somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুকভরা মোর কান্না দিয়ে দিলাম চিঠি লিখে---জং ধরা চিঠি---“প্রিয়তিনী”---(২য় ও শেষ পর্ব)

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রিয়তিনী,
আমি অন্তত এটুকু বুঝিয়া লইয়াছি যে, বিশ্বসংসারে যে খুব একাকী হইয়া যায়, খুব নির্লিপ্ত হইয়া যায়, এমনকি তার নিজস্ব আত্মসমর্পনও যখন কোন বা কারো অধিকারের জন্য পূজিত হয় না তখন তার জীবন বড় বন্ধুর, বিদীর্ণ তটের মতো হইয়া যায়। অকাল বৃন্তচ্যূত পুষ্পমঞ্জরীর ন্যায় জীবন বিসর্জিত হয় জীর্ণশীর্ণ কবোলিত নির্ভৃত আত্মবেদনায়। তার জীবন ধূসর ধূম্রনীলের মতো মেঘের মধ্যে কোথায় মিলিয়া যায়। তখন কোথায় আরম্ভ করিবে, কোথায় শেষ করিবে, কোনটা ত্যাগ করিবে আর কোনটা রাখিবে এসমস্ত হিসাব করিবার সময় থাকে না।

অথচ সমস্ত কিছুকে অতিক্রম করিয়া হইলেও মানুষ সৌম্যসুন্দর, শান্তশীতল, অনন্ত ভূবনমোহন জীবনের স্বপ্ন দেখিয়া থাকে, আর এসব কিন্তু মানুষের জীবনেরই অতি প্রকৃত ভাস্য। কিন্তু তুমি, আমি, আমাদের মতো যাদের কোন ভাল সঙ্গী নেই, নিদিষ্ট কোন ভরসা নেই, নেই কোন স্বপ্ন দেখায় আকাঙ্খা, যাহাদের জীবনস্রোাত নিশিদিন কেবল অনির্দেশ লক্ষ্যে ধাবিত হইয়া চলিয়াছে, তাহাদের পতন ঠেকাইবে কে বলিতে পারো?

প্রিয়তিনী, শুধু শুধু যোগিনী সাজিয়া নিরন্তর ক্ষয়িষ্ণু ধূপ জ্বালিয়া নীরব উপাসনা করে যে সব ভীরুরা, তাহাদের অবস্থান কোথায় গিয়া থামিবে তুমি আমাকে একটু বলিয়া দিও তো! তোমাকে লইয়া যে রাগ-বিরাগের গৌরব আমি করি তাহা বোধকরি আমার দোষেই তোমাকে বুঝাইতে পারি না, আমার বর্ণচ্ছটা মনিমালিকা হয়তো আমারই ভুলের জন্যে তোমার হৃদয়পুষ্পকাননে আশ্রয় পায় না, তোমার জন্য আমার যাহা কিছু, তুমি হয়তো ভাবিয়া লও তাহা রূপক মাত্র। তাই আমার সমস্ত অনুভব সে হউক আনন্দের কিংবা বিরহের, তাহা সবকিছু আমাকে ঘিরিয়া থাকে অষ্টপ্রহর, আমাকেই জড়াইয়া আবর্তিত হয় বহুকালপ্রবাহে। আমিও তাহাই চাই, নির্বাণোন্মুখ প্রদীপের মতো স্ফুরিত থাকুক আমার অন্তরে, গহ্বরে। যদি কোন কালে কোন সময়ে মানুষের প্রকৃত ছোঁয়া পায় সেদিন হয়তো ঝরঝর করিয়া আলোকচ্ছটায় ভরিয়া দিবে দিকবিদিক, চারদিক।

আমার হৃদয়কে লক্ষ্য করিয়া যে চক্রাকার সিঁড়ি ঘুরপাক খাইতেছে অহরহ, সেখানই আমার সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, শান্তি-বিরহ, উৎসাহ-ব্যাথা, কষ্ট-তুষ্টি সবকিছু অনাদিকাল, আমরণ চলিতে থাকুক। তাহা হইলে আর ইহকাল আমার কণ্ঠরুদ্ধ করিতে পারিবে না। কিন্তু সবকিছুকে দুরে ঠেলিয়া দিয়া কি স্থির থাকা যায়?

