somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রঙ্গমঞ্চে আমরাই নাচের পুতুল

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যেমনে নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!!!

প্রতি পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনের সময় এলেই সংঘর্ষ, উদ্বেগ - উৎকণ্ঠায় পুরো জাতি উন্মুখ হয়ে পরে। রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয় বাংলাদেশকে।

ভাগ্যবান জাতি হিসেবে আমাদের ভবিষ্যৎ সুপ্রসন্ন ! আমরা আবারও একটি রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি ফোনে কথা বলেছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। সব মিলিয়ে কথা হয় প্রায় ৩৭ মিনিট। তবে সুস্থ কোন আলোচনার চেয়ে তর্ক - বিতর্কই বলা যায় এই আলাপনকে। তবে দুজনের আলাপনে যতই পারস্পরিক দোষারোপ থাকুক না কেন দুই নেত্রী আলোচনার ওপরই জোর দিয়েছেন। বলেছেন বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার কথা।

মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন , "এই দেশটা আপনারও না, আমারও না, ১৬ কোটি মানুষের। তাদের শান্তির কথা, স্বার্থের কথা চিন্তা করেন। "

খুবই চমৎকার যৌক্তিক কথা !!!

১৯৮৮-৯০ স্বৈরাচার এরশাদের সাথে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটদ্বয়ের মাঝে বেশ কিছু সংলাপ সংঘটিত হয় যার ফলাফল আন্দোলনে এরশাদের পতন। ২০০৬ আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মরহুম আব্দুল জলিল এবং বিএনপি মহাসচিব মরহুম মান্নান ভুইয়ার মাঝে সংলাপ সংঘটিত হয় যার ফলাফলসামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত অসংবিধানিক সরকার। এখন দেখার অপেক্ষার পালা আসন্ন নৈশভোজের পর আমাদের অভিভাবকদ্বয় ১৬ কোটি মানুষের শঙ্কা দূর করে প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পারেন।

ফোনালাপ এবং নিমন্ত্রণ অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক যদি সেটা ছেলেখেলা না হয়। আয়োজনের সাথে সাথে আন্তরিকতার প্রকাশও সবার মাঝে থাকতে হবে। সর্বাগ্রে প্রয়োজন সকলের সহনশীলতা। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমরা আমাদের দেশের চেয়ে দলকে প্রাধান্য দেই বেশি। হ্যাঁ রাজনীতি করতে হলে দলের প্রাধান্য দিতেই হবে কিন্তু সেটা অবশ্যই দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে নয়। প্রতিবারই দেখা যায় এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিয়ে যে কোন সরকারের শেষ সময় এসে একটি অস্থিরতা বিরাজ করে। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তারপর রয়েছে সংবিধান পরিবর্তনের প্রচলিত ধারা। সরকার পরিবর্তন হলেই সংবিধান পরিবর্তন নিয়ে শুরু হয়ে যায় ব্যাস্ততা। কোন দল বুকে হাত দিয়ে প্রতিজ্ঞা করার জন্য সচেষ্ট নয় যে তারা আন্দোলনের নাম করে হত্যাকান্ড চালাবেনা। হ্যাঁ আন্দোলন হতেই পারে তবে যে আন্দোলন জনগণের স্বার্থে তা নিশ্চয় জনগণের জানমালের ক্ষতি করে নয়। কোন দল কি এই চিরায়িত গন্ডি থেকে বের হতে পেরেছে ? পারেনি। এই নাপারার পেছনে একমাত্র যে দেশের এই রাজনৈতিক দলগুলোকে দোষ দেয়া যাবে তাও নয় তার জন্য আমরা সাধারন জনগণ অবশ্যই জড়িত।

আসলে বর্তমান সময়ে আমাদের যে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা পারষ্পরিক বিদ্বেষ সেটার মূল কিন্তু আমরাই। কেননা যেভাবেই হোক স্থানীয় পর্যায়ের ক্ষমতা এখনও জনগণের হাতে। আর সেখান থেকেই শুরু হয় রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তিপ্রস্তর। আমরা সার্বিক ভাবে সবসময় রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের অসহনশীল এবং দুর্নীতিপরায়ন আচরণের জন্য দোষারোপ করি। কিন্তু বাস্তবে এ সমস্যার উৎপত্তি নিয়ে বা এখানে সাধারণ জনগণ হিসেবে কিভাবে আমরাই এসব তৈরী করি তার কোন আলোচনা থাকেনা। রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে আদতে আমরা দ্বায়মুক্তি নেই। যেখানে গ্রামের একজন সামান্য মেম্বার পদপ্রার্থীকে নমিনেশন পেতে হলে টাকা খরচ করতে হয়, আজও টাকার বিনিময়ে ভোট কিনে তারা জয় লাভ করে। তারপর ভোটে জয় লাভ করেই শুরু হয় অন্তত মুনাফা না হোক নির্বাচনে খরচ হয়ে যাওয়া টাকা তুলে আনার নষ্ট বানিজ্য সেখানে আরও বড় স্তরের মানুষদের দোষ দিয়ে কি লাভ ? প্রথমে দেশের এইসব জনগণ আর দলের প্রতি যাদের অন্ধ আনুগত্য তাদেরকে সচেতন হতে হবে এবং বড় স্তরের মানুষদের এইসব তৃনমূল পর্যায়ের প্রতি সচেতন হতে হবে। আর একই সাথে সচেতন হতে হবে আড়ালে পড়ে যায় রাষ্ট্রযন্ত্রের সেইসব কর্মকর্তা কর্মচারীদের সার্বিক অপরাধের প্রতি যাদের প্রতিটি রক্ত বিন্দুতে ঘুষ দুর্নীতির জীবাণু। সবসময় লোকচোক্ষের আড়ালে থেকে দুর্নীতির পাহাড় তৈরীকারী সরকারী আমলা প্রশাসকদের দিকে দৃষ্টিপাত না করে শুধুমাত্র যদি বৃহত্তর নেত্রীবৃন্দের সদিচ্ছার আশায় থাকি তাহলে সেটার স্থায়ী কোন সমাধান হওয়া আদৌ সম্ভব নয়।

