somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অতনু কুমার সেন
ভালো মানুষ হিসাবে নিজেকে দাবি করি না কখনোই, চেষ্টা করছি ভালো মানুষ হতে। জানিনা কবে ভালো হতে পারব! আর আমি এমনিতে বেশ ঠাণ্ডা, কিন্তু রেগে গেলে ভয়াবহ! একটু introvert টাইপের। স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি, তার যদিও অধিকাংশই ভেঙ্গে যায়! আশার পিঠে আশা বেঁধে তবুও নির্লজ্

বুকের মধ্যে প্রচন্ড জোরে বাতাস বইসে আর তার মধ্য থেকে কে যেন আকুল হয়ে ডাকছে

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"ঠাকুরমা" এর সাথে আমার ছোটবেলার কিছু কথা...কিছু সৃতি.....:(

অমার "মা" খুব রাগী, অভিমানি এবং সুচিবায়ু টাইপের এক জন মানুষ । কাদা জলে মাছ ধরা, মাটিতে গরা গড়ী খাওয়া, অনেক সময় নিয়া গেসল করা, নতুন নতুন ফন্দি আবিস্কার করা ছিল আমার প্রিয় বিষয়। আমার মা এই বিষয় গুলা মোটেই মেনে নিতে পারত না।

আমি ঠাকুরমার সাথে আমার গ্রামের বাড়ি থাকতে পছন্দ করতাম ।করন সে আমার দুরন্ত পনা সহ্য করতে পরত খুব সহযেই, যে ক্ষমতা আমার মায়ের ছিল না । সে আমাকে খুসি করার জন্য যে কোন ধরনের ত্যাগ সিকার করতে রাজি থাকত ।ঠাকুরমা অমাকে আল্লাদ করে "রাঙ্গা ভাই" বলে ডাকত ।

কিছু ঘটনা খুব মনে পরছে আজকে .............

ছোট বেলায় কাদা পানির মধ্যে মাছ ধরতাম বাড়ির পাশের খাল থেকে ।মা সব সময়ই হুমকি দিত আজকে ওঠ, তার পর দেখ আমি তোর কি অবস্থা করি ।কিন্তু ঠাকুর মা মাছ ধরা দেখত আর অনুরোদ করে কইতো রাঙ্গা ভাই তারা তারি নাইতে যাও, আমি সবান দিয়া দিমু হানে, আর নাইলে কিন্তু তোমার মায় মাইর দিব। মাছ ধরা শেষে ঠাকুর মা অনেক যত্নের সাথে আমাকে গোছল দিয়া দিত । আমার শরীরের কাদা মাটি ধুয়ে দিত, যাতে মা না মারতে পারে ।আমার ধরা পুটি মাছ, কই মাছ ও টাকি মাছ গুলা তার কাছে অনেক মুল্যবান ছিল । যা আমার মা এর কাছে একদমি মূলহিন ঠাকুরমা এই মাছ গুলা সুন্দর করে আমার জন্য আলাদা ভাবে রান্না করত এবং সবার কাছে গর্বের সাথে বলত অমার রাঙ্গা ভা্ই অনেক মাছ ধরছে।আমি খুবই খুসি হতাম। সে আমাকে সকল বিষয়ে হেল্প করত।


বাবা ,মা চাকরি করত যশোর সাহাপুরে । আমাদের গ্রামের বাড়িতে থাকতাম শুধু আমি ,দাদু ভাই আর ঠাকুরমা এরং কাজের মানুষ । ছোট বেলায় নারকেল এবং মিষ্টি গুড় আমার প্রিয় এবং কমন খাবার ছিল। প্রতিদিন আমার চাই। কোন এক রাতে মিষ্টি শেষ হয়ে যাবার কারনে আমি কান্না কাটি করতে থাকি এবং ঠাকুরমাকে মারতে থাকি। আমার দাদু অন্ধ ছিল ঘড়ে আছে আর যুবতি কাজের মেয়ে সুমতি দিদি এবং সে ছিল অনেক ভিতু । কে যাবে এই অন্ধ কার রাতে বৃষ্টির মধ্যে মিষ্টি আনতে । অবশেষে ঠাকুরমা লেম হাতে নিয়ে ঐ সন্ধা রাতে ঘড় থেকে বের হয়ে যায় কাদা রাস্তায়। এবং কিছুক্ষন পর হাসি মুগে মিষ্টি নিয়া আসে আমার জন্য। আমি দেখলা ঠাকুরমা সম্পুর্ন বৃষ্টিতে ভিযে গেছে এবং তার হাটু পা পরর্যন্ত কাদা মাখা ।ফিরে আসার পর দাদু ঠাকুর মাকে বলল তুমি এই জ্বড় বিষ্টি এর মধ্যে না গেলেও পারতা । ঠাকুরমা দাদু ভাইকে বলেছিল , তইলে রাঙ্গা ভাই রাইতে না খাইয়া থাকতো।

