নামাজের পর দিন গড়াতে গরু-ছাগল কাটা শেষে মাংস রান্না ও বিলি-বণ্টনের মধ্য দিয়ে সারাদেশে মুসলমানরা ঈদুল আজহার উৎসব করছেন।
Published : 16 Oct 2013, 08:54 AM
প্রতিবারের মতো বুধবারও দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। আর রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত হয় সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে।
এতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী।
রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য ও বিচারপতিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষ হয় বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও বিশ্ব শান্তি কামনায় মোনাজাতের মধ্য দিয়ে।
এছাড়া বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৭টা থেকে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদ জামাত হয়।
ঈদের নামাজের পরপরই দেশজুড়ে শুরু হয় পশু কোরবানি। রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতে গরু-ছাগল কাটা হয়। বিতরণ করা হয় দরিদ্রদের মধ্যে। চলে আত্মীয়দের মাঝে বিতরণ। এরপর শুরু হয় রান্না।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের সুখ ও সমৃদ্ধিও কামনা করেছেন তারা।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, “একটি শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল সমাজ বিনির্মাণে ধৈর্য্য ও সহনশীলতা অপরিহার্য। পবিত্র ঈদুল আজহার মহান আদর্শ ও শিক্ষাকে আমাদের চিন্তা ও কর্মে প্রতিফলিত করতে হবে।”
ত্যাগের এই ঈদ মুসলিম জাতির ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ আরো সংহত করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, “প্রিয় বস্তুকে মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি লাভের যে অনুপম দৃষ্টান্ত হযরত ইব্রাহীম (আ.) স্থাপন করে গেছেন, তা বিশ্ববাসীর জন্য চিরকালই অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।”
ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন এক সুখী-সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “স্বার্থপরতা পরিহার করে মানবতার কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করাই কোরবানির প্রধান শিক্ষা।”
তবে দেশের বর্তমান অবস্থায় সবার পক্ষে ঈদের আনন্দ যথাযথভাবে উপভোগ করা সম্ভব হবে না বলেও মনে করেন বিএনপি প্রধান।
রাষ্ট্রপতি সকালে বঙ্গভবনে কূটনৈতিক কোরের ডিন ও বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
সকাল ৯টায় গণভবনের লনে দলীয় নেতা-কর্মী, পেশাজীবী, গণ্যমান্য ব্যক্তি, কূটনীতিক, বিচারক ও সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে বেলা ১১টায় তিনি কূটনীতিক ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
রোজার ঈদের মতো এবারো ঈদের দিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
বেলা সাড়ে ১১ টায় কূটনীতিক এবং বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বিশিষ্ট নাগরিকসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানসহ রাজধানীজুড়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ।
ঈদ উপলক্ষে বুধবার সরকারি ও বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ইতোমধ্যে সাজানো হয়েছে মনোরম সাজে। রাতে থাকছে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা।
সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে।
সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সব শিশু পার্কে ঈদে বিনা টিকিটে প্রবেশ করতে পারবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। এছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিনা টিকিটে ঢাকা জাদুঘর দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষ সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন চ্যালেনগুলো কয়েকদিন ধরে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠান। সংবাদপত্রগুলোও এ উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে।