আলোচনার মাধ্যমে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
Published : 16 Oct 2013, 02:47 PM
বুধবার দুপুরে কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খালেদা বলেন, “আমরা দেশে কোনো সংঘাত ও অশান্তি চাই না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সরকারকে বলব- আসুন এখনো সময় আছে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দেশে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করি।”
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিরোধী দলীয় নেতা।
আগামী ২৫ অক্টোবরের জনসভা নিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “জনসভার তারিখ আমরা আগেই ঘোষণা করেছি। দেশটা সরকারের একার নয়। ২৫ অক্টোবরের জনসভা করতে দিতে হবে।”
বিএনপি প্রধান বলেন, সরকার ‘গায়ের জোরে’ একতরফা নির্বাচন করলে কেন্দ্রভিত্তিক ‘সংগ্রাম কমিটি গঠন’ করে তা প্রতিহত করা হবে।
তিনি বলেন, “মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। আমরা স্পষ্টভাষায় বলেছি- আমরা দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সেই নির্বাচন এই সরকারের অধীনে হবে না। কেবল নির্দলীয় সরকারই দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারবে।’’
বর্তমান সরকারের আমলে উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, “অতীত কর্মকাণ্ড থেকে বুঝা যায়, জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু হবে না। কিন্তু সরকার জবরদস্তিভাবে একতরফা নির্বাচনের ব্যবস্থা করছে, যা দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে। কারণ দেশের মানুষ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নেবে না।’’
সরকার কেবল সংবিধানের দোহাই দেয়- মন্তব্য করে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, “সরকার সংবিধানের কথা বললে আমি প্রশ্ন কবর, ১৯৯৫-৯৬ সালে কেনো আপনারা সংবিধান মানেননি। তখন কেনো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য এতো হরতাল-আন্দোলন-জ্বালাও-পোড়াও করেছেন।’’
সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য নিজেদের ইচ্ছামত সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা তুলে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
২৪ অক্টোবরের পর সংসদ অধিবেশন চলার বিষয়ে খালেদা জিয় বলেন, “সরকার একেকবার একেক কথা বলে। তাদের বিশ্বাস করা যায় না। এতোদিন বলেছে, সংসদ ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এরপর নির্বাচনের জন্য স্থগিত থাকবে।
“এখন বলছে, সংসদ অধিবেশন আরো চলবে। তাহলে একটি সংসদ বহাল রেখে আরেকটি সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে। একজন সিটিং এমপি থাকতে কিভাবে আরেক এমপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এটা হতে পারে না।’’
খালেদা জিয়া বলেন, “প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনের সব সুযোগ নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা বিরোধী দল কোনো সুবিধা পাচ্ছি না। আমি বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে কোথাও গেলে ডিসি সাহেবও দেখা করতে আসেন না। তাহলে নির্বাচনে সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি অর্থাৎ লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে কিভাবে।’’
নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে মানুষের মুখে ঈদের আনন্দ নেই বলে মনে করেন বিরোধী দলীয় নেতা।
তিনি বলেন, “দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় অবস্থা। অনেকে অর্থনৈতিক কারণে কোরবানি দিতে পারেনি।
আগামীতে ক্ষমতায় গেলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি নির্মূল, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, ঐক্যের রাজনীতি প্রবর্তনের উদ্যোগ নেবেন বলে জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
বক্তব্যের শুরুতে দেশবাসী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে কূটনীতিক কোরের ভারপ্রাপ্ত ডীন মোহাম্মদ কায়েফ, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ড. আবদুল্লাহ বিন নাসের আল বুশাইরী, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জন ডেনি লুইসসহ ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও তাদের প্রতিনিধিসহ ৪২টি দেশের কূটনীতিকরা বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় সাবেক কূটনীতিক রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ বিএনপি প্রধানের সঙ্গে ছিলেন।
রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির মুস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ খালেদার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক, অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ, মুনিরুজ্জামান মিঞা, জিন্নাতুন নেসা তাহমিনা বেগম, আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, সদরুল আমিন, আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, সুকোমল বড়ুয়া বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, দিনকালের সম্পাদক রেদোয়ান সিদ্দিকী, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, কবি আবু সালেহ, মাহমুদ শফিক, আবদুল হাই শিকদার, গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, অভিনেতা আহমেদ শরীফ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া মাহবুবুর রহমান, আনিসুল হক, মীর নাসির হোসেন, সালাম মোর্শেদীসহ একদল ব্যবসায়ী নেতাও আসেন ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে।
অনুষ্ঠানে মঞ্চে বিরোধী দলীয় নেতার পাশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, জমির উদ্দিন সরকার, আ স ম হান্নান শাহ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঈদের শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে বিএনপির সেলিমা রহমান, আবদুস সালাম, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাইফুল আলম নিরব, মীর সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, নিলোফার চৌধুরী মনি, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশীদ হাবিবসহ সাংসদ, কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অপর্ণ করেন খালেদা জিয়া। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।