somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ-উল-আযহা । ত্যাগের আনন্দ। কিন্তু এখন???

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সবাই তো তাহলে দা, বটি, ছুরি, চাকু ধার দিয়া রেডি, নাকি??
সকাল হইব, ঈদ এর নামায পইড়া আইসাই বিসমিল্লাহ্‌ বইলা কুরবান কইরা দিবো গরু কিংবা খাসী (অথবা অন্য কোন প্রাণী)। সকালেই দেখা যাবে ছুরি-চাপাতি হাতে কোরবানিবাজ সুপুরুষের মত ছবিতে ভইরা গেছে ফেবু। অনেকেই আবার দেখা যাইব খুব মনোযোগ দিয়া মাংস কাট্টাছে, ভাবখানা হইব "কত কষ্টই না করলাম!" অনেকেই ইতিমধ্যে হবু কোরবানির প্রাণীটার ছবি দিয়া দিছেন অথবা কেউ কালকে কাঁটার আগে বা পরে দিবেন বইলা ভাবতেছেন।

আমার সকল ভার্চুয়াল ভাইবোনরে কই, কোরবানির মানে জানেন তো? মাফ করবেন আপনাদের লাইগা বুদ্ধিমান প্রাণী আমি না। তারপরেও ছোটো মুখে কিছু বড়কথা কইবার লাগছি। ঈদ মানে আনন্দ, আর কোরবানি মানে ত্যাগ। ঈদ-উল-আযহা হচ্ছে ত্যাগ এর আনন্দ। যারা মনে করেন ঈদ এর দুই রাক'আত নামায পইড়া আর আস্ত একটা প্রাণী জবাই কইরা মজা নেওয়াই কুরবানি ঈদ, আমি কড়া কথায় তাদের সাথে দ্বিমত করলাম। কোরবানি ঈদ এর উদ্দেশ্য জবাই করা বা মাংস খাওয়া না। **কোরবানি ঈদ-এর শিক্ষা হচ্ছে ধর্ম বা আদর্শ বা নীতির জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করার মানসিকতা।** অনেকেই 'ধর্ম' কথাটার সাথে সাম্প্রদায়িক চেতনাকে গুলায় ফেলবেন। কিন্তু মূলত ধর্ম মানবতার প্রতিরূপ। কিছু বিচ্ছিন্ন বিকৃত চিন্তার মানুষের জন্য ধর্মের বদনাম হয়। সব ধর্মই মানবতা শেখায় বা বলা যায় বিপন্ন মানবতাকে রক্ষা করার জন্যই ধর্মের আবির্ভাব হয়। (ধর্ম বিষয়ক কথা আবার অন্য দিন হবে।)

কোরবানি সবাই করবেন, কিন্তু এর মধ্যে দিয়ে যে ইবাদাত করার কথা সেটা কতটা পালন করবেন। একটা অবলা প্রাণীকে জবাই করে যারা আনন্দ করবেন তাদের আর যাই হোক অন্তত ইবাদাত হবে না। বরঞ্চ যারা এই প্রাণীগুলোর জন্য কষ্ট পাবে তাদেরই ইবাদাত হবে। একবার ভাবেন যে প্রাণীটা আপনি কোরবানি দিচ্ছেন সেটাকে যদি ছোটো থেকে যত্ন করে বড় করে তুলতেন?? ঠিক আপনি যেমন করে বাবা-মা'র কাছে বড় হয়ে উঠেছেন সেভাবেই যদি এই প্রাণীটিকে আপনি বড় করে তুলতেন??... পারতেন এত সহজে তার গলায় ছুরি চালাতে? পারতেন মজা করে তার মাংস খেতে??... ঠিক এই অনুভূতিটাই কোরবানি।

বলেন তো, ঈদের দিন চাপাতি হাতে নিজের সন্ত্রাসী মার্কা ছবি দিয়া কেউ কি বুঝাইতে চায়?? সে সুপুরুষ হইয়া গেছে এইডা??... নাকি যে কোনো সময় কল্লা কাটতে প্রস্তুত এইডা? আপনি হয়তো নিজের কোরবানি করা প্রাণীর ছবি, মাংস কাঁটার ছবি ইত্যাদি দিয়ে অনেক আনন্দ পাবেন কিন্তু সারা অনলাইন জুড়ে অগণিত এমন ছবি বলবে কত গুলো প্রাণ আজ চলে গেলো!! হয়তো পশু বলে অনেকেরই এতে কিছু মনে হয় না, কিন্তু তারাও তো প্রাণী... তাদেরও জীবন আছে। এই জীবন গুলো আর আসবে না এই কথাটা ঘুরে ফিরে বার বার মনে পড়বে। এই রক্ত-মাংস, বাকহীন দৃষ্টি অনেককেই কষ্ট দেয়। তাই নিজের জন্য না হলেও অন্যদের কথা ভেবে এমন ভায়োলেন্ট ছবি দয়া করে দিবেন না।

কোরবানির প্রাণীর মাংস ৩ ভাগে ভাগ হয়। এক ভাগ নিজেদের জন্য, একভাগ আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, আপনজনদের জন্য, আর একভাগ দরিদ্রদের জন্য। এতে বোঝায় আপনি কষ্ট করে যা অর্জন করছেন তার উপর শুধু মাত্র আপনার না, এর এক ভাগে আপনার আপনজনদের অধিকার আছে আরেক ভাগে আছে দরিদ্রদের অধিকার এবং বাকিতুকুতে আছে আপনার অধিকার। **জবাই করে রক্তপাত করা কোরবানির উদ্দেশ্য না। কোরবানির মাধ্যমে মানুষকে ত্যাগের শিক্ষা দেওয়া হয়, তার অর্জনের উপর বাকিদের যে অধিকার আছে এটা মনে করানো হয়। অবশ্যই শ্রেণী বৈষম্য ভেদ করে সবাইকে আপন করে নেওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়, সর্বোপরি কর্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধাবান, নীতি-আদর্শে দৃঢ় অবস্থানের শিক্ষা দেওয়া হয়।**

আমরা অবশ্যই আনন্দ করবো, কিন্তু সেই আনন্দ হবে নিজে ত্যাগ করে অন্যের মুখে হাসি ফুটানোর আনন্দ।

সবাই কে ঈদ-উল-আযহার অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×