somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরল প্রশ্নঃ জটিল সমাধান কিংবা জটিল প্রশ্নঃসরল সমাধান।

৩১ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আমার মেইন নিক আলতামাশ থেকে সামুতে লগ ইন করতে দেওয়া হচ্ছে না, তাই এক বন্ধুর নিক ধার করে এই পোস্ট দিলাম)

হেফাজতে ইসলাম কি সরকার উৎখাত কিংবা অন্য কোন ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য নিয়ে ঢাকায় এসেছিল?
প্রশ্নটা এক দৃষ্টিতে দেখলে খুবই সরল আবার অন্য দৃষ্টিতে দেখলে খুবই জটিল। প্রশ্নটার উত্তরও সেই রকম।

প্রথম পয়েন্ট,
(ক)অবরোধ উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, বিভাগ পর্যায়ে মহাসমাবেশ হয়েছিল।
(খ)সেই সব মহাসমাবেশে বক্তারা উপস্থিত সবার কাছ থেকে শপথ নিয়েছিলেন, সবাই অবরোধস্থলে দাবী আদায় হওয়া কিংবা শহীদ হওয়া পর্যন্ত অবস্থান নিবেন।
(গ)শপথ অনুযায়ি মাদ্রাসার ছাত্র-আলেম এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমান সবাই মানসিক এবং সব রকমের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন অবরোধস্থলে স্থায়ী অবস্থানের।

এখন প্রশ্ন, স্থায়ী অবস্থানে হেফাজতের কর্মীদের এত আগ্রহের কারণ কি?
এটাকে ঠিক কারণ বলা যায় না। বরং তারা বাধ্যই হয়েছিলেন এই রকম কঠিন অবস্থানে যেতে। আর আওয়ামী লীগই এর জন্য সম্পূর্ণরুপে দায়ী।

কারণ,
(ক)৬ই এপ্রিল মহাসমাবেশ শেষে শান্তিপূর্ণভাবে স্থান ত্যাগ করার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মখা আলমগির হেফাজতে ইসলামকে ধন্যবাদ জানায় এবং সে সহ লীগের আরও কয়েক উচ্ছপদস্থ নেতা হেফাজতের দাবিগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে এমন আশ্বাস দেয়। তখন অনেকেই আশা করেন, লীগের নেতাদের বোধহয় শুভবুদ্ধির উদয় হবে, তারা দাবিগুলো মেনে নিবে। আর দাবিগুলো মেনে নিলে আওয়ামী লীগের সাথে তাদের যে বৈরীপূর্ণ অবস্থান ফতোয়া বিরোধী রায়ের পর থেকে চলে আসছে, সেটাও কেটে যাবে।

(খ)কিন্তু কিছু দিন না যেতেই কয়েক জন মন্ত্রী বলে, হেফাজতের তের দফার কোনটাই মানা হবে না এবং দাবিগুলো নাকি অযৌক্তিক। মনে রাখতে হবে, এই তের দফার মধ্যে রয়েছে, সংবিধানের মূলনীতিতে আল্লাহর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুর্নবহাল এবং ইসলামকে নিয়ে কুটুক্তিকারীদের কঠোর শাস্তি বিধান প্রণয়নের মত তুমুল জনপ্রিয় এবং কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার মত দীর্ঘ দিনের দাবী। সাধারণ কর্মীদের মনোভাব ছিল, সরকার সবগুলো না মানুক কিন্তু এই দাবিগুলো অন্তত মেনে নিবে। কিন্তু কোন দাবী না মানার ঘোষণা দেওয়ায় প্রচণ্ডরূপে ক্ষুদ্ধ হয় হেফাজত কর্মী সহ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

(গ)আর এই ক্ষুদ্ধতার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্যই হয়ত লীগের এক বড় নেতা বলে, হেফাজত লেজ গুঁটিয়ে পালিয়েছে। তখন হেফাজতের সামনে উপায় থাকে না, ঈমান ও ইসলামের এই আন্দোলন থেকে পিছু হটার। কথার মাধ্যমে পাল্টা জবাব দেন তখন হেফাজতের নেতারা।

দ্বিতীয় পয়েন্ট

ফজরের পর থেকে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ শুরু হয় ঢাকার ছয়টি পয়েন্টে। অধিকাংশ হেফাজত কর্মী তখন পর্যন্ত জানত না, ঢাকার বুকে সমাবেশের কথা। অবরোধ শুরুর ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘোষণা আসে, সমাবেশ শুরু হবে। সবাই যেন শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে সমাবেশের দিকে আসেন।

এখানে মূল পয়েন্টটি হচ্ছে, অবরোধে যারা এসেছিলেন, তাদেরকে বলা হয়েছিল অবরোধ স্থলে স্থায়ী অবস্থানের কথা। তাহলে কেন ঢাকার বুকে এই সমাবেশ?