যেহেতু আলাপন এবং নিমন্ত্রনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে অতএব একজন সাধারন নাগরিক হিসেবে চাইবো যেন ভবিষ্যতে আর অন্তত এই বিষয়টি নিয়ে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে কোন সংঘাত ময় পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় তার জন্য এখনই একটি সুন্দর স্থায়ী ব্যবস্থা নিয়ে দুপক্ষের মাঝে আলোচনা সাপেক্ষে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করা। যখনই যে দল ক্ষমতায় থাকুক অথবা বিরোধী দলেই থাকুক না কেন তাদের মাঝে দেশের স্বার্থ নিয়ে দন্দ, আলোচনা, সমালোচনা হতেই পারে কিন্তু একদল আরেকদলের প্রতি হানাহানি কেন সৃষ্টি করবে ? এটা কোন রাজনীতির অংশ ? কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি বা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করার আমাদের যে জাতিগত অভ্যাস রয়েছে সেটা কারো ভুলে গেলে চলবেনা। আর নির্বাচনের মাধ্যমেই যেহেতু আমরা আমাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পাই অতএব সাধারন জনতা হিসেবে চাই এই নির্বাচন ব্যাবস্থার একটি স্থায়ী সমাধান যেন এরপর আর কোন দল এই নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করতে না পারে। নির্বাচনে সকল দলের অংশ গ্রহণই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র।

অতএব বর্তমান বিরোধী দল থেকে দেয়া প্রস্তাব এবং বর্তমান মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ফোনালাপ এবং তাঁর দেয়া নিমন্ত্রনে দুপক্ষের মধ্যে একটি নির্ভরযোগ্য আলোচনার মাধ্যমে আমরা দেশের জন্য মঙ্গল জনক কিছু পাবো এটাই একটি স্বাধীন জাতির জনতা হিসেবে আমার প্রত্যাশা। এখানে অপটিমিস্টিক বা প্যাসিমিস্টিক যে যাই ভাবি না কেন একটি ভালো ফল বের হয়ে আসাটা ভীষণ জরুরী। অতএব আমি প্রার্থনা করি যেন ভালো কিছুই এই আলোচনা থেকে আমরা পাবো। আর না পেলে রঙ্গমঞ্চে আমরাই হয়ে যাবো নাচের পুতুল।



সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৪৫
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহর সাহায্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪০



দুই মেয়ের পরীক্ষা বিধায় আমার স্ত্রীকে লক্ষ্মীপুর রেখে আসতে গিয়েছিলাম। বরিশাল-মজুচৌধুরীর হাট রুটে আমার স্ত্রী যাবে না বলে বেঁকে বসলো। বাধ্য হয়ে চাঁদপুর রুটে যাত্রা ঠিক করলাম। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডয়েজ ভেলে'র প্রকাশিত এই প্রামাণ্যচিত্রটি বেশ উদ্বেগজনক

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন বাহিনী থেকে প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকান্ডে যুক্ত সৈনিকদের ইউ.এন. এর পিস কিপিং মিশনে পাঠানোর বিষয়ে ইউ.এন. এর কর্মকর্তাগণ বেশ উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে ডয়েচ ভেলে ক'দিন আগেই একটি প্রামাণ্যচিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুলের চিন্তার কাবা প্রাচ্য নাকি পাশ্চাত্য?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:০৫


কাজী নজরুলের বড় বিপত্তি তিনি, না গোঁড়া ধর্মীয় লোকের কবি আর অতিমাত্রায় বামের কবি, না হোদাই প্রগতিশীলের কবি। তিনি সরাসরি মধ্যপন্থীর। অনেককেই দেখি নজরুলের কিছু কথা উল্লেখ করে বলেন কাফের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘূর্ণিঝড় রিমাল সর্তকতা।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩

প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর ব্লগারদের কাছে যদি স্থানীয় ঝড়ের অবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×