somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিল্পী এসএম সুলতান আমাদের কাকু হতেন

১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিল্পী এসএম সুলতান আমাদের কাকু হতেন
.........................
চারুকলায় যখন পড়তাম, প্রায়ই যেতাম মাছিমদিয়ায় (রুপগঞ্জ, নড়াইল চিত্রা নদীর পাড়ে, ভিক্টোরিয়া কলেজের মাঠ পেরিয়ে, নিশিনাথতলার বটগাছের নিচ দিয়ে)। লাল মিয়ার বাড়ি। লাল মিয়ার পালিত পুত্র তখনকার আর্ট কলেজ-স্টুডেন্ট দুলালদা ( দুলাল দা নিহারবালার ভাই, নিহারবালা হচ্ছেন লাল মিয়ার দেখভালের নারী প্লাস কন্যাসম)) তাকে কাকু বলে সম্বোধন করতেন। আমরা, বন্ধুরাও তাই লাল মিয়া ওরফে শিল্পী এস এস সুলতানকে কাকু বলে ডাকতাম। কাকুর সঙ্গে অনেক ছবি তোলা আছে আমাদের, সে-বয়েসের। কাকু কিছু ড্রইংও করে দিতেন আমরা আমাদের ড্রইংখাতা (কার্টিজপেপারের) তাঁর সামনে বাড়িয়ে দিলে। তখন বুঝিনি তেমন, শিল্পী এস এম সুলতান সাই সাই করে আঁকিবুকি করে দিচ্ছেন আমাদের স্কেচ-স্টাডি খাতায়। সে-সব ছবি বা খাতা আজও আছে আমার কাছে, আমার সে-সময়ের চারুকলার বন্ধুদের কাছেও থাকতে পারে। ঢাকা থেকে বন্ধুরা আসব, বিশেষ করে কাকুর জন্মদিনে। ডিউক ( নাসিমুল খবীর), আতিক (নূরুল আলম, সৈয়দ তারিফসহ অনেকেই।
কাকু ছিলেন নড়াইল অঞ্চলের বাউল কিন্তু 'সুলতান'। জন্মদিনের রাতে সারারাত তার বাড়িতে একদল শিল্পী সানাই বাজাত পরেরদির দুপুর পর্যন্ত। দুপুরের পর সুলতান কাকুকে পালিত কন্যা নিহারবালা দেবী চেয়ারে বসিয়ে সাজুগুজু করিয়ে দিতেন। পরিপাটি কিন্তু বাউলা-আলখাল্লা ধরনের পোশাক পরিয়ে দিতেন। এরকম পোশাক আমার দুজন পরিচিত খাতিরের লোককে আমি পরতে দেখেছি। একজন মহাত্মা ছফা, আরেকজন মহাত্মা রবীন্দ্রনাথ। তবে, জন্মদিনে, সুলতানের পায়ে সিঁদুর দিয়ে লাল করে দিতেন নিহারবালা দেবী। নিজে তিনি শিল্পীকে গোসল করিয়ে তার আলখাল্লা পোশাক পরাতেন। তিনি বলতে নিহারবালা, আমাদের দিদি, দুলাল দা'র বোন। দুলাল দার দুটো সোমত্ত ভাগনিও ছিল বাড়িতে, একটার নাম পদ্মা, অন্যটা বাসনা। সাজুগুজু হয়ে গেলে সুলতান হয়ত গিয়ে দাঁড়াতেন তার বাড়ির পেছনের চিত্রাপাড়ে। নদীর দুপাড়ের অপেক্ষমাণ শতশত নারী-কিশোরী তখন উলুধ্বনিতে মুখর করতে ফেলত চারপাশ। ঢাকের বাড়ি, সানাইয়ের সুর-শব্দে পরিপার্শ্ব মন্দ্রিত তখন। সুলতান চেয়ারে বসলে অসংখ্য নারী সুলতানের পায়ে গড় হয়ে প্রণাম করতেন উলুধ্বনির ভেতর। এরকম 'জন্মদিন উৎসব' আমি আর কারো হতে দেখিনি আজও, এই বাংলায়। এই হচ্ছেন শিল্পী এসএম সুলতানের সাম্রাজ্য। আজকের হাই ডেফিনেশন রেজুলেশনের লোকেরা হয়ত অনেকে এসব কথা বিশ্বাসও করবে না। আমরা কাকুর সঙ্গে একই ভ্যানে উঠে মাছিমদিয়া থেকেই একটু দূরে তার বাগান দেখতে যেতাম। সেখানে অসংখ্য গাছ ছিল। শুনেছি, সুলতান কাকুর মৃত্যুর পর সেখানে মিউজিয়াম হইছে।
ঢাকায়, ধানমন্ডির বেঙ্গল গ্যালারিতে কাকুর জীবনের এক্কেবারে প্রথম দিককার পেন্সিল+ চারকোল ড্রইং, ওয়াটার কালার-স্টাডিসহ অনেক কাজ প্রদর্শিত হচ্ছে। সুলতানের কাজের মূল্য আজ লক্ষ-লক্ষ টাকা। সেদিন আমরা তেমন বুঝিনি, তেমন পাত্তাও দিইনি, সুলতানের বাড়িতে যাওয়া-আসা করেও। সেদিন বরং আমরা সুলতানের বাড়িতে গেলেও, ওখানকার চিত্রা নদী দেখার নেশায় বেলা কাটিয়ে দিয়েছি এবং খিদে লাগলে লাল মিয়ার বাড়িতে, কাকুর সঙ্গেই একই ডাইনিং টেবিলে বসে খেয়ে-দেয়ে, কাকুর সঙ্গে কিছুটা কনস্টেবল-টার্নার-পিকাসো-দালি-জয়নুল সাহেব ও বাংলার কৃষক কালচার করেই আবার বেরিয়ে পড়তাম চিত্রাদের ঢেউ দেখতে। বয়সটাই সে-রকম। কোথায় আজ সেইসব ফ্রক পরা চিত্রা নদীরা? ছফা ভাইকে দেখতাম সুলতানের বাড়িতে, হজরত আহমদ ছফার সঙ্গে তখনও আমার খাতির হয়নি, খাতির হলো পরবর্তীতে, আমি ঢাকায় চলে আসবার পর। দেখতাম, ছফা সুলতানকে মাঝেমধ্যেই ভর্ৎসনা করছেন। সুলতান সে-ভর্ৎসনা গ্রহণ করতেন। ছফা যদিও সুলতানের চেয়ে বয়সে জুনিয়র। ছফার লেখা 'যদ্যপি আমার গুরু'তে সুলতান-ছফা-আব্দুর রাজ্জাককে ধরা যাবে।
গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে এসব কথাই মনে পড়ছিল। তখন।
ফটোগ্রাফি: শাশ্বত মিত্র
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৫৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×