তাই বলি,একটি হাস্যধ্বনি ভরা মধুর জীবন, যেখান থেকে অন্ধকারের মেঘ মুহর্তের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হইয়া যাইবে, কোন চৈতি সন্ধ্যায় সুললিত দখিণার স্পর্শ মন ব্যাকুল করিয়া দিবে, সেই সমতটের জীবনে সুখ ঢালিয়া দিতে প্রাণ চঞ্চল আর অস্থির হইয়া ওঠে। তুমি হয়তো বলিবে, “সোনার ফুলদানির চাইতে গাছেই ফুলকে মানায় বেশি” কিন্তু যাহা হইতে বঞ্চিত হইয়া যে সুখ পাওয়া যায়, শুভদৈবক্রমে পুণরায় সেখানে দু-বাহু প্রসারিত করিলে মাঝে মাঝে সেই সুখ থাকিয়াও যাইতে পারে।

তাই বলি,----------
এ কেবল ছন্দহীন মায়া
এ কেবল স্বপ্নহীন ছায়া
এ কেবল মায়াহীন জীবন
এ কেবল ছায়হীন স্পন্দন
জীবন সে তো বেঁচে থাকার আশা
মায়া সে তো মনে রাখার তৃষা
আশার আলো মুখ ফিরিয়ে নেয়
তৃষার জ্বালা প্রাণ পুড়িয়ে দেয়।

প্রিয়তিনী,
আমার কথা যদি স্বপ্নেও তোমার মনে উঁকি দেয়, তাহা হইলে কোন নির্জন রাতে মায়াভরা চাঁদ হইতে একমুঠো কিরণ নিয়া হৃদয় ভরিয়া লইয়ো। যাহার ভিতর দিয়া পথ চলা প্রতিদিন, বিন্দু বিন্দু সুখ কিংবা ছোট ছোট দীর্ঘঃশ্বাস, জীবনকে প্রসারিত করিতে প্রতিনিয়ত সাহায্য করিতেছে যে সমস্ত নিগূঢ় অনুভূতি, সেই সব অমূল্য অলঙ্কার দিয়ে মনের আঁধার ঘুচাইয়া লইয়ো।

আমি?
আমি তো আকন্ঠ ডুবিয়া থাকি সুন্দরকে দেখিবার নেশায়, যাহা রহিয়াছে উড়ন্ত পাখির ঝাঁকে, রাস্তার কলের ধারে স্নানরত ভিখিরি শিশুদের উল্লাসে, কিংবা প্রগলভা নারীর নটভঙ্গীতে। এই চিত্রপট ঈশ্বরের, সারাদিন তিনি ইহার উপর মায়ার খেলা খেলিয়া চলিয়াছেন। ওই-ই আমার প্রেরণার উৎস, ওই-ই আমার বাঁচিয়া থাকা। কে বলিবে আমি আর কোন দিন সাগরের জল স্পর্শ করিতে পারিব না, কে বলিবে আমি আর কোনদিন পাহাড় চূঁড়াতে ফুল দিতে পারিব না!

এবার শেষ করিব, সবশেষে একটা কথা বলি,
“ ভালবাসিয়া যত না আনন্দ, না ভালবাসায় সুখ যে তাহার চাইতে অনেক অনেক বেশি”

এই সত্য মাথায় লইয়া এই লিপিখানির এখানেই যবনিকাপাত করিলাম।
ইতি,
স্বপ্নবিলাসী লেখোয়াড়।

"বুকভরা মোর কান্না দিয়ে দিলাম চিঠি লিখে" .......... এই লাইনটি লতা মুঙ্গেশকরের একটি গান থেকে লওয়া হইয়াছে।


( সাধু ও চলতি ভাষার মিশ্রণ র্বজনীয়, তেমন দেখিলে ভুল ধরাইয়া দেওয়া বাঞ্চণীয়, এই সময়ে সাধুভাষায় লেখা যথেষ্ঠ কষ্টনীয়)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:১৩
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×