somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে সংবিধান বাক-স্বাধীনতার অধিকার দিয়েও, বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র কিংবা এই সংবিধানের কোন বিধান সম্পর্কে নাগরিকের মনে অনাস্থা সৃষ্টি করলে তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রদ্রোহিতার এই অপরাধের কথা বর্ণিত রয়েছে। এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড। সংবিধান একদিকে নাগরিকের বাক-স্বাধীনতার অধিকার দিয়েছে অন্যদিকে এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সংবিধানের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। যে কথা বলা বা সমালোচনার মাধ্যমে সংবিধানের কোন বিধান সম্পর্কে নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত হতে পারে। আইন বিশেষজ্ঞরা এ সংক্রান্ত ৭(ক) অনুচ্ছেদকে বিপজ্জনক ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থি বলে অভিহিত করেছেন। তারা বলেছেন, মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্য আইন আপনা-আপনি বাতিল বলে গণ্য হবে।

জাতীয় সংসদে ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন-২০১১ পাস হয়। বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে বিলটি পাসের পক্ষে ২৯১ ও বিপক্ষে মাত্র একটি ভোট পড়ে। ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে রাখার ঘোরতর বিরোধী জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টিও বিলটি পাসে ভোট দেয়। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত, বিতর্কিত এবং বিপজ্জনক সংশোধনী হচ্ছে ৭(খ) অনুচ্ছেদ।

সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ ইত্যাদি অপরাধের বর্ণনা রয়েছে ৭(১) অনুচ্ছেদের (ক) উপ-অনুচ্ছেদে। এতে বলা হয়েছে, এই সংবিধান বা ইহার কোন অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে; তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে। এই অনুচ্ছেদে মূলত অবৈধ ক্ষমতা দখলের অপরাধের বর্ণনা রয়েছে। প্রচলিত আইনে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধের বর্ণনা ও শাস্তির কথা উল্লেখ থাকলেও পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটি এখন সংবিধানের অংশ করা হয়েছে। বাংলাদেশে অবৈধ ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের একটি বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করাকে ইতিবাচক বলে অভিহিত করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। তবে তারা বলেছেন, এ ধরনের একটি অনুচ্ছেদ ১৯৭৩ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বে প্রণীত পাকিস্তানের সংবিধানেও ছিলো। কিন্তু এই বিধান পরবর্তীতে জেনারেল জিয়াউল হক ও জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সামরিক অভ্যুত্থান ঠেকাতে পারেনি। এই বিধান বুটের তলায় রেখে ভুট্টোকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিলো।

এদিকে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা ৭(১) অনুচ্ছেদের (খ) উপ-অনুচ্ছেদের নিন্দা করেছেন। তারা এই উপ-অনুচ্ছেদকে মৌলিক অধিকার ও বাক স্বাধীনতার পরিপন্থি বলে অভিহিত করেছেন। প্রসঙ্গত সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক-স্বাধীনতাকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, (১) "চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল। " (২) "রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচণা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে"

(ক) " প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের" এবং (খ) "সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।" সংবিধানের বাক-স্বাধীনতার এই নিশ্চয়তাকে অস্বীকার করেছে ৭(১) অনুচ্ছেদের (খ) উপ-অনুচ্ছেদ। এতে বলা হয়েছে, "এই সংবিধান বা ইহার কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে। " এ প্রসঙ্গে ৭(১) অনুচ্ছেদের (৩) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, " এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২৪(ক) ধারায় এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থ দণ্ডের বিধান রয়েছে।

বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি ৭ (১) অনুচ্ছেদের (খ) উপ-অনুচ্ছেদকে একটি বিপজ্জনক অনুচ্ছেদ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আদর্শিক কারণে কোন ব্যক্তি বা দল এই সংবিধানের কোন বিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে। যেমন ইসলামকে সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ভুল হোক শুদ্ধ হোক অনেকেই মনে করেন রাষ্ট্রের কোন ধর্ম হতে পারে না। এর বিরুদ্ধে মাঠে-ময়দানে অনেকেই বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন। কেউ কেউ সংবাদপত্রে লেখনীর মাধ্যমে বা টক শোর মাধ্যমে এর কঠোর সমালোচনা করছেন। তেমনিভাবে ধর্ম নিরপেক্ষতা বা সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রের মূল নীতি অন্তর্ভুক্ত করার বিরুদ্ধেও অনেকের অবস্থান রয়েছে। এখন যদি তাদের এই অবস্থানের কারণে বা বক্তৃতা-বিবৃতির কারণে সংবিধানের কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত হয় তাহলে তারা বা ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে অপরাধী হবেন। তিনি বলেন, কোন আধুনিক বা সভ্য দেশের সংবিধানে এ ধরনের বিধান থাকতে পারে না। এখন হয়ত রাষ্ট্র বিধানটি প্রয়োগ করছে না কিন্তু ভবিষ্যতে এর ব্যবহার হবে না তা কি বলা যায়?

ওই সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানের ২৬(১) অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে "এই ভাগের বিধানাবলীর (মৌলিক অধিকারের অধ্যায়) সহিত অসামঞ্জস্য সকল প্রচলিত আইন যতখানি অসাঞ্জস্যপূর্ণ, এই সংবিধান-প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে। " (২) "রাষ্ট্র এই ভাগের কোন বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য কোন আইন প্রণয়ন করিবেন না এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের কোন বিধানের সহিত যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে।" এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৭(১) অনুচ্ছেদের (খ) উপ-অনুচ্ছেদ মৌলিক অধিকার পরিপন্থি একটি বিধান। সংবিধানের ব্যাখ্য বা কোন কিছু গ্রহণের ক্ষেত্রে আগের অনুচ্ছেদের চেয়ে পরের অনুচ্ছেদ গুরুত্ব পায়। সেক্ষেত্রে ৭(১) অনুচ্ছেদের (খ) উপ-অনুচ্ছেদে যাই থাকুক না কেন ২৬(১) অনুচ্ছেদ এবং চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক-স্বাধীনতা সংক্রান্ত ৩৯ অনুচ্ছেদ গুরুত্ব পাবে। এছাড়া এই দুই অনুচ্ছেদের সঙ্গে ৭(১) অনুচ্ছেদের (খ) উপ-অনুচ্ছেদ সাংঘর্ষিক।
সুত্র
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:০৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×