সকাল থেকেই টুনির প্রচন্ড মন খারাপ। মা মেরেছে। মা যখন মারেন অমানুষের মত মারেন। মা টুনিকে মেরেছেন কারন টুনির ব্যাগে একটা প্রেমপত্র পাওয়া গেছে। নিচের তলার ভাড়াটের ছেলে মজনু টুনিকে প্রেমপত্রটা দিয়েছে। টুনি কি করবে বুঝতে না পেরে ব্যাগে ভরে ফেলেছে। মজনুকে টুনি প্রচন্ড ভয় পায়। মজনুর ভয়ে টুনি ছাদেও যেতে পারে না। একবার টুনিকে ছাদে একা পেয়ে জড়িয়ে ধরবার চেষ্টা করেছিল। টুনি কাউকে বলেনি। মাকে বললে মা মেরেই ফেলবে। টুনিকে যখন মা মারেন, মার ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়, মাথায় পানি ঢালতে হয়। মা আগে মোটেও এরকম ছিলেন না। বাবা মারা যাবার পর থেকেই মা কিরকম যেন হয়ে গেছেন। আগে বাবা প্রতি পূর্ণিমার রাতে ছাদে চলে যেতেন। ছাদে মাদুর বিছানো হত। আর মা দরাজ গলায় গাইতেন “চাদের হাসি বাধ ভেঙ্গেছে’’।
আহ! কি চমৎকার দিন ছিল।
বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। টুনির মন কিছুতেই ভালো হচ্ছে না। মন খারাপ কাটানোর অনেক গুলো উপায় টুনির জানা আছে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে গুনগুন করে খুব প্রিয় কোনো গান গাওয়া। টুনির গানের গলা বেশ ভালো। স্কুলে বেশ কয়েকটা প্রোগ্রামে টুনি গান গেয়েছে। স্কুলের রেহানা ম্যাডাম সবসময় বলেন, আরে এই মেয়ে তো একদিন ভূবন জয় করবে। আজ গান গেয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। পাশের বাসায় জোরে জোরে আতিফ আসলামের গান বাজছে ‘ ছোড় দি খুদায়ী ম্যায়নে তেরে লিয়ে’।
উফ অসহ্য।
মন খারাপ কাটানোর আর একটা উপায় হচ্ছে বৃষ্টিতে ভেজা। টুনি ছাদে গেল। বৃষ্টির ফোটাগুলো কি বড় বড়। টুনি বৃষ্টিতে ভিজছে।
আহ! কি শান্তি।
সকাল থেকে মজনুরও মেজাজ খুব খারাপ। সারা রাত জুয়া খেলে প্রচুর টাকা হেরেছে। মেজাজ ভালো করতে হলে গাঁজায় টান দিতে হবে। মজনু ইয়াবা, ডাইল আরও অনেক হাবিজাবি খেয়ে দেখেছে কিন্তু গাঁজার ওপর কিছু নাই। কিন্তু কোথায় গিয়ে খাওয়া যায়। ছাদে যেতে হবে। টুনিদের ছাদের কিনারে একটা টিনের চালামতন আছে। ওখানে গিয়ে ঠান্ডা মাথায় গাঁজায় টান দিতে হবে। বৃষ্টিটা এসে ভালই হয়েছে। কেউ আর বিরক্ত করতে ছাদে যাবে না। সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে মজনুর টুনির কথা মনে পড়ল। মাত্র ক্লাশ এইটে পড়ে, এরই মধ্যে মেয়েটা একটা ডবকা মাল হয়ে উঠেছে। শালীকে একদিন হাতের নাগালে পেলে হয়, নদীমে কিতনা খাল আর মিরচা মে কিতনা ঝাল বুঝিয়ে ছাড়ব। কিন্তু এসব ব্যাপারে মজনু ধৈর্য্য ধরতে জানে। সুযোগ আসবেই।
টুনি এখনো ভিজে চলেছে। প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছে। টুনি থরথর করে কাঁপছে। বাসায় যেতে হবে। টুনি এমন সময় ছাদের দরজায় মজনুকে দেখতে পেল।
বৃষ্টি থেমে গেছে। কিন্তু আতিফ আসলাম এখনো গেয়ে চলেছে “তেরে লিয়ে.........