটি ভিন্ন রূপ পায়। পূজার দিনগুলোতে শাঁখারি বাজার রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। তাই হেঁটে হেঁটে দেখা যায় এখানকার মণ্ডপগুলো। শাঁখারি বাজার ছাড়াও পুরনো ঢাকার তাঁতী বাজার, সূত্রাপুরের সর্বত্রই দূর্গা পূজা ধুমধামের সঙ্গে উদযাপিত হয়।
বুড়িগঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন
প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দূর্গা পূজার সমাপ্তি ঘটে। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি প্রতিমা বিসর্জন হয় বুড়িগঙ্গা নদীতে। হিন্দু পুণ্যার্থীরা বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা এনে পুরনো ঢাকার ওয়াইজ ঘাটে দেবী বিসর্জন দেন। এখানকার বিনাস্মৃতি ঘাটে চলে প্রতিমা বিসর্জন। এ সময় বুড়িগঙ্গার দুই তীরে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বিসর্জন। নৌকা ভাড়া করে কিংবা সদরঘাটে থামানো কোনো লঞ্চে উঠে সহজেই দেখতে পারেন প্রতিমা বিসর্জনের এ মহোৎসব।
পতেঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন
শারদীয় দুর্গোৎসবের দিন সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বসে হিন্দু সম্প্রদায়ের মিলনমেলা। হাজার হাজার পুণ্যার্থী এদিন দেবী দূর্গাকে বিসর্জন দিতে সৈকতে সমবেত হন। এত বড় প্রতিমা বিসর্জন উৎসব বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এই উৎসব দেখতে আসেন। পূজার শেষ দিনে দুপুর থেকেই নগরীর বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিমাবাহী ট্রাকের বর্ণিল শোভাযাত্রা শুরু হয়। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে গিয়ে শেষ হয় শোভাযাত্রা। এরপর শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের পালা। ঢাক, ঢোল, কাঁসা ঘণ্টাসহ নানা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ‘জয়, দুর্গা মায়ের জয়’ ধ্বনি তুলে একের পর এক প্রতিমা সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
আলোকচিত্র: মুস্তাফিজ মামুন ও সুমন বাবু