অমার ঠাকুরমার প্রিয় খাবার ছিল পান। অমার পরিস্কার মনে আছে বুধ বার দিন অমাদের বাজার করার লোক হজরত আলি কে বলতো, মিয়া আমার নাতির লইগা আহই মিডা (আখের গুর) কিনবা আগে, পান কিনবা পরে । দাদু ভাই আবার ঠাকুরমাকে সার্পোট দিয়া কইত হয় মিয়া দাদুর মিডার কতা ভুইলো না কিন্তু।


তখন খুব ছোট , - ঘুড়ি বানাতে পারতাম না ঠিক মত । ঘুড়ি যে কোন যায়গায বিক্রি করত তাও যানতাম না তাই কিভাবে কিভাবে পলিথিন দিয়া একটা বানাইলাম এবং বেশ অকাশে উরত। আমি দুপুরের রোদের মধ্যে ঘুড়ি উরাইতে লাগলাম কিন্তু বদ শিবু দাদা সেই টা কাইরা নিল । কান্না করতে করতে ঠাকুরমার কাছে গিয়া নালিশ দিলাম । ঠাকুর মা সেই দুপুরের চরম রোদ এর মধ্যে হাটা সুরু করল। ঠাকুরমা হাটতে পারছিল না সোজা হয়ে, বার বার পরে যাচ্ছিল ফাটলের মধ্যে। কারন মাঠের মধ্যে চৈএ মাসের কড়া রোদ এর কারনে অনেক ফাটল ধরেছে ।তারপর ও শিবু দাদার কাছে গিয়া আমার ঘুড়ি ফেরত নিয়া আসে।শুধু আমার হাসি মুখটির জন্য.......


সব সৃতি গুলই এখন থেকে প্রায় বিশ বছরের আগের কিংবা তার বেশি ও হতে পারে । এই রকম আরো বহু ঘটনা আছে তার সাথে আমার।তখন বুজতে পারতাম না কিত্নু এখন খুব ভাল ভাবেই অনুধাবন করতে পারি ঠাকুরমা আমায় কত ভালবাসত। সে আমাকে শিখিয়েছে মানুষ কে কিভাবে ভালবাসতে হয়, কিভাবে গরীব মানুষ কে উপকার করতে হয়, সত্য বলার সাহস যোগায়।

প্রতিবারই ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার সময় ঠাকুরমা এর জন্য তার প্রিয় খাবার গুল সঙ্গে নিয়ে যাই। এবং যখন শোনে আমার নিজের ইনকামের টাকায় কেনা সে খুশিতে অশ্রু সিক্ত নয়নে আমার দিকে তাকায় ।হয়তো সে ভাবে আজ তার "রাংঙ্গা ভাই" বড় হ্ইসে সে এখন তার প্রিয় ঠাকুর মাকে কোলে করে স্নান করাতে পারে, খাওয়াতে পারে, ঠিক যেমন টি করে ছিল সে বহুদিন আগে ।এ কোন প্রতিদান নয়, এ বিরাট এক ধরনের মমতার টান যা সুধু অনুমান করা যায় ।

অমার ঠাকুর মা এর সাত মেয়ে, তিন ছেলে এবং ৩০+ নাতি, নাত্নি ছিল। সব নাতি, নাত্নি কেই সে খুব ভাল বাসত কিন্তু আমি ছিলাম তার আদরের রাঙ্গা ভাই।আমার জন্য সে অনেক কিছু ত্যাগ করছে, অনেক কথা সুনছে সবার কাছ থেকে।তার একটাই কথা রাঙ্গা ভাই এর হিসাব আলাদা । কিছু দিন আগে তার প্রিয় গলার চেইন টা আমার গলায় পরিয়ে দিয়েছিল। ঠাকুর মা আজ আর নেই । নিজ চোখের সামনে তার মিত্যু দেখেছি নিজ হাতে তার সমাধি দিয়েছি গতকাল। অনেক রাতে খুব কান্না পাচ্ছিল তাই সবার অগোচরে তার সমাধির পাশে গিয়ে কিছুক্ষন বসে ছিলাম । যদি একটি বার তাকে অমার অবচেতন মনের হ্যলোজিনেশাণের মাধ্যমে দেখতে পাই ।

বুকের মধ্যে প্রচন্ড জোরে বাতাস বইসে আর তার মধ্য থেকে কে যেন আকুল হয়ে ডাকছে "রাঙ্গা ভাই" "রাঙ্গা ভাই" বলে।



সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৯
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×