ভোটের বছর ফের চাল আমদানি

পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও হঠাৎ করে বেড়েছে চাল আমদানি। ভোটের আগে চালের বাজারে যে কোনো অস্থিরতা এড়াতেই সরকারের এই পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2013, 05:20 PM
Updated : 13 Oct 2013, 06:21 PM

চাল আমদানির ঋণপত্রের (এলসি) হিসাব নিয়ে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) গত বছরের একই সময়ের চেয়ে চাল আমদানির জন্য এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ৩৫৩ শতাংশ। এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ৩২৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার আমদানি সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে চাল আমদানির জন্য ৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে।

গত বছরের একই সময়ে খোলা হয়েছিল ৮৫ লাখ ৫০ হাজার ডলারের এলসি।

এ সময়ে আমদানি নিষ্পত্তি হয়েছে ২ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার ডলারের। গত বছরের একই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছিল ৬২ লাখ ৬০ হাজার ডলারের এলসি।

আমদানি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৮০ হাজার ডলারের চাল।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক কৃষি অর্থনীতিবিদ এম আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাম্পার ফলনের কারণে গত কয়েক বছর ধরে চাল আমদানি হয়নি বলেই চলে। দেশে পর্যাপ্ত চাল মজুদ থাকায় সুগন্ধি ছাড়া অন্য কোনো আমদানির প্রয়োজনও পড়েনি।

“কিন্তু কিছু দিন আগে চালের দাম বাড়তে শুরু করায় সরকার বিচলিত হয়ে পড়ে। নির্বাচনের সময় চালের দাম বাড়লে ভোটে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে- তেমন ভাবনা থেকে সরকার বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি উৎসাহিত করছে।”

সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবার আমনের ফলন ভালো হবে না আভাস দিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, “চাল যাতে নির্বাচনে কোনো ইস্যু না হয়- সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই সরকার চাল আমদানি করছে। সরকারের গুদামগুলোতে চাল রাখার জায়গা না থাকলেও ভোটের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এ পথ বেছে নিয়েছে সরকার।”

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশের খাদ্যগুদামগুলোতে বর্তমানে ১৫ লাখ টনের মতো খাদ্য মজুদ (চাল ও গম) আছে।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন,আন্তর্জাতিক বাজারে রুপির দাম পড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় কম বলে তারা ভারত থেকে চাল আনতে উৎসাহী হয়েছেন।  

দেশের বৃহত্তম পাইকারি চালের আড়ত বাবুবাজার ও বাদামতলী চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডলারের বিপরীতে রুপির দাম কমায় চাল আমদানিতে খরচ কম পড়ছে। সে কারণে লাভের আশায় দীর্ঘদিন পর ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে চাল আমদানি করছে।”

তিনি বলেন, দেশে বাম্পার ফলন হওয়ায় গত প্রায় পাঁচ বছর কোনো চাল আমদানি হয়নি।

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রোববার প্রতি ডলার ৬১ দশমিক ১৬ রুপিতে লেনদেন হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে এক ডলারের বিপরীতে পাওয়া যেত ৫৩ রুপির মতো।

অথচ বাংলাদেশে গত পাঁচ মাস ধরে ডলার-টাকার বিমিয়য় হার একই জায়গায় স্থির রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে রোববার প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ৭৭ টাকা ৭৫ পয়সা। পাঁচ মাস আগেও একই দরে ডলার লেনদেন হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর‌্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে গম আমদানির এলসি বেড়েছে ২১৯ শতাংশ। নিষ্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ৮৫ শতাংশ।

পেঁয়াজ আমদানির এলসি বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। জ্বালানি তেলের এলসি বেড়েছে ৯০ শতাংশ। মূলধনী যন্ত্রপাতির (ক্যাপিটাল মেশিনারি) এলসি বেড়েছে ২৩ শতাংশ।

সামগ্রিকভাবে জুলাই-অগাস্ট সময়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানির জন্য মোট ৬৪৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি।

এ সময়ে ৫৭৪ কোটি ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৭ শতাংশ বেশি।