(ক)আল্লামা আহমেদ শফির পক্ষে সম্ভব ছিল না প্রতিটি অবরোধ স্থলে গিয়ে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া। তাই এই একত্রিত করন।

আল্লামা আহমেদ শফির সমাবেশে না আসার কারণ সম্পর্কে লালবাগ মাদ্রাসার ছাত্রদের সূত্রে যতটুকু জানা যায় তা হল, আল্লামা আহমেদ শফি সাহেব লালবাগ মাদ্রাসা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে গোয়েন্দা বাহিনীর লোকেরা তাকে ঘিরে ফেলে। এই অবস্থায় তাকে গুম করা হতে পারে এমন আশঙ্কায় তাকে মাদ্রাসায় ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান হেফাজতের নেতারা।

(খ)হেফাজত ইসলাম অবরোধস্থল থেকে অবস্থান ওঠিয়ে নিয়ে ঢাকার ভিতর অবস্থান নিতে চাওয়ার আরেকটি কারণ এই হতে পারে যে, সরকারকে বুঝানো যে হেফাজতের কর্মীরা লেজ গুঁটিয়ে পালায় না। তারা দাবী আদায় করার জন্যই ঢাকায় এসেছে।

এটা ছিল একটি চরম ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ, ঢাকার বুকে সমাবেশে সরকারকে যেমন বিপর্যস্ত অবস্থায় ফেলা যাবে আশা করা হয়েছিল, ছয়টি পয়েন্টে অবস্থান নিলে আরও বেশী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ত সরকার।
সরকারের পক্ষে অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ছিল এতো বিরাট এলাকা জুড়ে আক্রমণ করা এবং আক্রমণ করলেও হেফাজতের নেতা-কর্মীদের জন্য আত্নরক্ষার অসংখ্য জায়গা ছিল।

(গ)হেফাজতের কিছু নেতা আঠার দলীয় জোটের সদস্য। এই হিসাবে একটি তত্ব খুবই প্রতিষ্ঠিত করা গেছে যে হেফাজত সরকার উৎখাত করতে চেয়েছিল। জুনায়েদ বাবুনগরির কথা ধর্তব্য নয়। কারণ যারা জজ মিয়া নাটকটি দেখেছেন, তারা নিশ্চই স্বীকার করবেন, রিমান্ডে যা বলানো হয়, তা মঞ্চে অভিনেতার শেখান বুলি থেকে কোন অংশে কম নয়। পার্থক্য শুধু একজন জীবন বাঁচানোর জন্য বলে, আরেকজন বলে টাকার জন্য।

আর যদি জীবন দিতে প্রস্তুত লাখো মানুষের সংখ্যাধিক্য দেখে আঠার দলের সাথে যুক্ত হেফাজতের কিছু নেতা সত্যই সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করে থাকে, তাহলে সেই প্ল্যানে ভুল ছিল। কারণ তাদের মূল অস্ত্র, জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হেফাজত কর্মীরা। আর শেখ হাসিনা চাইলেই মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এই সব কর্মীদের নিস্ক্রিয় করে ফেলতে পারত। যেমনটা সে করেছে বিডিআর বিদ্রোহের সময় সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে।

তৃতীয় পয়েন্ট
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছে, হেফাজতকে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থান স্থায়ী করতে দিলে তারা সরকার উৎখাতের চেষ্টা করত।

এখন প্রশ্ন,
(ক)হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সেই দিনের যেই কথাগুলো সামনে এনে তারা এই দাবী করছেন, হেফাজতের নেতারা পূর্বেও সেই রকম কথা বলেছেন। তাহলে কেন তাদেরকে ঢাকার ভিতর ঢুকার অনুমতি দিল সরকার?
এমন না যে অবরোধস্থলে কোন রকম সহিংসতা হচ্ছিল যেগুলো থেকে বিরত রাখার জন্য এই অনুমতি।

(খ)হেফাজতে ইসলাম মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকায় নয়, বায়তুল মোকাররম এলাকায় সমাবেশ করতে চেয়েছিল। সরকার কেন তাদের মতিঝিলে সমাবেশের অনুমতি দিল?
উল্লেখ্য বিএনপি জোটের আমলে মুক্তাঙ্গনে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা কওমি সনদের স্বীকৃতির দাবীতে চারদিন অবস্থান ধর্মঘট করেছিল। সেই সময় রাতে অনেকেই বায়তুল মোকাররম মসজিদে অবস্থান করতেন।

(গ)কেন সেদিন লীগের গুণ্ডারা হাউস বিল্ডিংয়ের গাড়িতে আগুন দিল?
উল্লেখ্য যে, হেফাজতের তাণ্ডব বলে যেই সব সেদিন মিডিয়াগুলো যেই সকল ভিডিও প্রকাশ করেছে, দেখলেই বুঝা যায়, তারা কেউ মাদ্রাসার ছাত্র নয়।

(ঘ)কেন সেদিন লীগের গুণ্ডারা অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়েছিল?
অবরোধের দিন বিকেলেই কিছু হেফাজত কর্মী যারা নিজের এলাকার লোকদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন, তারা বাড়িতে যাবার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু যাওয়ার পথে রাস্তায় লীগের গুণ্ডারা তাদের মেরে ফেলবে, এই আশংকায় তারা তাদের যাওয়ার চিন্তা ত্যাগ করেন।

তৃতীয় পয়েন্টের প্রশ্নের উত্তরগুলো আপনার বিবেক দ্বারা আপনি নিজেই খোঁজে নিন।
এর পিছনে রয়েছে নির্মম রহাস্য যা চেপে গিয়েছে নিয়ন্ত্রিত/হলুদে মিডিয়া, পা চাঁটা বুদ্দিজীবিরা।
সত্য কখনই চাপা থাকে না। যতই দিন যাক, যতই চেষ্টা করা হোক।
সত্য একদিন বেড়িয়ে আসবেই
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৩ সকাল ৭:০৬
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×